Header Ads

গর্ভবতী মায়েদের যেসব খাবার বেশি প্রয়োজন || Foods that expectant mothers need more || Dr. Abida Sultana

 

গর্ভবতী মায়েদের যেসব খাবার বেশি প্রয়োজন, ডা আবিদা সুলতানা, Foods that expectant mothers need more, , Dr Abida Sultana

দুইজনের খাবার একজনে খাওয়া আর তা জমায়া রাখা চাট্টিখানি কথা না! কিন্ত গর্ভবতী মায়েরা তাই করেন! তাই করতে হয়, সুতনুকা মায়েরাও তাদের শরীরে দিকে খেয়াল করেন না, তাদের খেয়াল থাকে তাদের শরীরে দিনে দিনে বাইড়া উঠা অনাগত শিশুটি; কি ভাবে তার দুনিয়াতে আগমন নিশ্চিতঃ আর নিরাপদ করা যায়। বলা হয় সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর গড়পড়তা ওজন ৬ পাউন্ড হওয়া উচিত, আর তার জন্য একজন গড়পড়তা ওজনের মাকে তার শরীরের ওজন ২৫ থাইকা ৩৬ পাউন্ড বাড়াইতে হয় গর্ভকালীন সময়টাতে।

গর্ভবতীর মায়ের প্রতিটা পদক্ষেপ কোন না কোন ভাবে তার গর্ভস্থ শিশুর উপরে প্রভাব ফেলে। আর শিশু যেহেতু নিজে কিছু খায় না আর ‘উম্বিলিক্যাল কর্ডে’র মাধ্যমেই মায়ের শরীরে গৃহীত খাবার শিশুও ভাগ বসায়। তাই মাকে দুইজনের জন্য আর যে খাবার শিশুর জন্যও নিরাপদ আর দরকারী খাবারই খাইতে হয়। এই লেখাটার দুইটা পর্ব এই পর্বে কি খাবার খাওয়া উচিত আর নিরাপদ আলোচনা করতাছি। পরের পর্বে কি এড়ানো দরকার সেইটা আলোচনা করুম।

কি খাওয়া উচিত এইটা নির্ধারণ করা বেচারী মায়েদের জন্য বেশ ‘নার্ভ র‍্যে’কিং ব্যপার কারন অনেক মায়েরই পূর্ব অভিজ্ঞ্যতা নাই আর তার জন্য যে যা বলে সেটাই শুনতে মন চায় ‘না জানি কি ভুল হইয়া যায়’। আমার মা বলছে এইটা খাইতে, খালা বলছে সেই টা, শাশুড়ী বলছে এইটা খাও বেচারা নতুন গর্ভবতী মা কি করবো!

কেউ বলে মাছ খাও। আরেকজন আইসা বলে মাছে আজকাল মার্কারী পাওয়া যাইতাছে খাওয়া ঠিক না, কেউ বলে মাংশ খাও আরেকজন আইসা বলে না মাংশ খাওয়া ঠিক হইব না এতে ফ্যাট আছে; কেউ বলে ডিম খাও আরেক জন আইসা বলল নাহ এতে কোলেস্টেরল বেশী তাইলে খামু টা কি? এইটাই গর্ভবতী মায়ের প্রশ্ন হইয়া দাঁড়ায় কোনটা নিরাপদ!

দুইজনের জন্য নিরাপদ আর উপযুক্ত খাবার নিচে দশ রকম খাবারের আলোচনা করলাম, দশটাই ব্যবহার করতে হইব এমন কোন কসম কিরা নাই একটা দুইটা নিলেই হইব। তবে মাল্টিপল চয়েস থাকায় বৈচিত্র পাওয়া যাইব।

প্রথমেই ডিমের কথা বলায় যায়, একটা ডিমে ৯০ ক্যালরী,এছাড়াও প্রায় ১২ ধরনের ভিটামিন আর প্রয়োজনীয় মিনারেলস বা খণিজ পদার্থ পাওয়া যায় ডিমে। ডিমে ভালো মানের প্রোটিন পাওয়া যায়, গর্ভস্থ শিশু শরীর অভাবনীয় গতিতে বাড়তে থাকে তা কোষ বিভজিত হইয়াই বাড়ে আর কোষ এর জন্য প্রোটিন দরকার, পুস্টিবিদ Elizabeth Ward, Expect the Best – Your guide to Healthy Eating Before and After Pregnancy বইএর লেখিকা বলেন “এক জন গর্ভবতী মা হিসাবে আপনার নিজেরও প্রোটিন দরকার আছে”।

ডিমে কোলাইন আছে যা বাচ্চার মস্তিস্কের বিকাশ ও ওভারঅল স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। ‘নিউরাল টিউব ডিফেক্ট’ রোধ করে। কিছু কিছু ডিমে অমেগা ৩ যোগ করা হয় (ডিমের প্যাকেটের লেবেলে লেখা থাকে ) যা শিশুর বিকাশে সহায়ক।

ডিমে কোলেস্টেরল থাকে কিন্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুব কম থাকে প্রতি ডিমে প্রায় দেড়গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। স্বাভাবিক রক্তচাপ সম্পন্ন সুস্থ্য গর্ভবতী মা প্রতিদিন একথেকে দুইটা ডিম খেতে পারেন। তবে যদি আগে থেকেই কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্ত চাপ থাকে তাইলে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যাইতে পারে। ডিম সস্তা অন্য যেকোন খাবারের তুলনায়। ডিম রান্না করা সহজ যেকোন যায়গায় যেকোন সময়ে পাওয়া যায়। পোচ, বয়েল্ড, ফ্রাই, স্ক্রাম্বল্ড বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়।

মাছ: যেকোন তৈলাক্ত মাছ এ ওমেগা ৩ উপকারী ফ্যাট পাওয়া যায়, স্যালমন হইলেতো কথাই নাই, যারা প্রবাসী তাদের জন্য স্যালমন পাওয়া আর খাওয়া কঠিন কিছু না, এতে ক্ষতিকর ‘মিথাইল মার্কারী’র পরিমান খুব অল্প থাকে টুনা, ম্যাকারেলের তুলনায়, মিথাইল মার্কারী শিশুর নার্ভাস সিস্টেম উন্নয়নে গোলমাল করে।

দেশে ইলিশ পাঙ্গাস খাওয়া যাইতে পারে, পাঙ্গাস নদীর হওয়া বাঞ্ছনীয়, পুকুরে চাষ করাগুলির খাবারে মুরগীর খামারের বর্জ্য ব্যবহার করা হয় যাতে ক্ষতিকর উপাদান ‘ক্রোমিয়াম’ পাওয়া গেছে। উত্তর আমেরিকায় ডাক্তার মাম্মারা সপ্তাহে ১২ আউন্সের বেশী টুনা ও পোলক মাছ (ডিব্বার) খাইতে নিষেধ করেন।

বীনস বা ডাল/বীজ জাতীয় খাবার: নেভী বীনস, বিভিন্ন ডাল, ব্ল্যাক বিনস, পিন্টো বিনস, রাজমা/কিডনী বিনস এমন কি চিক পি বা ছোলা/বুট যেকোন টা খাওয়া যাইতে পারে। এতে পাওয়া ফাইবার আর ভেষজ প্রোটিন তুলনাহীন। প্রোটিন উপকারী আগেই জাইনা গেছ, কিন্ত ফাইবার তোমার গুরুত্বপূর্ন বন্ধু!

গর্ভাবস্থায় পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হেমোরয়েডের ঝুঁকি বাড়ায়। ফাইবার এই ঝুঁকি কমায় ও নিরাময় করে, তাছাড়া বীজ জাতীয় খাবারে পাওয়া ফাইবারের সাথে সাথে আয়রন ফোলেট, ক্যালসিয়াম আর যিঙ্ক ফাও!

মিষ্টি আলু ও গাজর : কমলা রং এর খাবারে পাওয়া ক্যরোটিনোয়েডস শরীরে যাইয়া ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহন শরীরের জন্য ক্ষতিকর হইতে পারে। প্রানীজ খাবার যেমন কলিজা, দুধ ও ডিম থাইকাও ভিটামিন এ পাওয়া যায়, কিন্ত কমলা রং এর মিষ্টি আলু ও গাজর থাইকা পাওয়া কারোটিনোয়েড শুধু প্রয়োজনানুসারে ভিটামিন এ তৈরী করে। কমলা মিষ্টি আলু ভিটামিন সি ফলেট ও ফাইবার যোগান দেয়। এটা সস্তা আর বিভিন্ন ভাবেই খাওয়া যায়।

শশ্যদানা : (হোল গ্রেইন) পপকর্ণ হোল গ্রেইন খাওয়া দরকার, এতে প্রচুর ফাইবার ভিটামিন এ, সেলনিয়াম আর ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট আছে, পপকর্ন ছাড়াও ওটমিল, বার্লী খাওয়া যাইতে পারে।

ওয়ালনাট বা আখরোট : উদ্ভিজ ওমেগা ৩ র জন্য সবচেয়ে সেরা সোর্স। আখরোট দেখতে মস্তিস্কের মত এতে প্রাপ্ত উপদান মস্তিস্ক গঠনে অবদান রাখে, স্ন্যাক্স হিসাবে উপযোগী সালাদে যোগ করা যায়। এতে প্রোটিন ও ফাইবার আছে।

দই : খুব ভালো সোর্স ক্যালসিয়ামের জন্য, চিপড়ানো হইলে আরো ভাল, গ্রীক স্টাইল দই যাতে ফ্যাটের বা ঘন দুধের ব্যবহার হয় সেইটা সবচেয়ে ভাল, গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম গ্রহন খুবই প্রয়োজনীয়, যদি যথেষ্ট পরিমানে গ্রহন না কর তাইলে তোমার শরীরের হাড় থাইকা বাচ্চার ক্যালশিয়াম এর ঘাটতি পুরন হবে। তাই তোমার দই গ্রহন খুব দরকারী নিজের ও শিশুর হাড়ের গঠন ঠিক করার জন্য।

গাঢ় সবুজ শাক সব্জী : যেমন পালংশাক, কেল, সুইস চার্ড খাওয়া দরকার এতে বিভিন্ন ভিটামিন যেমন এ সি ও কে ও অতি প্রয়োজনীয় ফলেট আছে যা শিশুর চোখ জন্য উপকারী।

চর্বিছাড়া মাংশ :  চর্বি ছাড়া মাংশ হাই কোয়ালিটি প্রানীজ প্রোটিনের সোর্স, মাংশ কেনার সময় খেয়াল করতে হবে যাতে তা ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগ চর্বি মুক্ত থাকে। গরুর মাংশে প্রোটিন ছাড়াও কোলাইন থাকে যা শরীরের জন্য দরকারী। তবে প্রসেসড মিট অর্থাৎ বোলনা, সসেজ জাতীয় মাংশের খাবার ফুটন্ত গরম না হইলে গ্রহনে বারন করেন Mayo Clinic অবস্ট্রেটিশিয়ান Mary Marnach কারন এটা থাইকা লিস্টেরিয়া, সাল্মোনেলা, টক্সোপ্লাজমা নামের ব্যাক্টেরিয়া ও পরজীবী শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

আর সর্বশেষে বিভিন্ন রংগীন ফলমূল : প্রতিটা ভিন্ন রং এর ফলের মধ্যেই ভিন্ন ভিটামিন বিদ্যমান। সবুজ কমলা লাল হ লুদ, সাদা ও বেগুনী ফল মূল গ্রহনে শরীরে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যোগান দেওয়া যায়।

গর্ভাবস্থার শেষের দিকে রংগীন ফলমূল গ্রহণে গর্ভস্থ শিশু এ্যমোনেটিক ফ্লুইডের মাধ্যমে তার স্বাদও গ্রহন করতে পারে। তাতে শিশু জন্মের আগে থাইকাই খাবারের স্বাদের সাথে পরিচিত থাকে আর ভূমিষ্ঠ হবার পরে সময় হইলে তারে সেই ফল দিলে তা সে চিনতে পারে আর খাইতে গাইগুই করে না।

সব গর্ভবতী মায়ের জন্য আমার অকৃত্রিম শুভকামনা, নিরাপদ মাতৃত্ব হোক।


গর্ভবতী মায়েদের যেসব খাবার বেশি প্রয়োজন || ডা. আবিদা সুলতানা
Foods that expectant mothers need more || Dr. Abida Sultana

[আপনি যদি মনে করেন পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ তবে শেয়ার করে বন্ধুদের দেখার সুযোগ দিন। নিজে জানুন ও অন্যকে জানতে সাহয্য করুন। নিয়মিত লাইক, কমেন্টস না করলে এই মুল্যবান পোস্ট গুলো আর আপনার ওয়ালে খুজে পাবেন না।]

No comments

Powered by Blogger.