Header Ads

শীতে নাক, কান, গলার অসুখ || Nose, ear, throat disease in winter || Dr. Abida Sultana

শীতে নাক কান, গলার অসুখ ||  Nose, ear, throat disease in winter || Dr. Abida Sultana

শীতের সময় নাক, কান ও গলার অসুখ বেশ বাড়ে। এই সময় ভোগান্তিতে পড়ে না এমন মানুষ কম।
নাক, কান ও গলার রোগ সবসময়ই কমবেশি দেখা যায়। তবে শীতের সময় এর প্রভাবে একটু বেশি পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, গলা ব্যথা, স্বরভঙ্গ, শিশুদের কানের সমস্যা এই সময়ের কমন কিছু রোগ।  তবে বড় সমস্যা ভাইরাস জনিত রোগগুলো; বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, যা শীতে বেশি দেখা যায়। 

 

ঠান্ডা বা কমন কোল্ড : 

শীতকালে কমন কোল্ড বা ঠান্ডা সবসময়ই লেগে থাকে। বিশেষ করে গলা ব্যথা, খুসখুসে কাশি হরহামেশাই দেখা যায়। এছাড়া হালকা জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এগুলো হচ্ছে ঠান্ডা বা কমন  কোল্ডের লক্ষণ।

সাধারণত এমনিতেই সর্দি -কাশি, ঠান্ডা লাগা, জ্বর ভালো হয়ে যায়। তারপরও যদি না সারে, তবে  চিকিৎসকের পরামর্শে আন্টি-অ্যালার্জি, অ্যান্টি-পাইরেটিক ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ঠান্ডা যাতে না লাগে সেদিকে বেশি খেয়াল রাখতে পারলে। বিশেষ করে সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের দিকে শীতের পোশাক বা গরমের জামা কাপড় পরে থাকা উচিত। টয়লেট ও গোসলের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন ঠান্ডা লেগে না যায়। বেশি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না। শীতের বাতাসে প্রচুর ধুলোবালি, কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে, যা থেকে সতর্ক করতে হবে; বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। তাছাড়া রাস্তাঘাটে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। 

 

ইনফ্লুয়েঞ্জা :

শীতের সময় ঠান্ডা থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে। এছাড়া নাক দিয়ে পানি আসা বা সর্দি আসা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো এ সময় দেখা দেয়। এসব সমস্যা ভাইরাস দ্বারাই মূলত বেশি হয়। এজন্য প্রোটেকটিভ ট্রিটমেন্ট সহ শীতের সময় এলার্জি এবং ঠান্ডা পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। শীতে বাচ্চাদের গরমের কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। রাতের বেলায় বাচ্চাদের গায়ের উপর থেকে যেন কাপড় বা লেপ, কম্বল সরে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছোট বড় সবাইকে শীতের সময় ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে। যাদের গলা ব্যথা তারা এই সময় গলার মাফলার জড়িয়ে রাখতে পারেন। ঠান্ডায় যাদের বেশি এলার্জি তারা হিটিং নিতে পারেন।

ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসা হিসেবে প্যারাসিটামল, আন্টিহিস্টামিন খাওয়া যেতে পারে। বেশি সমস্যা মনে করলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তবে প্রতিরোধটাই আসল কথা। 

 

এডিনয়েড:

এডিনয়েডে ভোগা  শিশুদের কিছু কমন লক্ষণ  থাকে। যেমন নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে না পারা, সব সময় মুখ খোলা রাখা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার, ঘুমের সময় নাক ডাকা যাকে বলে মাউথ ব্রিদিং ইত্যাদি হয়। এ সময় মুখ দিয়ে লালা ঝরে, পাশাপাশি কানেও কম শোনে। স্কুল পড়ুয়া  শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স, আইকিউ অনেকটাই কমে যায়। 

এরকম সমস্যা মনে হলে একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এ কাজ না হলে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে হবে।  কানের সমস্যা থাকলেও সেটা একই সময় অপারেশন করা সম্ভব। অনেকের মা-বাবা অপারেশনের কথা শুনে ভয় পেয়ে যান। কিন্তু জেনে রাখা উচিত এখন বাংলাদেশে এডিনয়েডে এর শতভাগ সফল অপারেশন হচ্ছে এবং শিশুরাও পুরোপুরি ভালো হয়ে যাচ্ছে। 

 

কানে ব্যথা :

কানে ব্যথা ও এডিনয়েডের সঙ্গে অনেকটা সম্পর্কযুক্ত। যেসব শিশুর এডিনয়েড থাকে তাদের রিকারেন্ট ইনফেকশন ও হতে পারে। শিশুদের নাকের পেছন থেকে কানে একটি কমিউনিকেশন লাইন আছে, যাকে আমরা বলি 'ইউস্টেশিয়ান টিউব'। শিশুদের ক্ষেত্রে  এই টিউব যদি বেশি ডিসফাংশনাল হয় তখন কানের পর্দার পেছনে পানি জমে, কানে ইনফেকশন হয়। অডিওলজি করলে চিকিৎসকরা এটি বুঝতে পারেন।  

কানের ব্যাথার জন্য কিছু মেডিকেল ট্রিটমেন্ট বিশেষ করে স্টেরয়েড নেসাল ড্রপ বা স্প্রে,  আন্টিহিস্টামিন ইত্যাদি দেওয়া হয়। এতেই অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়। তাতেও কাজ না হলে অপারেশনের কথা বলা হয়। যা প্রতি কানে দুই থেকে তিন মিনিটের জন্য খুবই সিম্পল অপারেশন। এতে কানের পর্দা ফুটো করে পানি বের করে ছোট্ট একটা ভেন্টিলেশন টিউব লাগিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শিশুর অভিভাবক ভয় পান বলে অপারেশন করাতে চান না। এতে কিন্তু শিশুরই ক্ষতি হয়ে যায়।  

টনসিলাইটিস :

টনসিলাইটিসকে আমরা বলি রিকারেন্ট ইমপেনশন, যা শীতকালে বেশি দেখা দেয়। যাদের টনসিল আছে তাদের প্রতি বছর তিন থেকে চার বা পাঁচবার হয়। টনসিলাইটিসে সাধারণ উপসর্গ হলো :-  কোনো কিছু গিললে গলা ব্যথা করা, খেতে না চাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব বা প্রচন্ড জ্বর ইত্যাদি। অনেক সময় শিশুরাই স্কুলে যেতে চান না, মেজাজ রুক্ষ হয়, খেলাধুলা করতে চান না বা কর্ম ক্ষমতা প্রদর্শন করে না ইত্যাদি। 

 

টনসিলাইটিস হলে একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে পরীক্ষা -নিরীক্ষা করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। আর টনসিলাইটিস প্রতিরোধের উপায় হল ঠান্ডা পরিহার করা। এছাড়া অ্যাজমা যাতে না হয় সেজন্য সচেতন থাকতে হবে। হালকা গরম পানি পান করতে হবে। গলায় মাফলার জড়িয়ে রাখতে পারলে ভালো হয়।

 

পলিপ বা মাংস বেড়ে যাওয়া :

শীতের সময় নাকের পলিপ বা মাংস বেড়ে যাওয়াকে খুব সাধারন একটি সমস্যা। অ্যালার্জির সঙ্গে বেশ সম্পর্ক আছে এর। তবে পলিপ কেন হয় এর কারণ অজানা। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের পলিপ হতে পারে বেশি। কিন্তু নাকে মাংস বাড়া আর পলিপ এক জিনিস নয়। 

 

মাথাব্যথা বা সাইনোসাইটিস :

এটাও শীতের সময় বেশি হয়। ঠান্ডায় সাইনোস গুলো ব্লক হয়ে যায়। এটা থেকে বাঁচতে ঠান্ডা এবং এলার্জি থেকে দূরে থাকতে হবে। এছাড়া ন্যাসাল ড্রপ এবং অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। যদি ঘন ঘন সাইনোসাইটিস হয় তাহলে অ্যান্ডস্কপি চিকিৎসা নেওয়া যায়। যাকে বলে সাইনাস সার্জারি। 

 

ফ্যারেনজাইটিস:

একটু শীতেই অনেকের গলা ব্যথা, জ্বর, খুসখুসে কাশি হয়ে থাকে।  এসব ফ্যারানজাইটিসের লক্ষণ।

অনেক সময় দেখা যায়, শীতের সময় অনেকেই ঘুম থেকে উঠে আর কথা বলতে পারেন না। গলা ব্যথাও করে। ভাইরাসজনিত কারণে এই সমস্যা হয়। ফ্যারেনজাইটিস থেকে বাঁচার প্রথম পদক্ষেপ হলো ঠান্ডা পরিহার করা। এছাড়া আক্রান্ত হলে মেন্থল দিয়ে গরম ভাব নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া নাকের ড্রপস, অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করলে উপকার মেলে। কথা বলা খানিকটা  সময়ের জন্য পরিহার করলেও অসুখের প্রকোপ কমে। 

 


শীতে নাক কান, গলার অসুখ  ||  ডা. আবিদা সুলতানা

Nose, ear, throat disease in winter || Dr. Abida Sultana

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

ডাঃ আবিদা সুলতানা স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি 


No comments

Powered by Blogger.