Header Ads

শিশুর 'গুড প্যারেন্টিংয়ের' জন্য যা যা করবেন | ডা আবিদা সুলতানা | Everything you can do for 'good parenting' of your child | Dr. Abida Sultana

শিশুর 'গুড প্যারেন্টিংয়ের' জন্য যা যা করবেন, ডা আবিদা সুলতানা, Everything you can do for good parenting of your child, Dr Abida Sultana

আমরা সবাই চাই আমাদের সন্তানদের ভালো ভাবে মানুষ করে তুলতে। সে জন্য সন্তানদের প্রয়োজন ‘গুড প্যারেন্টিং’। কিন্তু কোনটি আসলে গুড প্যারেন্টিং, আর কোনটি নয়। আমরা ‘কমন সেন্স’ থেকে যা যা করি, হয়তো তার অনেক কিছুই গুড প্যারেন্টিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।


কিন্তু সব কিছুই কি গুড প্যারেন্টিং? গুড প্যারেন্টিংয়ে কী কী থাকা উচিত


১) শিশুরা ছোটদের মতোই আচরণ করবে

শিশুদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিকশিত হতে ২০ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। এর আগে তারা নানা বিষয়ে অপরিণত বুদ্ধি-বিবেচনা নিয়ে কাজকর্ম করবে। এটাই স্বাভাবিক। রেগে গিয়ে বা ধৈর্য হারিয়ে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। বরং ভেবে-চিন্তে, ধীরে-সুস্থে এই বিষয়গুলো মোকাবেলা করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে এবং বুঝতে সাহায্য করতে হবে।


২) দোষারোপ করে নয়, মর্যাদা বজায় রেখে সীমা নির্ধারণ করুন

জীবনে চলতে গেলে যত কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুই শিশুরা আমাদের কাছ থেকে জানতে ও শিখতে চাইবে। সব কিছু তো আর একবারেই জানানো সম্ভব না, জানাতে হবে ধাপে ধাপে। এই ধাপগুলো নির্ধারণের সময় কোনোক্রমেই তাকে দোষারোপ করে বা লজ্জা দেওয়া যাবে না। এর মানে হল, ‘ছি ছি, এতটুকু মানুষ, এসব কী কথা বলো?’ এ ধরনের কথা বলা যাবে না। বরং বলতে হবে, ‘বুঝেছি, তুমি এটি জানতে চাও বা করতে চাও। অবশ্যই তুমি তা জানতে পারবে এবং করবে। কিন্তু সে জন্য তোমাকে আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে, বয়স হলে বুঝতে পারবে। তত দিন পর্যন্ত তোমার যা যা তোমার, তার ভেতরেই থেকো।’ এভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে।


৩) বেড়ে ওঠার সময়গুলো সম্পর্কে সচেতন হোন

আপনার যে শিশুটি কিছুদিন আগেও আপনাকে না দেখলে চিৎকার করে কাঁদত, এখন সে আপনার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতেও অস্থির হয় না। কখনো ভেবে দেখেছেন, এমনটা কেন হয়? এটা হয়, কারণ তাদের বেড়ে ওঠাটা ঘটে অনেক ধাপ অতিক্রম করে। এই ধাপগুলো সম্পর্কে জানুন এবং তাদের সঙ্গে সব সময় একই আচরণ না করে সময়ানুযায়ী আচরণে পরিবর্তন আনুন।


৪) আপনার শিশুর ব্যক্তিত্ব ও মেজাজ সম্পর্কে জানুন

শিশুদের বাড়তি যত্নের দরকার, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সেই বাড়তি যত্নটা সব সময়ই দরকার হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে বাড়তি কোনো মনোযোগ বা সহায়তা না দেওয়াই শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পক্ষে অনেক বেশি ভালো। তবে, কিসে তার বাড়তি যত্ন দরকার আর কোনটিতে দরকার নেই, সেটা বুঝতে তার ব্যক্তিত্ব ও মেজাজ বোঝা জরুরি। হোঁচট বা আছাড় খেয়ে তা সামলে নিতে সচেষ্ট শিশুর প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়াটা জরুরি নয়। এটি তাৎক্ষণিকভাবে অবহেলা করাই যায়। তবে সেই একই শিশু যদি বিদ্যুৎ চমকানি বা তেলাপোকা দেখে ভয় পায়, তখন সেটি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া জরুরি। এতে অবহেলা করা উচিত নয়।


৫) শিশুকে নিজের ইচ্ছামতো খেলাধুলা করার সময় দিন

শিশুদের কিছু নিয়মতান্ত্রিক খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু এর বাইরেও তাদের নিজের ইচ্ছামতো কোনো খেলা যদি তারা খেলতে চায়, সে জন্যও তাদের প্রচুর সময় দেওয়া উচিত। এটা তাদের সৃষ্টিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে।


৬) কখন নিজে বলবেন আর কখন তাকে বলতে দেবেন, সেটা জানা জরুরি

শিশুরা চায়, বড়রা তাদের কথাগুলো আগে শুনুক। আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনেন, তাহলে দেখবেন, তারা সমস্যা না করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য নিজেরাই সমাধানই দিচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, শিশুরাও তাদের সমস্যা নিয়ে ভাবে, সমাধান খোঁজে। কিন্তু সেটা করার জন্য বড়দের কাছ থেকে উৎসাহ না পেলে তারা নিজ থেকে খুব বেশি আগায় না। জটিল পরিস্থিতিতে আপনাকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সরল পরিস্থিতিগুলো তাকেই সমাধান করতে দিন।

ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি  ও মানসিক স্বাস্থ্য

               ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি  ও মানসিক স্বাস্থ্য


৭) সন্তানের মা বা বাবা ছাড়াও আপনার যে আরো গুরুত্বপূর্ণ যে পরিচয় আছে তা তাকে বুঝতে দিন

যদিও এটা ঠিক যে আপনার অন্যসব পরিচয়ের চেয়ে সন্তানের মা বা বাবার পরিচয়টি আপনার কাছে অনেক বেশি আবেগময় বা সবচেয়ে পছন্দের। কিন্তু এটা বয়ে বেড়ানো তার ও আপনার উভয়ের জন্যই বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। আপনি যদি আপনার অন্য পরিচয়গুলোও তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরতে পারেন, সেটা আপনাদের উভয়ের জন্যই অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের হবে।


৮) কিছু বলার চেয়ে করে দেখানোটা শিশুর কাছে অনেক বেশি গুরুত্ববহ

আমরা শিশুদের যতটা মনোযোগী বা কল্পনাশক্তিসম্পন্ন বলে ধারণা করি, তারা তার চেয়েও বেশি ক্ষমতা রাখে। তাই আপনি কী বলছেন, তা থেকে তারা বেশি লক্ষ করে আপনি সেসব নিজে কতটা মানছেন।

শিশুর সামনে একমাত্র ‘রোল মডেল’ আপনি। তাই তার প্রাথমিক ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠবে আপনার দেখানো উদাহরণগুলো থেকে, কথা শুনে নয়। শিশু আপনার সব কর্মকাণ্ড অনুসরণ করছে, এটা জানলে শুধু সে নয়, আপনিও সঠিক আচরণ করবেন এবং এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন।


৯) শিশুর আচরণ ও সহযোগিতার মনোভাব ঠিক করতে যোগাযোগ, আনন্দময় পরিবেশ ও সৃষ্টিশীলতা

ভয় দেখিয়ে, কঠোর নিয়ন্ত্রণে রেখে শিশুকে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সঠিক কাজ করিয়ে নেওয়া যায় সত্য, কিন্তু এগুলোর অসারতা বুঝতে তার খুব একটা সময় লাগে না। আর তখন সে নিজ থেকে সঠিক পথে থাকতে আর উদ্বুদ্ধ হয় না। বরং তাকে সঠিক বিষয়টি বুঝতে সময় দিলে এবং কোনো চাপ না দিলে যে শিক্ষাগুলো তার হয়, সেগুলোর ফল হয় সুদূরপ্রসারী।


১০) শিশুকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করুন

পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে আমরা এমন একটা ধারণা নিয়ে থাকি যে সঠিক প্যারেন্টিং মানেই হলো এমন এক শিশুকে বড় করে তোলা, যে শান্ত, সুবোধ ও নিয়মানুবর্তী। এগুলোর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এমন এক মানুষ হিসেবে তাকে গড়ে উঠতে সহায়তা করা, যে হবে সুখী ও স্বাস্থ্যবান। আর তা করতে গেলে ওগুলো কিন্তু মূল গুণাবলি নয়। বরং তার যে মূল গুণাবলি অর্জন করা প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে, চিন্তা-ভাবনা ও আবেগের গুরুত্ব বোঝার ক্ষমতা, সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা, সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝা ও সেগুলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দক্ষ হয়ে ওঠা। সর্বোপরি, এমন সব দক্ষতা অর্জন করা, যা তাকে ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা সারা জীবনের জন্য নিরাপত্তা দেবে এবং পথ দেখাবে।

এ উপায়গুলো খুব সহজেই অর্জন করা যাবে, তা কিন্তু নয়। তবে এগুলো করা যত কঠিনই হোক, আমাদের ভাবতে হবে, শিশুর বেড়ে ওঠার সহায়ক এসব ভূমিকা কি আমরা ঠিকঠাক রাখতে পারছি কি না।


No comments

Powered by Blogger.