ম্যালেরিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার, কাদের ঝুঁকি বেশি || Malaria symptoms and remedies, who is at high risk || Dr. Abida Sultana
স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা দেখা যায়, এদের মধ্যে সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। এই সাত প্রজাতির মধ্যে চারটি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক বাংলাদেশে।
সংক্রমিত অ্যানোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া শুরু হয়। পরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু লালার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং যকৃতে পৌঁছে। সেখানে তারা পরিপক্ব হয় এবং বংশ বৃদ্ধি করে।
অ্যানোফিলিস মশা যখন অন্য কাউকে কামড়ায়, তখন তার রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায় এবং সেও আক্রান্ত হয়। ম্যালেরিয়াবাহী মশা মূলত সন্ধ্যা থেকে ভোরের মধ্যে কামড়ায়।
ম্যালেরিয়ার লক্ষণ
চিকিৎসকরা বলছেন, কারো ম্যালেরিয়া হলে কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায়।
১. এই রোগের প্রধান লক্ষণ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। জ্বর ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
২. তবে অনেক সময় জ্বর আসা-যাওয়া করে নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে, যেমন একদিন পর পর জ্বর এসে তা তিন-চার ঘণ্টা দীর্ঘ হতে পারে। এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর কমে যায়।
৩. এছাড়া অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত
৪. মাথাব্যথা
৫. অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য
৬. বমি বমি ভাব ও বমি
৭. হজমে সমস্যা
৮. অত্যধিক ঘাম হওয়া এবং ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা
৯. খিচুনি
১০. পিপাসা কম লাগা
১১. মাংসপেশি বা তলপেটে ব্যথা
১২.রক্তশূন্যতা
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই কিনুন রকমারি থেকে।
যেভাবে সুস্থ থাকবেন
মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হবার আগেই সতর্ক হবার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ আক্রান্ত হবার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে মৃত্যুসহ নানা ধরণের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং কীটতত্ত্ববিদেরা মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য কয়েকটি উপায় বলছেন,
১. ঘুমানোর সময় মশারি খাটিয়ে ঘুমাতে হবে
২. মশার কামড় থেকে বাঁচতে নানা ধরণের রিপেলেন্ট অর্থাৎ মশা তাড়ানোর পণ্য যেমন বিভিন্ন ধরণের কয়েল, স্প্রে, ক্রিম জাতীয় পণ্য ব্যবহার করা, তবে এর মাত্রা ও প্রয়োগ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
৩. ঘরের আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪. এ ছাড়াও জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার কররতে হবে। কারণ জমা পানিতে মশা ডিম পাড়ে বেশি।
৫. মশাবহুল স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দিন।
৬. ম্যালেরিয়া মৌসুমে বা ম্যালেরিয়া প্রবন এলাকায় লম্বা হাতার জামা পরার চেষ্টা করুন।
৭. ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
ঝুঁকি বেশি যাদের
প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করলে ম্যালেরিয়া সম্পুর্ণ নিরাময়যোগ্য একটি রোগ। চিকিৎসকদের মতে, যারা ম্যালেরিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি রয়েছে তারা হলো—
১. যারা ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় থাকে অথবা যারা ওই সব এলাকায় বেড়াতে যায়।
২. অল্প বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক হতে পারে।
৩. গর্ভবতী মায়েদের ম্যালেরিয়া হলে গর্ভস্থ শিশুরও ম্যালেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৪. ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে রক্ত দিলে তারও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৫. আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় দেরি করলে কিংবা অবহেলা করলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
No comments