Header Ads

মানসিক ব্যাধি চেনার উপায় || ডা আবিদা সুলতানা || Ways to recognize mental disorders || Dr. Abida Sultana

মানসিক ব্যাধি চেনার উপায়, ডা আবিদা সুলতানা, Ways to recognize mental disorders, Dr Abida Sultanav, mental health, health, fitness

* অস্বাভাবিক আবেগ জনিত প্রতিক্রিয়া :

১. দুশ্চিন্তা : বিনা কারণে বা কোনো ছোটখাটো কারণেই অতিরিক্ত ভীতিগ্রস্ত হওয়া মোটেও ভালো লক্ষণ না। দুশ্চিন্তা হল এই অতিরিক্ত ভয়ের দীর্ঘস্থায়ী রূপ। কেউ হয়তো বিশেষ সময়ে বা বিশেষ অবস্থায় কোনো না কোনো কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে যান। আবার কারো কারো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য ই হলো অল্পতে চিন্তিত হয়ে যাওয়া। দুঃচিন্তার কারণে নানারকম দৈহিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

২. বিযুক্ত আবেগ : হিস্টেরিয়া রোগে এমনটা দেখা যায়। দেহের কোন একটি অংশে পক্ষাঘাত হওয়া সত্ত্বেও রোগীর মধ্যে কোন দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতা দেখা যায় না। তাছাড়া যে কেউ আকস্মিকভাবে প্রচণ্ড ভয়ের সম্মুখীন হলে সাময়িকভাবে এরূপ আবেগহীনতা সৃষ্টি হতে পারে।

৩. নির্বিকার আবেগ : সমাজ উত্ত্যক্তকারী ব্যক্তিদের নিজস্ব অপকর্মের জন্য তাদের মধ্যে কোন অনুশোচনা জন্মায় না। এবং তাদের আবেগ সম্পূর্ণ নির্বিকার মনে হয়।

৪. অসংলগ্ন আবেগ : রোগীর চিন্তা ধারার সাথে তার আবেগের অসংলগ্নতা দেখা যায়। যেমন রোগী যখন তার বাবার মৃত্যুর কথা বলছে তখন হয়তো তার মুখে হাসি। সিজোফ্রেনিয়া রোগে এমনটি হতে পারে।

৫. দ্রুত পরিবর্তনশীল আবেগ : রোগী সহজেই কান্নায় ভেঙে পড়তে পারে এবং সহজেই হেসে দেয় অর্থাৎ হাসিও কান্নায় ফিরে আসছে তার মোটেও সময় লাগে না। ক্ষণস্থায়ী আবেগকে মুড বলে আর দীর্ঘস্থায়ী আবেগকে এফেকট বলে।

* অস্বাভাবিক প্রত্যাক্ষণ (Abnormalities of perception) শরীরের পঞ্চ ইন্দ্রীয়ের মাধ্যমে অতীত অভিজ্ঞতা দ্বারা ইন্দ্রীয়ের গ্রাহ্যতাকে আমরা প্রত্যক্ষণ বা perception বলি। অস্বাভাবিক perception গুলো হল -

১.বিভ্রম (illusion) : একটি বস্তুকে ভুল ভাবে অনুধাবন করাকে বিভ্রম বা illusion বলে। স্বাভাবিক অবস্থাতেও এটি হতে পারে। যেমন রশিকে সাপ মনে করা। মৃগীরোগ ও হিস্টেরিয়াতে এমনটা হতে পারে।

২. হ্যালুসিনেশন (hallucination) : নির্দিষ্ট কিছু ছাড়াই এমনটা ঘটে। রোগী এই অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতাকে ধ্রুব সত্য মনে করে। যেমন- শ্রুতিগত হ্যালুসিনেশন, দৃষ্টিগত হ্যালুসিনেশন, গন্ধগত হ্যালুসিনেশন, স্বাদগত হ্যালুসিনেশন, স্পর্শগত হ্যালুসিনেশন।
সাধারণত সিজোফ্রেনিয়া, আবেগজনিত ব্যাধি, বিষন্নতা, জৈবিক গুরুতর মনোব্যাধি মাদকাসক্তি, মৃগের রোগের ক্ষেত্রে এগুলো হতে পারে।

৩. দৃশ্য বস্তু ক্ষুদ্র দেখা : মৃগীরোগে এবং চোখের রেটিনাতে সমস্যা থাকলে এটা হতে পারে।

৪. দৃষ্টি বস্তু বড় দেখা: মৃগেরোগে এবং চোখের রেটিনাতে সমস্যা থাকলে এমনটা হতে পারে।

৫.hyperaesthesia (হাইপারএসথেসিয়া) : বহির্জগতের প্রকৃত অনুভূতি তীব্র আকারে অনুভব করা। যেমন অনেক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বা অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ ব্যক্তি বাহ্যিক কোন স্বাভাবিক শব্দকে বিকটভাবে শোনে।

৬. hypoaesthesia (হাইপোএসথেসিয়া) : এটা হাইপারএসথেসিয়ার বিপরীত। সাধারণত ডিলিরিয়াম রোগীর বেলায় এমনটা হতে পারে। এ সমস্ত রোগীরা বহির্জগতের স্বাভাবিক অনুভূতিকে খুব ক্ষুদ্র আকারে অনুভব করে।
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই কিনুন রকমারি থেকে।   বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন


* চিন্তার অস্বাভাবিকতা :

চিন্তার এই অস্বাভাবিকতাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। ১. চিন্তা প্রবাহের অস্বাভাবিকতা, ২. চিন্তার অধিকৃত বস্তুর গোলযোগ, ৩. চিন্তার বিষয়বস্তুর সমস্যা, ৪. চিন্তার অস্বাভাবিক বিন্যাস

১. প্রবাহের অস্বাভাবিকতা :

ক. দ্রুত পরিবর্তনশীল চিন্তা : এক্ষেত্রে রোগীর চিন্তাধারা খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। সামান্য সূত্র ধরেই সে এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে চলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আলোচনার বিষষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যের জন্য রোগী অন্য বিষয় বস্তুর আলোচনা শুরু করে দেয়। মেনিয়া বা হাইপুমেনিয়াতে এমনটি সাধারণত হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উত্তেজিত স্বিজোফ্রেনিয়া রোগীর বেলায় এমনটা হতে পারে।
খ. অতিকথন : রোগী অন্যতরত কথা বলতে থাকে। মেনিয়া ও হাইপুমেনিয়াতে সাধারণত এমনটা হয়ে থাকে।
গ. স্বল্প কথন : রোগীর চিন্তা ধারা মন্থর হয়। বিষন্নতা রোগে এটা হয়ে থাকে।
ঘ. চিন্তার বিঘ্নতা : কথা বলার সময় রোগী হঠাৎ থেমে যায়, চিন্তা হারিয়ে ফেলে এবং এগোতে পারে না। অনেক সময় থেমে যাওয়ার অনেক পরে নতুন আরেকটি চিন্তা তার মাথায় আসে। সাধারণত হয়স্বিজোফ্রেনিয়া রোগীর বেলায় এমনটা হতে পারে।
২. চিন্তার অধিকৃত গোলযোগ :
ক. অবসেশন : ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা নিম্নলিখিত ভাবে হতে পারে।
- চিন্তা বাতিক : সর্বদা মনে এক বা একাধিক খারাপ চিন্তা, অস্বস্তিকর বা বেদনাদায়ক বিশেষ করে ধর্ম, যৌন ও অশ্লীলতা চিন্তা ঘুরপাক খেতে পারে। কিছুতেই মন থেকে দূর করা যায় না। অথচ রোগী জানে এগুলো অর্থহীন এবং অবাস্তব।
- সন্দেহ বাতিক : সবসময়ই যে কোন ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। সন্দেহ মনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। রোগী জানে এই সন্দেহের পেছনে কোন বাস্তবতা নেই। তবুও সে থামতে পারে না।
- হঠাৎ কোনো কিছু করার বাতিক : ভয়ংকর কোন কাজ বা অসামাজিক কোনো কাজ করার ইচ্ছে জাগে। কিন্তু ওই কাজটি সে করে ফেলে না। শুধু মনে ইচ্ছে জাগে।
- অহেতুক ভীতির বাতিক : সব সময় একটা ভয় বা আতঙ্কের মধ্যে রোগী ঘুরপাক খেতে থাকে।
- বিলম্বিত বাতিক : রোগী সব কাজেই মন্থর বা ধীরগতির হয়ে থাকে। সবকিছুতে ধীরগতি স্বভাবের হয়ে থাকে।
খ. কম্পালসদশন বা বাধ্যতাধর্মী আচরণ, যাকে কর্মবাতিক বা সূচিবাই বলে। তা নিম্নরূপভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে - '3CDtT'
C- Checking : বারবার চেক করার অভ্যাস, কিছুতেই থামতে পারেনা।
C- Cleaning : হাত বারবার সাবান দিয়ে ধুয়ে থাকে। এবং এতে আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঙ্গাস জন্মে সাদা রঙ ধারণ করে থাকে। একাধিকবার গোসল করে এবং গোসলখানায় অত্যাধিক সময় ব্যয় করে। জিনিসপত্র বারবার ধুতে থাকে।
C- Counting : যেকোনো কাজ করার পূর্বে বা মাঝে বা শেষের দিকে বারবার গণনা করে। এটা মনে মনেও হতে পারে, আবার জোরেও হতে পারে। সাধারণত আমাদের দেশের রোগীরা তিনবার গণনা করতে পছন্দ করে।
D- Dressing : বারবার জামা পরে আর খোলে। কিছুতেই জামা পরা শেষ করতে পারেনা।
T- Touching : বারবার স্পর্শ করার অভ্যাস। যে কোন কাজ করার পূর্বে একাধিকবার স্পর্শ করার অভ্যাস।

গ. চিন্তার অন্তঃপ্রবেশ : কে বা কারা রোগীর মনে বা মস্তিষ্কে চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়। রোগী মনে করে যে তার নিজস্ব কোন চিন্তা নেই। সব চিন্তা তার শত্রুরা অথবা অন্যরা বাহির থেকে তার মস্তিষ্কে অথবা মনেরর ভেতরতর চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে।

ঘ. চিন্তার প্রত্যাহার : রোগী মনে করে যে তার শত্রুরা বা অন্য কেউ চিন্তা উঠিয়ে নিয়ে যায় বা মুছে ফেলে দেয়।
ঙ. চিন্তার সম্প্রচারণ : কাউকে বলার পূর্বেই লোকজন রোগীর মনের কথা জেনে ফেলে, অথবা রেডিও টেলিভিশন ও পত্রিকায় রোগীর মনের কথা প্রকাশ পেয়ে যায়।


৩. চিন্তার বিষয়বস্তুর অস্বাভাবিকতা :

ক. সন্দেহ মূলক অলীক বিশ্বাস : রোগী মনে করে যে কে বা কারা তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে অথবা তার উপর গুপ্তচরবৃত্তি শুরু করেছে। অথবা তার খাবার ও পানীয়তে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে। কিংবা চতুর্দিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

খ. আত্মম্ভরিতা জনিত অলীক বিশ্বাস : রোগী নিজেকে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে মনে করে। যেমন দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, নামকরা বিজ্ঞানী, ধর্ম প্রবর্তক ইত্যাদি। তবে তার আচরণে আত্মম্ভরিতা ভাব থাকে না। সে মনে মনে নিজেকে বিরাট কিছু মনে করলেও সে ঘর ঝাড়ু দিয়েই খুশি থাকে।

গ. ব্যাধি গ্রস্থতার অলীক বিশ্বাস : রোগী মনে করে যে সে নানারকম কঠিন রোগে ভুগছে। কখনো সে ভালো হবে না। তার লিভার পচে গেছে, কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে, হৃদপিণ্ড অকেজো হয়ে গেছে ইত্যাদি।

ঘ. অপরাধমূলক অলীক বিশ্বাস : রোগী নিজেকে খামোখা মারাত্মক অপরাধী মনে করে এবং সবার কাছে মাফ চাইতে থাকে।

ঙ. নেতিবাচক অলীক বিশ্বাস : রোগী সবকিছুতেই নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে করে। এবং বলতে থাকে যে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। তার নিজের সহ সকলের অস্তিত্বকে সে অস্বীকার করে।

চ. দারিদ্রজনিত অলীক বিশ্বাস : রোগী নিজে ও নিজের পরিবারকে নিঃস্ব মনে করে। যদিও তাদের প্রচুর ধনসম্পদ আছে।

ছ. অবাস্তব প্রেমানুভূতি : নিজের চেয়ে উঁচুতে প্রতিষ্ঠিত বা বিখ্যাত ব্যক্তি তার প্রেমে পড়েছে বলে রোগী এক ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে চলে।


মানসিক ব্যাধি চেনার উপায় || ডা আবিদা সুলতানা
Ways to recognize mental disorders || Dr. Abida Sultanav

No comments

Powered by Blogger.