মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় যা করণীয় || What to do in the treatment of mental illness schizophrenia || Dr. Abida Sultana
সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ-লক্ষণগুলোকে জিন-পরির আছর, জাদুটোনা, আলগা, বাতাস, বাণ, পাপের ফল ইত্যাদি মনে করেন অনেকে। ফলে ওঝা-কবিরাজি, ঝাড়-ফুঁকের মতো অপ্রয়োজনীয় অপচিকিৎসা থেকে শুরু করে রোগীকে চিকিৎসার নামে নানা বর্বর উপায়ে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। প্রকৃতপক্ষে সিজোফ্রেনিয়া রোগের বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।
উপসর্গ
রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা নানা ধরনের উদ্ভট ও ভ্রান্ত বিশ্বাস লালন করেন। উপযুক্ত ভিত্তি বা প্রমাণ ছাড়াই তাঁরা মানুষজনকে সন্দেহ করেন। তাঁর অর্থ-সম্পত্তি কেউ নিয়ে নিচ্ছে, ক্ষতি করছে, ষড়যন্ত্র করছে, পথে অনুসরণ করছে, তাঁর মনের কথা জেনে যাচ্ছে, তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করছে—এ রকমটাই তাঁরা বিশ্বাস করেন। অনেকে গায়েবি আওয়াজ শোনেন বা জাগ্রত অবস্থায়ই এমন কিছু দেখেন বা শোনেন, যা অন্য কেউ দেখতে পায় না বা শুনতে পায় না।
অনেকে অদ্ভুত আচরণ করেন, যেমন—লোকজনের সামনেই উলঙ্গ হয়ে যাওয়া, নোংরা কাপড় পরা, সব সময় অপরিষ্কার থাকা, ময়লা-নোংরা ঘাঁটা, অকারণে সহিংস হওয়া, উদ্দেশ্যবিহীনভাবে চলাফেরা ইত্যাদি। অনেকে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। তবে বিচ্ছিন্নভাবে বা সাময়িকভাবে কোনো উপসর্গ থাকলেই তাঁকে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত বলা যাবে না। নির্দিষ্ট সময় ধরে নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ-লক্ষণ দৈনন্দিন জীবনযাপনকে ব্যাহত করলে তবেই রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই কিনুন রকমারি থেকে।
কারণ
অন্যান্য মানসিক রোগের মতোই সিজোফ্রেনিয়া রোগটিরও কোনো নির্দিষ্ট কারণ বলা যায় না। তবে এই রোগে বংশগতির উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। যাঁদের মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-ফুফু, মামা-খালা—এমন নিকটাত্মীয়দের সিজোফ্রেনিয়ার ইতিহাস আছে, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে ডোপামিন, সেরোটোনিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিকের তারতম্য দেখা যায়। এ ছাড়া জন্মকালীন জটিলতা, নেতিবাচক ঘটনাবহুল শৈশব, নির্যাতনের শিকার হওয়া, বাস্তুচ্যুতি, ধূমপান, মাদকাসক্তি প্রভৃতির সঙ্গে এই রোগের সম্পর্ক রয়েছে।
মানসিক চাপের কোনো ঘটনা, যেমন—পরীক্ষা, চাকরিচ্যুতি, প্রিয় কারো মৃত্যু প্রভৃতির পর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির মাঝে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
কোনো ব্যক্তির আচরণে রোগী বলে সন্দেহ হলে রোগ নির্ণয়ের জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। মূলত অ্যান্টিসাইকোটিকজাতীয় ওষুধ মুখে সেবন বা ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই রোগে দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধ সেবন করতে হয়। দেখা যায়, কিছুদিন ওষুধ সেবনের পর উপসর্গ কমে গেলে রোগী বা তাঁর আত্মীয়-স্বজন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ বন্ধ করে দেন। ফলে চিকিৎসা সঠিক হয় না এবং কিছুদিন পর রোগ ফিরে আসে। রোগীকে ওষুধ সেবন করানো গেলে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা সম্ভব।
No comments