Header Ads

শিশু-কিশোরদের মানসিক সমস্যা ও ব্যাধি || ডা. আবিদা সুলতানা || Mental problems and disorders of children and adolescents || Dr. Abida Sultana

শিশু-কিশোরদের মানসিক সমস্যা ও ব্যাধি,ডা আবিদা সুলতানা, Mental problems and disorders of children and adolescents, Dr Abida Sultana


খাবার সমস্যঃ
খাদ্য গ্রহণে অনীহা : নানাবিধ কারণে শিশু খাবার গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করে থাকে। তবে প্রকৃতপক্ষে শিশু তার প্রয়োজন অনুসারে খেয়ে থাকে। সমস্যা সৃষ্টি করে থাকেন মায়েরা। মা প্রথম দিকে মনে করে শিশু বুঝি পেট ভরে খেলো না। তাই তিনি জোর করে আরো খাওয়াতে চেষ্টা করেন। ফলে ধীরে ধীরে শিশু মনে করে যে খাবার দাবার ব্যাপারটি আমার কাজ না, এটা আমার মায়ের দায়িত্ব। এরকম ভ্রান্ত শিক্ষা তার মধ্যে জন্মায়। ফলে সে খেতে চায় না।
আর একটা কারণ হলো খাবার নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা শিশু বুঝে ফেলে। ফলে সে তার মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও এমনটা করতে পারে। কারণ শিশু জানে যে সে খাবে না বললে তার মা তার সাথে অনেকক্ষণ সময় ব্যয় করবে। সুতরাং মাকে কাছে রাখার জন্য সে অনেক ক্ষেত্রে এমন করতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশু হয়তো খেলাকে এতবেশি উপভোগ করে যে খেতে বসে সে সময় নষ্ট করতে চায় না।

চিকিৎসা : যদিও মায়ের পক্ষে কষ্টকর, তবুও বাচ্চাকে বরং কিছুক্ষণ না খেয়ে থাকতে দেওয়া উচিত, যদি সে খেতে না চায়। ক্ষুধা লাগলে বাচ্চা শেষ পর্যন্ত খাবেই। আর একটা কথা মনে রাখতে হবে। সেটা হলো বাচ্চা যখন খাবে তখন তাকে পুরস্কৃত করা ঠিক হবে না। কেননা এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভবিষ্যতে শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ গড়ে উঠতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় মা-বাবার মধ্যে অনিশ্চয়তার কোন সমস্যা থাকলে বাচ্চার মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। ফলে ক্ষুধাহীনতা প্রকাশ পায়। সুতরাং বাবা-মায়ের মধ্যে এরকম সমস্যা থাকলে তা দূর করা দরকার।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য    বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ : সাধারণত বাড়িতে বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া থাকলে কিংবা শিশুর প্রতি মায়ের যত্ন না থাকলে এমনটা হতে পারে। তাই শিশু মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অথবা মাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বেশি বেশি খেতে থাকে। এতে সে খাবার বেশি করে খেয়ে অনেক সময় সুখ লাভ করতে চায়। যদি কোন শিশুর মধ্যে এরকম প্রবণতা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে শিশুটি কোন কারণে সুখী নয়।
চিকিৎসা : মায়ের উচিত বাচ্চাকে সময় দেওয়া। মা-বাবার মধ্যে অমিল বা ঝগড়া থাকলে তা মিটিয়ে ফেলতে হবে। বাচ্চার অশান্তির কারণ দূর করতে হবে। যাতে সে সুখ শান্তি লাভ করার প্রকৃত পথ খুঁজে পায়, তাকে সেই সাহায্য করতে হবে।
নিদ্রা সমস্যা : ১.দুঃস্বপ্ন, ২.প্রচন্ড স্বপ্ন ভীতি, ৩.ঘুমের মধ্যে হাটা, ৪. ঘুমের মধ্যে কথা বলা, ৫.ঘুমের মধ্যে দাঁত কাটা, ৬. নিদ্রেজনিত পক্ষাঘাত (এটা শিশুদের হয় না, তবে কিশোরদের হয়, ১০-২০ বছর পর্যন্ত)
স্কুলে যেতে না চাওয়া : এটা বাচ্চাদের হতে পারে। কারণ খুঁজতে হবে বিভিন্ন ভাবে।
১.শিশুর নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক সমস্যা বা ব্যাধি থাকতে পারে।
২. বাড়িতে সমস্যা থাকতে পারে। যেমন বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া, বিচ্ছেদ, অমিল ইত্যাদি। বহু সদস্য বিশিষ্ট পরিবার, বাড়িতে বিশৃঙ্খলা বিরাজমান।
৩. স্কুলের সমস্যা অর্থাৎ স্কুল বহু দূরে অবস্থিত, শিক্ষকগণ ভালো আচরণ করেন না, সহপাঠিদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে না ওঠা। এ ধরনের শিশুদের অহেতুক ভীতি ঘটে। ফলে স্কুলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে থেকে দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্নায়ুতন্ত্রের প্রভাবে তাদের কিছু দৈহিক উপসর্গ দেখা দেয় ঠিক স্কুলে যাওয়ার সময় হলেই। এই যেমন মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি করে ফেলা, মাথা ঘোরানো, পেট ব্যথা, শরীর ঘামা, কম্পন দেওয়া ইত্যাদি। মা যদি অহেতুক দুশ্চিন্তা রোগে ভোগেন তাহলে শিশুর মধ্যেও এটা প্রভাব পড়তে পারে।
চিকিৎসা : আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শিশুর অহেতুক ভীতি দূর করতে হবে। বাবা-মা এবং স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হবে। বাড়িতে বাবা-মায়ের মাঝে কোন সমস্যা থাকলে তা দূর করতে হবে। স্কুলের কোনো সমস্যা থাকলে প্রয়োজনে স্কুল পরিবর্তন করতে হবে। অথবা স্কুলের সমস্যা শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে দূর করা যেতে পারে। শিশুর দুশ্চিন্তা ও অহেতুক ভয় দূর করার জন্য প্রয়োজনে দুশ্চিন্তা নিবারণের ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।

স্কুল পালানো : শিশুরা কখনো কখনো স্কুল পালানোকে বেশ উপভোগ করে। এটি তার ব্যক্তিত্বের অঙ্গ এবং পরিবারের শিথিল নিয়ন্ত্রণের বহিঃপ্রকাশ।
চিকিৎসা : এক্ষেত্রে শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বাবা মাকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে তাদের শিশুকে।
অবাঞ্চিত আচরণ : এ ধরনের শিশুরা প্রথমদিকে চুরি, মিথ্যা কথা বলা, অবাধ্যতা, মৌখিক ও দৈহিক আগ্রাসন ইত্যাদি শুরু করে থাকে। শেষের দিকে স্কুল পালানো, অপরাধমূলক কাজ করা, ধ্বংস মূলক কাজ করা, কোন সম্পত্তির ক্ষতি করা, মাদকাসক্তি, অশ্লীলতা, অগ্নি সংযোগ করা ইত্যাদি করে থাকে। কারণ:
১. শিশুর কারণ: ব্যক্তিত্বের সমস্যা, মৃগী রোগ, মানসিক প্রতিবন্ধী।
২. বাড়িতে সমস্যা: বিশৃঙ্খল পরিবেশ, এতিম শিশু, বড় পরিবার, জোয়ড়ি ও মদ্যপ বাবা মা ইত্যাদি।
৩. সামাজিক কারণ: বস্তি, আশেপাশে অপরাধ প্রবণ শিশুদের অবস্থান, এতিমখানায় বসবাস করা, স্কুল ও পরিবেশে প্রতিকূল অবস্থা বিরাজমান থাকা।
চিকিৎসা : ফ্যামিলি থেরাপি, গ্রুপ থেরাপি, আচরণ মূলক থেরাপি, সমস্যা হলে স্থান পরিবর্তন। প্রয়োজনে আবাসিক মনোচিকিৎসা। বাবা-মা ও স্কুলের শিক্ষকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করা।

কিশোর অপরাধ : অবাঞ্চিত আচরণের মারাত্মক পরিণতি হল কিশোর অপরাধ। এক্ষেত্রে আইন অমান্য করা শুরু করে দেয়। এবং সমাজে একজন মারাত্মক অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়।
চিকিৎসা: পারিবারিকভাবে বোঝানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। যদি তাতে কাজ না হয় তাহলে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠাতে হবে।



শিশু-কিশোরদের মানসিক সমস্যা ও ব্যাধি || ডা. আবিদা সুলতানা
Mental problems and disorders of children and adolescents || Dr. Abida Sultana

No comments

Powered by Blogger.