অস্থিরতার কারণ ও প্রতিকার || Causes and Remedies of Instability || Dr. Abida Sultana
অস্থিরতার অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের সবারই আছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অস্থিরতার প্রবণতা বাড়ে। আসলে এটা কিন্তু একটা রোগের লক্ষণ মাত্র। এই অস্থিরতা নানা কারণে হতে পারে। সুস্থ অবস্থায় এটি হতে পারে। আবার অসুস্থ অবস্থাতেও হতে পারে। অনেকের ব্যক্তিত্বেই অস্থিরতার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।
প্রথমত, পরিবেশের কারণে যে অস্থিরতা দেখা দেয়, তা সাধারণত অনেকেরই কোন ব্যাধি ছাড়াই দৈনন্দিন জীবনে নানা ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার ফলে দেখা দেয়। যেমন - পরীক্ষার হলে যাওয়ার পূর্বে কিংবা রেজাল্ট প্রকাশ হবার সময় অস্থিরতা দেখা যায়। আবার স্ত্রীর সন্তান প্রসবের সময় স্বামীর অস্থিরতা দেখা দেয়। তাছাড়া পরিবারের বা খুব কাছের কোন মানুষের মারাত্মক ব্যাধি, দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর সময়, বৈবাহিক গরমিল, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, ব্যবসা-বাণিজ্যে দেউলিয়া, আর্থিক ক্ষতি, পরীক্ষায় ফেল, চাকরি থেকে অবসর, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, শিশুর অসুস্থতা ইত্যাদি সময়ে দেখা দেয়।
দ্বিতীয়ত কতগুলো মনোরোগের কারণে অস্থিরতা দেখা দেয়। যেমন লঘুতর মানসিক রোগ বা নিউরসিস। যেমন - অহেতুক আতঙ্ক, শুচিবাই, মাদকাসক্ত, নেশাদ্রব্য গ্রহণের পূর্ব মুহূর্ত ইত্যাদি। আরেকটি হল গুরুতর মনোরোগ বা সাইকসিস। যেমন - স্কিজোফ্রেনিয়া, ডিমেনশিয়া, ডেলিরিয়াম ইত্যাদি।
তৃতীয়ত, দৈহিক কারণে এই অস্থিরতা তৈরি হয়। অতিরিক্ত জ্বর, হাঁপানি, ভাইরাসজনিত অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার থাইরয়েডিজম, যৌবনে শারীরিক পরিবর্তনের সময়, মহিলাদের মাসিক, ঋতুস্রাব এর পূর্বে, প্রস্রাব বেদনার আগে, মস্তিষ্কে আঘাতের পর, মৃগীরোগ, মস্তিষ্কে টিউমার ইত্যাদি।
চিকিৎসা বা প্রতিকার : পরিবেশগত কারণে যে অস্থিরতা দেখা দেয় তার প্রতিকার হচ্ছে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। তা যদি সম্ভব না হয় তবে রোগীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলে তার সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে এবং মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার দ্বারা তাকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করা। মনোরোগের কারণে যে অস্থিরতা দেখা দেয় তা সমাধানে রোগীর সাথে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রোগীকে বুঝে তার সমস্যা ও দ্বন্দ্বগুলো ঠেকিয়ে তাকে মানসিকভাবে চাপমুক্ত করে সুস্থতা আনতে হবে। রোগীর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে সাহায্য করতে হবে। দৈহিক রোগের কারণে যে অস্থিরতা দেখা দেয় তার জন্য প্রথমেই ওইসব রোগের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে এবং দৈহিক রোগ সেরে গেলে এই অস্থিরতা এমনিতেই কমে যাবে।
No comments