Header Ads

অটিজম কেন হয়? অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি || ডা. আবিদা সুলতানা || Why does autism happen? Treatment methods for children with autism || Dr. Abida Sultana

অটিজম কেন হয়, অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি, ডা আবিদা সুলতানা Why does autism happen, Treatment methods for children with autism, Dr Abida Sultana

১. হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি)

ADHD বা এটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার শিশুদের একটি মানসিক রোগ। এই সমস্যায় আক্রান্ত বাচ্চারা অসামাজিক এবং বিশৃঙ্খল আচরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে এরা অনেক দুষ্টামি করে, জিনিসপত্র ভাংচুর করে, খেলায় নিজেই নিয়ম বানায় এবং অন্যদের তা মানতে চাপ দেয়। এমনকি এরা পড়ালেখায় অমোযোগী হয়, রুটিন মানতে চায় না, বিনা কারণে, কান্নাকাটি, রাগারাগি এবং চিৎকার চেঁচামেচি করে থাকে।


বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই এডিএইচডির নির্দিষ্ট কোন কারণ বের করতে পারেন নাই। কিন্তু ধারণা করা হয় যে মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের সক্রিয়তা কম থাকার কারণে এমনটা হতে পারে। কেননা এতে মস্তিষ্ক সঠিক সংবাদ গ্রহণ করতে পারে না এবং  যার কারণে শিশুরা ভালো-মন্দ, সঠিক-বেঠিক ইত্যাদির পার্থক্য করতে পারে না। আর যার ফলে তাদের আচার-আচরন দৃষ্টিকটু এবং অগ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। এছাড়াও অনেকক্ষেত্রে জেনেটিক, দূষণ জনিত কারণ এবং বিভিন্ন মানসিক চাপের ফলে এই এডিএইচডি রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। 


২. ডিসলেক্সিয়া  

ডিসলেক্সিয়া বাচ্চাদের পড়াশোনার জগতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মূলত এই রোগটির কারণে শিশুর পড়া-লেখা করতে সমস্যা হয়। এতে তারা বইয়ের অক্ষরগুলো এলোমেলো ভাবে নড়তে কিংবা উল্টো করে দেখে থাকে। সাধারণত আমরা যা শুনি অথবা দেখি তার একটি স্থায়ী আকার মস্তিষ্ককে থেকে যায় এবং যার ফলে আমরা তা বুঝতে কিংবা মনে রাখতে পারি। কিন্তু  ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্তদের সেই ক্ষমতা থাকে না এবং যার কারণে তারা ঠিকভাবে অক্ষরগুলো চিনতে পারে না। এমনকি অনেকসময়  তারা ক্লাস টিচারদের কথাও সেভাবে বুঝতে পারে না। আবার তাদেরকে এক সঙ্গে অনেকগুলো প্রশ্ন করা হলে, তারা বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং কিছু বুঝতে পারে না। অনেকসময় ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্তরা লাজুক, কাজকর্মে আনাড়ি, আত্মমগ্ন, এবং অমিশুক হয়ে থাকে। এছাড়াও এরা সঠিকভাবে মনের ভাবও প্রকাশ করতে কিংবা গুছিয়ে কিছু বলতে পারে না।


৩. কনডাক্ট ডিজঅর্ডার

কনডাক্ট ডিজঅর্ডার একটি আচরণগত সমস্যা। আর যা কিনা শিশু কিংবা কিশোর-কিশোরীদের মাঝে দেখা দেয়।  সাধারণত শিশুদের  ক্রমাগত বাড়তে থাকা দুরন্ত স্বভাব বা অবাধ্যতাকে কনডাক্ট ডিজঅর্ডার বলা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনার সন্তানের ভিতর যদি দীর্ঘকাল ধরে মিথ্যাচারিতা, নিয়ম না মানা, আক্রমণাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক আচরণ বাড়তে দেখা দেয়, তবে বুঝবেন সে কনডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত এবং তার সুচিকিৎসার প্রয়োজন। মূলত এই কনডাক্ট ডিজঅর্ডার রোগের আসল কারণ এখনো অজানা। তবে কিছু বিষয় যেমন- জিনগত কারণ, অতিরিক্ত কঠোরতা, প্রতিশোধপরায়ণতা, অত্যধিক আদর, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, উগ্র আচরণ প্রত্যক্ষণ, রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পরিবেশগত বিষয় ইত্যাদির কারণে এই রোগটি হতে পারে।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য    বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য

  বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন


৪. ক্লেপটোম্যানিয়া 

ক্লেপটোম্যানিয়া নামক মানসিক রোগ হলে মানুষ চুরি করতে পছন্দ করে। এই রোগে আক্রান্তরা কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই চুরি করে থাকে। সেক্ষেত্রে তারা  চুরি করতে না পারলে অনেক বেশি অস্বস্তিতে ভুগে থাকে। আবার  চুরি করতে পারলে আত্মতুষ্টিতে ভোগে। এই ক্লেপটোম্যানিয়া রোগের কোন স্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে গবেষকদের মতে, মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা কম বেশি  হলে  এই সমস্যা হতে পারে। মূলত একজন ব্যক্তির বেড়ে উঠার সময়কালের আচরণগত এবং  ধারণাগত বিবর্তনের ফলেও এমনটা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাচ্চার ক্লেপটোম্যানিয়ার প্রবণতা নিয়ে বিচলিত হয়ার কিছু নেই। কেননা আপনার সন্তানের দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখলে এবং তার সঠিক পরিচর্যা করলেই ক্লেপটোম্যানিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।


৫. অপজিশনাল ডেফিয়েন ডিজঅর্ডার (ওডিডি) 

সাধারণত কোনও বাচ্চা যদি ক্রুদ্ধ  আচরণ করে, তর্ক করে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতা প্রদর্শন করে, তাহলে তাকে অপোজিশনাল ডিফায়েন্ট ডিজঅর্ডার (ওডিডি) বলে ধরা হয়। এই ক্ষেত্রে শিশুদের মাঝে আরও যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, তা হল- সামাজিক নিয়মগুলো না মানা, মিথ্যে কথা বলা, অতিরিক্ত জেদ দেখানো, লুকিয়ে অন্যের  জিনিস নিয়ে যাওয়া, স্কুল পালানো, বড়দের না মানা ইত্যাদি। এমনকি এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চারা তার নিজের কথায় অটল থাকে এবং একগুয়ে যুক্তি দাঁড় করায়। তবে এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের যথা সময়ে সুচিকিৎসার আওতায় আনা হলে, তারা সুস্থ- স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।


৬. শর্ট টার্ম মেমোরি লস

মানুষের ভুলে যাওয়ার প্রবণতাকে শর্ট টার্ম মেমোরি লস বা স্মৃতিভ্রম বলে। এক্ষেত্রে এতে আক্রান্ত শিশুরা সাময়িক সময়ের জন্য কোন তথ্য ভুলে যায় এবং অনেক চেষ্টা করেও তা মনে করতে পারেনা। মূলত আমাদের মস্তিষ্ক অনেকগুলো নিউরন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে স্মৃতি মনে রাখাও একটি প্রক্রিয়া। তাই, এই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার কোন কাজে যদি সাময়িক কিংবা দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা দেখা দেয়, তবে স্মৃতিভ্রম হয়ে থাকে। অনেকসময় অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম, এডিএইচডি, মেডিকেশন, ডিসলেক্সিয়া, মাথায় আঘাত পাওয়া, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ব্রেইন টিউমার ইত্যাদির কারণেও এই শর্ট টার্ম মেমোরি লস বা স্মৃতিভ্রম হতে পারে। 


শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিবেন যেভাবে

আপনার সন্তানের বেড়ে উঠার সময়টাতে এই সব মানসিক রোগ দেখা দিলে ভয় পাবেন না। কেননা বর্তমানে বাচ্চাদের মানসিক রোগের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এতে আধুনিক এবং কার্যকরী চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু সুস্থ-স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিক ডাক্তা্র এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের যথাযথ চিকিৎসায় ও  আপনার  সহযোগিতায় বাচ্চার চলার পথটা সাবলীল হবে। এছাড়াও আপনার সন্তানের মানসিক রোগ প্রতিরোধ করতে যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-   


মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে

নিয়মিত কাউন্সিলিং করাতে হবে

প্রতিদিন নিয়ম করে ওষুধ খাওয়াতে হবে

বাচ্চার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে

শিশুকে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়াতে হবে  

ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করতে হবে

বাচ্চা নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে

বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খেলাধুলা করতে দিতে হবে

শিশুর আগ্রহ বুঝে, তাকে বিভিন্ন কাজকর্ম করতে উৎসাহ প্রদান করতে হবে 

ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করাতে হবে

ভালো কাজ করলে প্রশংসা করতে হবে

রুটিন অনুযায়ী জীবনযাপন  করতে উৎসাহ দিতে হবে

শিশুর মানসিক বিকাশে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজ করতে দিতে হবে

বাচ্চা কোন ভুল করলে, বকা না দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না


আপনার সন্তানের মাঝে মানসিক রোগ দেখা দিলে, একদমই ঘাবড়ে যাবেন না। মনে রাখবেন যে, শিশুদের মানসিক সমস্যা অন্যান্য শারীরিক রোগের মতোই। সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার পাশে থাকুন এবং তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। কেননা সাইকিয়াট্রিক চিকিৎসক এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের সঠিক চিকিৎসায় আপনার সন্তান সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে উঠবে!


অটিজম কেন হয়? অটিজম শিশুদের চিকিৎসা পদ্ধতি || ডা. আবিদা সুলতানা
Why does autism happen? Treatment methods for children with autism || Dr. Abida Sultana


ডা. আবিদা সুলতানা এখন নিয়মিত রোগী দেখছেন সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতালে। প্রতি শনি থেকে বৃহস্পতিবার, বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। ঠিকানা - ৭৭২/১-এ, বসিলা রোড, ময়ূরভিলা সংলগ্ন, মোহাম্মদপুর বাসস্টান্ড, ঢাকা। সিরিয়ালের জন্য কল করুন : ০১৭৪৫৬৭৬৯২৯

ডা. আবিদা সুলতানা এখন নিয়মিত রোগী দেখছেন সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতালে।
প্রতি শনি থেকে বৃহস্পতিবার, বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
ঠিকানা - ৭৭২/১-এ, বসিলা রোড, ময়ূরভিলা সংলগ্ন, মোহাম্মদপুর বাসস্টান্ড, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুন : ০১৭৪৫৬৭৬৯২৯

No comments

Powered by Blogger.