ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েডের সমাধান || Thyroid Home Remedies || Dr. Abida Sultana
শরীরের প্রতিটি উপাদানের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকা উচিত। মানবদেহের জন্য থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকাও জরুরি। প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি হরমোন উৎপন্ন হলে শরীরে নানা বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। মেয়েদের থাইরয়েড সমস্যা ও তার সমাধান, থাইরয়েড সমস্যা কিছু খাদ্যতালিকাগত এবং জীবনধারা পরিবর্তন করে উপশম করা যেতে পারে।
নিজেকে সুস্থ রাখতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েডের সমাধান-
১. প্রথমত, বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং জাঙ্ক ফুড (এক ধরনের কৃত্রিম খাবার যাতে চর্বি, লবণ, কার্বনেট সহ ক্ষতিকারক উপাদান বেশি থাকে) এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং এগুলো নিয়মিত সেবন করলে শরীরে অনেক খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
২. ভিটামিন ডি-এর অভাবে প্রায়ই থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। শুধুমাত্র সূর্যের আলো ই শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। তাই দিনে অন্তত ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা উচিত। এতে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হবে এবং ক্যালসিয়ামের শোষণ ভালো হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। মেয়েদের থাইরয়েড সমস্যা ও তার সমাধান, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ কিছু খাবার হল স্যামন, ম্যাকেরেল, দুগ্ধজাত খাবার, কমলার রস, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
৩. খাওয়ার সময় মন দিয়ে চিবালে থাইরয়েড এবং মনের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি হয়। তাই খাওয়ার সময় কখনই তাড়াহুড়ো করবেন না। সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে নিন। থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে,তাই সময়মতো খাবার চিবিয়ে খেলে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. অপরিচ্ছন্ন জীবনধারা এড়িয়ে চলুন এবং জীবনধারা ঠিক করুন। আজকাল এত শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই। মেয়েদের থাইরয়েড সমস্যা ও তার সমাধান, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের বাড়তি ক্যালরি কমাতে এবং শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।
৫. নারকেল তেল, গরম না করে ব্যবহার করলে, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। নারকেল তেলে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এই তেল খুবই কার্যকরী।
৬.
বাঁধাকপি, ব্রকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, ফুলকপি ইত্যাদি কিছু সবজি আছে যা শরীরের আয়োডিনকে নষ্ট করে। এগুলো কাঁচা খেলে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং থাইরয়েড গ্রন্থির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। তাই এসব সবজি না খাওয়াই উত্তম।
৭.আদায় পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম মত বিভিন্ন খনিজ রয়েছে.তাই থাইরয়েডের সমস্যায় এটি খুবই কার্যকরী। থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আদা চা পান করা খুবই উপকারী।
৮. আপেল সাইডার ভিনেগার হরমোন উৎপাদনের ভারসাম্য রক্ষায় খুবই উপকারী। এটি মেটাবলিজম উন্নত করে। এছাড়াও, এটি শরীরের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং শরীর থেকে বিভিন্ন টক্সিন অপসারণ করে পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে।
৯. আয়োডিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডের জন্য খুবই উপকারী। তাই যেসব খাবারে এসব উপাদান বেশি থাকে যেমন দুধ, পনির, দই, এ ধরনের দুগ্ধজাত খাবার থাইরয়েডের জন্য খুবই উপকারী।
১০.
ভিটামিন বি থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন বি 12 হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তাই যেসব খাবারে এই ভিটামিন বেশি থাকে যেমন ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, বাদাম, সেগুলোকে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে এগুলো শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি সরবরাহ করতে পারে।
থাইরয়েডের চিকিৎসা পদ্ধতি
থাইরয়েডের চিকিৎসা অন্য যেকোনো চিকিৎসার চেয়ে অনেক সহজ। যদিও হাইপো থাইরয়েডে একজনকে সারাজীবন ওষুধ খেতে হয় বা হাইপার থাইরয়েডে টিউমার অ্যাবলেশনের কারণে আবার হাইপো হয়ে যায়, দেখা যায় উভয় ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তবে এর খরচ খুবই কম। প্রতিদিন মাত্র এক থেকে দুইটা ওষুধ খেয়ে সুস্থ থাকতে পারবেন। ফুড সাপ্লিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে।
থাইরয়েডের রোগীদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়, কিছু ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতির সাথে সাথে ইউরিক এসিড বেড়ে যায়, বিশেষ করে রক্ত কমে যেতে পারে, তাই খাবারের সাথে কিছু সবুজ শাক-সবজি রাখা যেতে পারে। এটাও চিকিৎসার একটি অংশ। এবং থাইরয়েড রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অবশ্যই খুব সস্তা এবং জীবনব্যাপী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে হবে। আর গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে ট্যাবলেটের পরিমাণ একটু বেশি প্রয়োজন। এই সময় যত্ন নেওয়া উচিত। থাইরয়েডের চিকিৎসা পদ্ধতি, এই ট্যাবলেটগুলি গ্রাম থেকে শুরু করে খুব সহজেই সব জায়গায় পাওয়া যায়। কারণ এই ট্যাবলেটগুলো আমাদের দেশেই তৈরি হয়।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েডের সমাধান || ডা. আবিদা সুলতানা || Thyroid Home Remedies || Dr. Abida Sultana
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে
শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি
No comments