রমজানে যেভাবে স্বাস্থ্যকর ইফতার করবেন || How to have a healthy Iftar in Ramadan || Dr. Abida Sultana
স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার প্রত্যেক রোজাদারের হক। কিন্তু বর্তমানে নানা মুখরোচক খাবার ইফতার মেন্যুতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ‘স্বাস্থ্যকর’ শব্দটিকে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ইফতারে মূল বৈশিষ্ট্য হলো ইফতারের জন্য খাবারটি হতে হবে হালাল। ইফতার দিয়ে রোজা ভাঙা হয়।
ইফতার হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ। ইফতার তৈরির উপাদান হতে হবে ভেজালমুক্ত। ইফতার হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ ও পুষ্টিকর। তাই সবাইকে সঠিক ইফতার গ্রহণ করার জন্য খাদ্যের বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। আমাদের ইফতার মেন্যুতে কয়েকটি সাধারণ খাবার থাকে, সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নিই।
পেঁয়াজু
ডাল দিয়ে তৈরি তেলে ভাজা খাবার। মচমচে ও ক্যালরিবহুল হওয়ায় খেতে অনেক স্বাদ। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখবেন, সাধারণভাবে ডুবো তেলে ভাজা এই খাবার ভাজার সময় অনেক তেলের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ একটি পেঁয়াজু অনেক তেল শোষণ করে। অতিরিক্ত তেল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। মাসজুড়ে পেঁয়াজু খেলে এসিডিটি, রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ওজনাধিক্য ও রক্তে ইউরিক এসিড বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
পেঁয়াজুকে একটু স্বাস্থ্যকরভাবে খাওয়ার উপায় হলো ডাল হিসেবে খেসারির পরিবর্তে মসুর দিয়ে করা, ডাল ছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পানি ফেলে ভালোমতো ধোয়া, ডালের সঙ্গে সঙ্গে সবজির মিশ্রণ করা, ডুবো তেলের পরিবর্তনে স্যাকা তেলে ভাজা বা চাপটির মতো চাল যোগ করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন চুল পড়া কমাতে যেসব অভ্যাস পরিবর্তন জরুরি
বেগুনি
বেগুনের অনেক গুণ হলেও বেগুনির গুণ তার মতো হয় না। বেগুনের ওপর বেসনের প্রলেপ ও ডুবো তেলে ভাজার কারণে গুণে গুণান্বিত এ সবজিটি হয়ে যায় ক্যালরিবহুল। এ ছাড়া অতিরিক্ত লবণ ও বেসন খাবারের পুষ্টিগুণকে অনেকটাই নষ্ট করে দেয়। রোজ বেসনের তৈরি বেগুনি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়; গ্যাস, এসিডিটি, রক্তে কোলেস্টেরল ও ইউরিক এসিড বাড়ার আশঙ্কা বাড়ায়।
ডালের বেসনের পরিবর্তে ময়দা বা চালের গুঁড়া, ডিমের সাদা অংশ দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করলে সেটা ডালের বেসনের থেকে ভালো হলেও ডুবো তেলে ভাজার ব্যাপারটি রয়ে যায়। তাই বেগুনি প্রতিদিন না খেয়ে মাঝেমধ্যে খাওয়া ভালো।
ছোলা
আরো একটি পরিচিত ইফতার আইটেম। ডালের পেঁয়াজু, ডালের বেসনের বেগুনি, সেই সঙ্গে ডালের ছোলা। অর্থাৎ ডাল আর ডাল। ডাল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত ডাল স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। সেই সঙ্গে মসলা/ তেল/ আলু দিয়ে ভাজা ছোলায় প্রচুর ক্যালরি ও ফ্যাট যুক্ত হয় প্রোটিনের পাশাপাশি।
একটু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাওয়ার উপায় হলো ছোলা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা ছয় থেকে আট ঘণ্টা। পানি ফেলে ভালোভাবে ধোয়া। সেদ্ধ ছোলা শসা, টক দই দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া। তবে প্রতিদিন ছোলা না খাওয়াই ভালো।
শরবত
রঙিন ও মিষ্টি হতেই হবে। বেশির ভাগ মানুষই এই ছোট বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে শরবত তৈরি করে। অথচ স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় বা শরবত হলো যত সম্ভব স্বচ্ছ। প্রাকৃতিকভাবে রঙিন ও চিনি ছাড়া তরলকে বোঝায়। তাই রঙিন শরবতের দিকে না ঝুঁকে দইয়ের লাচ্ছি লবণ ও গুড় দিয়ে, স্বচ্ছ ডাবের পানি, চিনি ছাড়া ঘরে তৈরি ১০০ ভাগ তাজা ফলের রস হলো উৎকৃষ্ট তরল। আর যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে, তারা চিড়া ভেজানো পানি, তোকমা বা ইসুবগুলের শরবত, বেলের/ পেঁপের শরবত ইত্যাদি খেতে পারে।
জিলাপি
রঙিন, ঘি বা তেলে ভাজা আবার সিরায় মোড়ানো, একের ভেতর তিন। এটি স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করে। চর্বি/ক্যালরিবহুল এই খাবারটি ওজনাধিক্য, এসিডিটি, রক্তে কোলেস্টেরল বা সুগার বাড়ানো ছাড়াও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই রোজায় জিলাপি না খেয়ে তার পরিবর্তে রসগোল্লা, রসমালাই, কাস্টার্ড বা পুডিং, অর্থাৎ দুধের মিষ্টান্ন খাওয়া যেতে পারে।
তাই ইফতারকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে, পরিমিতভাবে ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যগোষ্ঠীর খাদ্য দিয়ে করা উচিত। চিড়া, মুড়ি, নুডলস, দই কলা, মৌসুমি ফল, সাগু, স্যাকে তেলে ভাজা আলুর চপ, খেজুর, শরবত হতে পারে উত্তম খাবার।
আবার যাদের কোনো শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তারা প্রয়োজনে একটি থেকে দুটি খেজুর ও শরবত খেয়ে প্রয়োজন অল্প ভাত ও ইফতার খেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাতে শুধু এক গ্লাস দুধ খেলেই যথেষ্ট। মুখোরোচক বা রসনা তৃপ্তি নয়। ইফতার হতে হবে মুখোরোচক।
No comments