এলার্জিজনিত নানাবিধ সমস্যা || Various problems related to allergies || Dr. Abida Sultana
এলার্জিজনিত নানাবিধ সমস্যা
এলার্জি:
এলার্জি হলো ইমিউন সিস্টেমের
একটা দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যা পরিবেশের কোনো এলার্জেনের কারণে শরীরে হাইপারসেনসিটিভিটি
দেখায় কিংবা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখায়।
এলার্জেন: যদি কোনো বস্তু বা
উপাদান কোনো মানুষের শরীরে হাইপারসেনসিটিভ রিয়েক্ট দেখায় সেসব বস্ত বা উপাদন সমূহ সেসব
মানুষের জন্য এলার্জেন।
এলার্জিক রিয়েকশন: কোন অ্যালার্জেন
শরীরের সংস্পর্শে এলে শরীরে যেসব অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় তাকে এলার্জিক
রিঅ্যাকশন বলে। আবার এটাকে হাইপেরসেন্সিটিভিটি রিয়েকশনও বলা হয়। হাইপারসেনসিটিভিটি
রিঅ্যাকশন কে চার ভাগে ভাগ করা যায়, তবে চার প্রকারের মধ্যে টাইপ-১ হাইপারসেনসিটিভিটি
নিয়ে এখানে আলোচনা করবো।
কোন অ্যালার্জেন দ্বারা শরীরের
যেসব হাইপারসেনসিটিভিটি রিয়েকশন দেখা দেয় তাকে টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশন
বলা হয়। এলার্জি হিসেবে স্বাভাবিকভাবে আমরা যা বুঝে থাকি তা মূলত টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি
রিঅ্যাকশনকে বোঝায়।
এলার্জিক
সাধারণ প্রতিক্রিয়া সমূহ:
এলার্জিক রাইনাইটিস: অনেক সময় দেখা যায়, বৃষ্টিতে ভিজলে, পুকুরে গোসল করলে,
ধুলোবালিতে গেলে, একটু ঠান্ডা লাগলে বা কোনো ঠান্ডা পানীয় পান করলে কারো কারো সর্দি
কাশি শুরু হয়। আবার একই কাজগুলো অন্যরা করলে তাদের কিছুই হয় না। তাহলে বোঝা গেল বৃষ্টির
পানি, ধুলোবালি, পুকুরের পানি বা ঠান্ডা জলীয় বস্তু কারো জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে
কাজ করে আর কারো কারো জন্য এটা স্বাভাবিক হিসেবে থাকে। এই স্বাভাবিক বস্তুগুলো যাদের
জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে তাদের সর্দি কাশি শুরু হয়ে যায় তাকে এলার্জিক রাইনাইটিস
বলা হয়।
এলার্জিক রাইনাইটিস হলে সাধারণত
শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেন সমূহ আক্রান্ত হয় এবং হিস্টামিনের প্রভাবে সেখান থেকে
প্রচুর পরিমাণ মিউকাস তৈরি হয়। শ্বাসযন্ত্রে লুউকোট্রিন নামক এক প্রকার পদার্থ তৈরি
হয় যা কাশি তৈরিতে শ্বাসযন্ত্র কে উত্তেজিত করে। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম, নাক দিয়ে
পানি পড়া তথা সর্দি কাশি, সঙ্গে হালকা গায়ে গায়ে জ্বর থাকা এসবকিছু অ্যালার্জিক
রাইনাইটিসের কারণে হয়ে থাকতে পারে। অনেক সময় রাইনো ভাইরাস এলার্জি হিসেবে কাজ করে।
এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস বা চোখের এলার্জি:
এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস মূলত
চোখের একটি এলার্জি জনিত রোগ। এসময় চোখ লাল হয়ে থাকে। চোখ থেকে পানি পড়ে, ব্যথা করে।
৬ থেকে ১২ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা দেয়। যাদের শরীর কোনো নির্দিষ্ট
অ্যালার্জেনের প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় তাদের অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের
মত এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
কিছু বাচ্চাদের দেখা যায়, পুকুরে
গোসল করলে বা খেলাধুলা করলে কিংবা বাহিরে চলাফেরা করলে তাদের চোখ লাল হয়ে যায় চোখ
থেকে পানি পড়ে এবং ব্যথা করে চোখ চুলকায়। এগুলো মূলত এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস এর কারণে
হয়ে থাকে।
ফুড অ্যালার্জি: অনেকে গোশত বা বেগুন বা বাইরের খাবারে শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়।
বমি বমি ভাব হয়। এগুলো মূলত এলার্জির কারণে হয়ে থাকে। তাদের শরীর ওই সমস্ত খাবারের
জন্য উপযোগী না এবং ঐ সমস্ত খাবার গুলো যদিও অন্যদের জন্য স্বাভাবিক তবে তাদের জন্য
অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। তাই তারা যখন ওই খাবারগুলো খায় তখন সারা শরীর চুলকাতে
থাকে এবং লাল হয়ে যায়। তাহলে বুঝতে হবে গোশত তার জন্য অ্যালার্জেন।
ড্রাগ অ্যালার্জি: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা কোনো এন্টিবায়োটিক গ্রহণ
করার পরে তাদের শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে যায়। তাহলে বুঝে নিতে হবে ওই এন্টিবায়োটিকের
প্রতিও তার হাইপারসেনসিটিভিটি রয়েছে এবং ওই এন্টিবায়োটিক তার জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে
কাজ করছে। যদি কারো এমন হয়ে থাকে তাহলে সে ওই এন্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে অন্য এন্টিবায়োটিক
ব্যবহার করতে হবে। কোনো মেডিসিন ব্যবহারের ফলে যদি কোন হাইপেরসেন্সিটিভিটি রিয়েকশন
শুরু হয় তবে সে প্রকার এলার্জিকে ড্রাগ এলার্জি বলা হয়ে থাকে।
এনাফাইলেক্টিক রিএকশন: এনাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন হচ্ছে এক প্রকার ইমারজেন্সি এলার্জিক
কন্ডিশন। মনে করুণ কারো শরীরে একটি কীটপতঙ্গের সংস্পর্শ লেগেছে অথবা কোনো ছোট মশা কিংবা
অন্যান্য কীটপতঙ্গ কামড় দিয়েছে এর কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল তার শরীরে লাল লাল চাকা
হয়ে গেছে। শরীর প্রচণ্ড চুলকায়। সারা শরীর ব্যথা করছে। এই অবস্থা গুলোকে এনাফাইলেক্ট্রিক
রিঅ্যাকশন বলে। যাদের শরীর হাইপারসেনসিটিভ তাদের ক্ষেত্রে মশার কামড়ে কিংবা ছারপোকার
কামড়ে এনাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে।
এটপিক একজিমা: একপ্রকার এলার্জিক স্কিন কন্ডিশন। যা এলার্জিক রিয়েকশন এর কারণে হয়ে
থাকে।
চিকিৎসা: প্রথমে জেনে রাখা ভালো, এলার্জির স্থায়ী কোনো চিকিৎসা
নেই। কারণ এটার সম্পর্ক ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে। তাই যাদের যেসব বস্তু বা খাবারে এলার্জি
রয়েছে তা পরিহার করে চলাই ভাল। আর অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার কারণে যাদের এলার্জিক উপসর্গগুলো
দেখা দেয় তারা মেডিসিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।
মেডিকেশন: এলার্জিতে যেহেতু হিস্টামিন প্রচুর রিলিজ হয় তাই এলার্জি নিয়ন্ত্রণ
রাখতে হলে হিস্টামিন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে আর সে জন্য এলার্জিক কন্ডিশনে এন্টিহিস্টামিন
হচ্ছে এলার্জির মূল চিকিৎসা। তবে অবশ্যই এলার্জির চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিত
কোন চিকিৎসা নেয়া কিংবা অল্টারনেটিভ চিকিৎসা নেয়া বিপদজনক হতে পারে। যে কোনো শারীরিক
সমস্যায় নিকটস্থ চিকিৎসক কিংবা সরাসরি হাসপাতালে যোগাযোগ করাই সবচেয়ে ভাল।
এলার্জিজনিত নানাবিধ সমস্যা || ডা. আবিদা সুলতানা
Various problems related to allergies Dr. Abida Sultana
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
আরো পড়ুন ধূমপান ছাড়ার কিছু কার্যকর খাবার
No comments