আচরণ ও ব্যক্তিত্ব || ডা. আবিদা সুলতানা || Behavior and Personality || Dr. Abida Sultana
মস্তিষ্ক : মস্তিষ্কের গঠন মাতৃগর্ভে ভ্রুনের চার সপ্তাহ বয়স থেকেই শুরু হয়ে থাকে। জন্মের পর দু বছরের মধ্যে মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ পরিণত হয় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের সমান হয়। গর্ভবতী মাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে এবং জন্মের পর দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে পরিমিত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে মস্তিষ্কের গঠন পরিপূর্ণ হয়। পবিত্র কুরআনে সূরা আল বাকারায় আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ করেন 'তোমরা (মায়েরা) শিশুদেরকে পূর্ণ দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াবে।' এটি যথাযথভাবে পালন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে যেন শিশুটিও তা থেকে উপকৃত হয়। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক গঠনে প্রোটিন জাতীয় খাবারের ভূমিকা অনেক বেশি। মস্তিষ্ক অনেক সুক্ষ সুক্ষ স্নায়ু দ্বারা তৈরি। এই সুক্ষ স্নায়ু কোষের পরিমাণ প্রায় ১৫০ বিলিয়ন। এবং এগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত। মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র স্নায়ু রসের মাধ্যমে স্নায়ুবিক সংবাদ প্রবাহিত করে। মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণের দ্বারা মানুষের আচরণও নিয়ন্ত্রিত হয়।
মস্তিষ্ক প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত।
১. উপরের মস্তিষ্ক (fore brain) : মস্তিষ্কের এই উন্নত ও সূক্ষ্ম উপরের অঞ্চল দ্বারা মানুষের কথা বলা, চিন্তা, বিচার, বিবেচনা, সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গ্রহণ, বুদ্ধি, স্মরণশক্তি, মেধা, প্রজ্ঞা, আচরণ, সামাজিক সম্পর্ক প্রভৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়। তাছাড়া শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ, দৃষ্টিশক্তির সঠিক মূল্যায়ন এই এলাকা দ্বারা হয়ে থাকে।
২. অভ্যন্তরীণ মস্তিষ্ক (mid brain) : মস্তিষ্কের এই কেন্দ্রীয় অঞ্চল দ্বারা মানুষের আবেগ, ক্রোধ, আনন্দ ভীতি, উদ্বেগ, জৈবিক চাহিদা যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রজজন ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়।
৩. নিম্ন মস্তিষ্ক (hind brain) : মস্তিষ্কের এই অংশের দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া, রক্তচাপ, তাপমাত্রা, নিদ্রা, জাগরন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়। মস্তিষ্কের এই অঞ্চলকে মানুষের জীবনী শক্তি নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবেও ধরা হয়। সুতরাং এই অংশের কোন ক্ষতি হলে বা গোলযোগ দেখা দিলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে মারাও যেতে পারে।
আচরণ
আচরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে। এই যেমন স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক, দৃশ্যমান আচরণ, অদৃশ্যমান আচরণ। আমাদের আচরণ স্থান কাল ও পাত্র ভেদে ভিন্নতর হয়ে থাকে। মাঝেমাঝে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরের পরিবর্তনও আমাদের আচার-আচরণকে প্রভাবিত ও পরিবর্তন করে। সুতরাং বলা যায় আমাদের আচরণ হল শারীরিক মানসিক ও সামাজিক সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ।
No comments