কেমন হবে গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসের খাবার || ডা. আবিদা সুলতানা || What will be the diet of the first 3 months of pregnancy || Dr. Abida Sultana
আপনি মা হতে চলেছেন, এটি আপনার জীবনের সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী মায়েদের বমিভাব, বমি, মাথা ঘোরাসহ বিভিন্ন উপসর্গের কারণে শরীর খারাপ লাগতে পারে। এই সময় প্রয়োজন নিজের যত্ন, সঠিক খাদ্যাভাস ও বাড়তি সতর্কতা। তাই গর্ভধারণের পর থেকেই নিজের এবং গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টের রিসার্চের ফলাফলে দেখা যায়, গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে (1st trimester) মা ও শিশু উভয়ের সুস্থতার জন্য ফোলেট, আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি ১২ এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজন।
একটি শিশু কতটা সুস্থ, সবল, মেধাবী হবে, তা নির্ভর করে মাতৃত্বকালীন মায়ের পুষ্টিকর আহার সেবনের মধ্য দিয়ে। যে সকল মা পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে যতটা সচেতন, তাদের নিজের এবং গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা ততটা বেশি। যেহেতু একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাত ও অন্যান্য গর্ভকালীন জটিলতার ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই ১ম ত্রৈমাসিক সময়ে মাকে সবচেয়ে যত্নবান হতে হবে নিজের খাদ্যাভ্যাস ও বিশ্রামের প্রতি।
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য
তবে শুধু গর্ভকালীন সময়ের ৩টি ধাপেই নয় (1st, 2nd, 3rd trimester), মা হতে চাওয়ার জার্নিটা শুরু হওয়া উচিত সন্তান কনসিভ করার ৬ মাস আগে থেকে। এই ৬ মাসে একজন নারী নিজেকে তৈরি করবে একটি সুস্থ-সুন্দর শিশু জন্ম দেওয়ার জন্য এবং নিজের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য। কেননা, পুষ্টি ঘাটতি সম্পন্ন অপুষ্ট মা কখনই একজন সুস্থ সবল শিশুর জন্ম দিতে পারেন না। বরং নিজেই সম্মুখীন হয়ে যান জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
গর্ভধারণ বা কনসিভ করার অন্তত ৩-৬ মাস আগে থেকে মায়ের কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা আছে কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ওই সময় থেকে জিংক, আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড—এই ৩টি পুষ্টি উপাদান অবশ্যই নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন।
মনে রাখতে হবে, এই সময় সন্তানের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই গর্ভবতী মায়ের রোজকার খাদ্য তালিকায় থাকবে—দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য, ডাল, সয়াবিন, বাদাম, মিষ্টি আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, রেড মিট, ড্রাই ফ্রুটস, গাঢ় সবুজ রঙের শাক-সবজি, গম ইত্যাদি। অর্থাৎ ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, ফল ও প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানীয়। তবে অবশ্যই এই সময় আনারস, কাঁচা পেঁপে, টেস্টিং সল্ট, অপাস্তুরিত দুধ, কাঁচা সবজি, আধা সেদ্ধ ডিম বা মাংস, অ্যালকোহল, সোডা ওয়াটার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মা হয়ে পুরোটা জার্নিতে আপনার চাহিদার অতিরিক্ত খাবারের দরকার নেই, শুধু দরকার পুষ্টিকর খাবার। উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার বাছাইয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি না করেও গর্ভাবস্থায় আপনি পারবেন নিজের ও গর্ভস্থ শিশুকে সুস্থ রাখতে।
No comments