শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ব্যবহার | ডা আবিদা সুলতানা | Use of antidepressants to protect the mental health of children and adolescents | Dr Abida Sultana
শিশু কিশোরদের হতাশা ও উদ্বেগ নিরাময়ে কার্যকরী উপায় হিসেবে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। যদিও এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারে খুব কমই গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবুও শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের বেলায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহারে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন গবেষকরা। ২৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করে বলে সতর্ক করেছে ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।
যদিও আত্মহত্যার প্রবণতার কথা শুনে উদ্বেগ বাড়তে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ বিষয়ে বিকল্প চিকিৎসা সম্পর্কে জানাও জরুরি। কারণ আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। এ সম্পর্কিত জ্ঞান আপনার সন্তানকে নিয়ে আলোচনা ও ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট নিয়ে কেন শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতার সতর্কবার্তা রয়েছে
এফডিএ জানিয়েছে, ক্লিনিকাল ট্রায়ালের বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা গেছে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টগুলো অল্প সংখ্যক শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের বেলায় আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা বা আচরণের কারণ হতে পারে। বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, সুগার পিল (প্ল্যাসিবো) গ্রহণকারীদের তুলনায় কিছু শিশু এবং কিশোর-কিশোরী যারা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে গবেষণার কাজে যাদের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে তাদের কেউই আত্মহত্যা করেনি। তবুও পর্যাপ্ত তথ্য সাপেক্ষেই ২৫ বছরের কম বয়সীদের বেলায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ব্যবহারের সঙ্গে আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা ও আচরণ বৃদ্ধির সম্পৃক্ততা পেয়েছে এফডিএ। তাই এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন সংস্থাটি। সেই সঙ্গে ওষুধের গায়ে সতর্কতা লিখে রাখার নির্দেশনাও দিয়েছে সংস্থাটি।
মানসিক স্বাস্থ্য গবেষকরা মনে করেন, এই সতর্কতাগুলোর প্রয়োজনীয়তা নেই। নতুন গবেষণা ইঙ্গিত করে, যতটা না আত্মহত্যার ঝুঁকি তার চেয়ে বেশি উপকারিতা রয়েছে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের। আর কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণ করায় শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার হার কমে যায়।
যেসব অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সম্পর্কে অবশ্যই সতর্কতা রয়েছে
এফডিএর বিশ্লেষণে মাত্র নয়টি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এফডিএ সবার জন্য সতর্কতা বাড়িয়েছে। এই ব্ল্যাক বক্স সতর্কতা হল সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা সতর্কতা যা প্রেসক্রিপশন করা যেকোনো ড্রাগ সম্পর্কে জারি করতে পারে এফডিএ।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ব্যবহার যেভাবে শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার আচরণ বাড়ায়
হতাশা বা বিষণ্নতা থেকে আত্মহত্যার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ব্যবহার ও আত্মহত্যার মধ্যে পরিষ্কার কোনো কারণ আছে কিনা তা বের করা কঠিন। তবে আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাব্য নানা কারণ থাকতে পারে। কিছু শিশুর বেলায় হয়তো অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ব্যবহার ঝুঁকির কারণ হয়ে থাকতে পারে। এসবের প্রভাব থেকে ধারণা করা হয়; হয়তো শিশুদের বিষণ্নতা আরও বাড়ছে বা তারা আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠছে।
ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি ও মানসিক স্বাস্থ্য
শিশুদের কি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ও আত্মহত্যার চিন্তার মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্র নিয়ে সতর্কতার মানে এই নয় যে তাদের বেলায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার করা অনুচিত। কিংবা এসবের ব্যবহারে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করাও সতর্কতার উদ্দেশ্য নয়। সতর্কতার উদ্দেশ্য শিশুদের মধ্যে এসবের ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধার সঠিক মাত্রা খুঁজে বের করা।
মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েই রোগীর তাণ্ডবমানসিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েই রোগীর তাণ্ডব
অনেকের বেলায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের ব্যবহার হতাশা কাটানো ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর। এসবের কোনো কার্যকর চিকিৎসা না করানো হলে আপনার সন্তান হয়তো সুস্থ স্বাভাবিক জীপনযাপনে সক্ষম নাও হতে পারে। সন্তানের বেলায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহারের আগে যা করা উচিত। সন্তানের সুস্থতার জন্য অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহারের আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা অথবা সংশ্লিষ্ট কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
যে বিষয়গুলো তালিকায় রাখা উচিত :
• সন্তানের যেকোনো সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা করা।
• সন্তানের অন্য কোনো মানসিক অসুস্থতা, যেমন মনোযোগ-ঘাটতি/হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার, পদার্থের অপব্যবহার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, বা উদ্বেগজনিত ব্যাধি বা খাওয়ার ব্যাধি আছে কিনা তা পরীক্ষা করানো।
• মানসিক অসুস্থতা বা আত্মহত্যার পারিবারিক ইতিহাস আছে কিনা বিবেচনা করা।
চিকিৎসার বিকল্প, লক্ষ্য এবং সুপারিশকৃত চিকিৎসার প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতি শনি থেকে বৃহস্পতিবার, বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। ঠিকানা - ৭৭২/১-এ, বসিলা রোড,
No comments