গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক পজিশন এবং ভালো ঘুমের জন্য দরকারি পরামর্শ || ডা আবিদা সুলতানা || Correct sleeping position during pregnancy and useful tips for good sleep || Dr. Abida Sultana
সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকার পর দিন শেষে রাতে আমাদের ঘুমাতে হয়। কারণ এই সময়েই আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক মানুষের রাতে অন্তত ৬-৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। আর এই ঘুম যদি ঠিকভাবে না হয় তখন শরীর অসুস্থ, ক্লান্তি, মেজাজ খিটখিটে, কাজে অমনযোগ সব ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। ঘুম ভালো না হলে শরীর এবং মন কোনোটাই ভালো থাকে না। প্রেগনেন্সিতে যদি ঘুমের সমস্যা হয়, তাহলে মা ও বাচ্চার উভয়েরই ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। এ সময় হবু মায়েদের মধ্যে অনাগত শিশুর আগমন নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনা কাজ করে। দুশ্চিন্তাও করেন অনেকেই। এ সমস্ত কারণেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক পজিশন অর্থাৎ কোন পজিশনে শোওয়া মা ও বাচ্চার জন্য ভালো সেই বিষয়ে আজকের ফিচার।
প্রেগনেন্সিতে ঘুম না হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় ক্রমাগত হরমোনাল চেঞ্জ এর কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হয়
লেগ ক্র্যাম্পস বা পায়ে অস্বস্তিকর ব্যথার জন্য ঘুমের সমস্যা হতে পারে
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসার ফলে ঘুমের প্রবলেম হয়
বমি বমি ভাব হওয়া বা ঘন ঘন বমি হওয়া
ব্যাক পেইনের জন্য ঘুম ভালো হয় না
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে ব্রেস্ট পেইন হয়ে থাকে, কারণ এ সময় ব্রেস্ট স্ফীত হতে থাকে
বারবার ক্ষুধা লাগে
বুক জ্বালাপোড়া করা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা
বমি বমিভাব
গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক পজিশন
১) গর্ভাবস্থায় চিৎ হয়ে শোওয়া উচিৎ নয়। চিৎ হয়ে শুলে শরীরের সবচেয়ে বড় শিরা ইনফেরিওর ভেনাকাভাতে চাপ পড়ে ও হৃদপিণ্ডে কম রক্ত প্রবেশ করে। ফলশ্রুতিতে হৃদপিন্ড থেকে কম রক্ত বের হয়। তখন মায়ের রক্ত চাপ কমে যায় এবং প্ল্যাসেন্টাতে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে গর্ভের শিশুর শরীরে অক্সিজেন এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২) অ্যাজমা ও স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে এমন মায়েদের নিজের শরীর ও শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে সমস্যা হয়। যাদের এসব সমস্যা আছে তারা চিৎ হয়ে শুলে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ার সমস্যা যোগ হবে। তখন উভয় সমস্যা পরস্পরকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যায়।
৩) ডান পাশ বা বাম পাশ হয়ে ঘুমানো যায়। এতে কোনো মানা নেই। যেভাবে গর্ভবতী আরাম অনুভব করেন, সেভাবেই ডান বা বাম পাশ হয়ে ঘুমাতে পারেন।
৪) বাম পাশ হয়ে ঘুমানোর কথা বেশি বলা হয়ে থাকে। কারণ এভাবে শোওয়াতে লিভার অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট শরীরের চাপ থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
৫) বাম কাত হয়ে শুলে রক্তসঞ্চালন সহজতর হয়। গর্ভের শিশুর রক্ত সরবরাহ মায়ের হার্ট থেকে সহজতর হয়।
৬) গর্ভাবস্থায় একদমই উপুর হয়ে শোওয়া উচিত নয়। উপুর হয়ে শুলে পাকস্থলি ও প্রসারিত জরায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। খাবার হজমেও সমস্যা হয়।
৭) উপুর হয়ে শুলে বাচ্চার নড়াচড়াতে ব্যাঘাত ঘটে এবং মায়ের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়।
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য
গর্ভকালীন সময়ে ভালো ঘুমের জন্য কিছু টিপস
সাধারণত বলা হয় গর্ভকালীন সময়ে মাকে ৮-১০ ঘন্টা ঘুম এবং বিশ্রাম নিতে হবে, যা দিনে ২ ঘন্টা এবং রাতে ৮ ঘন্টা এভাবে ভাগ করে নেওয়া যায়। গর্ভবতী মায়ের ঘুমের স্থান হতে হবে কোলাহলমুক্ত, আরামদায়ক, কম আলো কিন্তু ভালো বাতাস চলাচল করে এমন স্থান। এই সময়ে ভালো ঘুমের জন্য আরও কিছু পরামর্শ থাকছে আপনাদের জন্য-
গর্ভবতী মায়ের সবসময় ঢিলেঢালা নরম আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা উচিত
খাবারের সাথে সাথে ঘুমানো ঠিক না
ঘুমানোর আগে চা-কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না
ঘুমের অন্তত এক ঘন্টা আগে এক গ্লাস দুধ খাওয়া ভালো
প্রতিদিন ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম সঠিক সময়ে ঘুমাতে সাহায্য করবে (ভারি ব্যায়াম করা যাবে না)
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগে ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করতে হবে
পায়ের নিচে ও পিঠের নিচে বালিশ দিলে পা ও কোমড়ের ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়
No comments