মুখের ঘা || Mouth sore || Dr. Abida Sultana
মুখের
ঘা কি
মুখে ঘা, যাকে অ্যাপথাস আলসারও
বলা হয়। ছোট, অগভীর ক্ষত যা মুখের নরম টিস্যুতে বা মাড়ির গোড়ায়, ঠোঁটের ভেতরের
পৃষ্ঠে হয়। ছোট্ট একটি গোলাকার অংশ সাদাটে হয়ে ওঠে। আর সাদা অংশটার মধ্যে অনেক সময়
পুঁজ জমে থাকে। পুঁজের চারপাশে হালকা একটা সীমানা থাকে। গোলাকার বা ছোট্ট ডিম্বাকৃতির
অংশে যা হয়। মুখের মধ্যে ঝিল্লির যে আবরণ থাকে, যাকে মিউকাস মেমব্রেন বলা হয়, তা ক্ষয়ে
যাওয়ার জন্য এই ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ঘা সংক্রামক নয় তবে ব্যাথা হয়,খাবার সময় ও কথা
বলতে কষ্ট হয়।
উপসর্গ
• অ্যাপথাস আলসারের চারপাশে ব্যথা, জ্বালা, পোড়া, হালকা চুলকানোর (যদি পুঁজ জমে যায়) সমস্যা থাকে।
• অনেক সময় মুখের একাধিক জায়গায় এই ঘা হয়। তখন খাবার গিলতে, কথা বলতে বা মুখ হাঁ করতেও কষ্ট হতে পারে।
• অনেকের এই ঘা থেকে খুব বেশি জ্বালাপোড়ার জন্য একটু লালা
ঝরতে পারে।
কেন
হয়?
গরম খাবার বা পানীয় খেতে গিয়ে
ছাল উঠে গেলে বা গালের ভেতরে কামড় লাগলেও এই রকম ঘা হতে পারে। মুখের ঘায়ের ক্ষেত্রে
এগুলো খুবই সাধারণ কারণ। এছাড়া জ্বর, রক্তস্বল্পতা, ফুড অ্যালার্জি, পুড়ে যাওয়া,
স্ট্রেস, অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি, ভিটামিনের অভাব ইত্যাদি মুখের ঘা হওয়ার অন্যতম কারণ।
আবার ভিটামিনের অভাবে এমন ঘা হতে পারে। খুব শক্ত ব্রাশ বা ভুল কৃত্রিম দাঁত ব্যবহার
করলেও মুখে ঘা হতে পারে। পরিপাকতন্ত্রের কিছু সমস্যায় এবং কিছু অটোইমিউন রোগের কারণে
মুখে ঘা হয়। তা ছাড়া জিবে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে।
রক্তে আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের
অভাবেও এই রকম ঘা হতে পারে।
এছাড়া আরো যেসব কারনে এই রকম ঘা হতে পারেঃ
• রক্তে আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাবে মুখে ঘা হতে
পারে।
• কিছু রক্তের অসুখের জন্যও এই সমস্যা হতে পারে।
* অ্যালার্জিজনিত সমস্যার কারনে
মুখে ঘা হতে পারে।
* অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার জন্য
মুখে ঘা হতে পারে।
* হঠাৎ গালে বা ঠোঁটের মাংসপেশিতে
দাঁতের ধাক্কায় কেটে যাওয়ার পর সংক্রমণ হয়ে এই ঘা হতে পারে।
* মাদকদ্রব্য, অ্যালকোহল গ্রহণকারীদের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য এই ঘা হতে পারে। তবে এটি কোনো ছোঁয়াচে অসুখ নয়।
* অতিরিক্ত পান, সুপারি, জর্দা
থেকে মুখের ভেতরে চামড়া উঠে, মাড়ি বা মুখের নরম মাংসপেশি ক্ষয় হয়েও এই সমস্যা হতে পারে।
* ক্রোমোজোমের সমস্যাজনিত কারণে
কিছু কিছু ক্যানসার রোগীর মুখে এই ঘা হয়।
* দাঁতের গোড়ায় সংক্রমণ, আবার
অনেকের গর্ভাবস্থায়ও বারবার এই সমস্যা হতে পারে।
মুখের ঘা প্রতিরোধে করণীয়-
* মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
বজায় রাখতে হবে। পান, সুপারি, জর্দা, গুল, তামাক পাতা, মাদক, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত চা,
কফি এগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
* আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
ট্যাবলেট খেতে হবে।
* পেটের কোনো অসুখ হলে তার চিকিৎসা
করাতে হবে। পেটের অসুখের জন্যও মুখে ঘা হতে পারে।
* পানিশূন্যতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
ও দাঁতের ক্যারিজ জাতীয় অসুখ থাকলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।
* নিয়মিত মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার
করতে হবে। অথবা হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলি করতে হবে।
* কষ্ট বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে।
মুখের
ঘা প্রতিরোধের ঘরোয়া চিকিৎসা
● যষ্টিমধু মুখের ঘা দূর করতে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দুই কাপ পানিতে ভিজিয়ে রেখে এটি দিয়ে কয়েকবার কুলি করতে হবে। এটি বেশ কার্যকরী।
● অ্যালোভেরা জেল বা অ্যালোভেরার রস মুখের ঘা কমিয়ে দিতে পারে। অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক, যার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফিংগাল, অ্যান্টিভাইরাল উপাদান ক্ষত কমিয়ে দিতে পারে।
● এক টেবিল চামচ নারিকেল দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে এই মিশ্রণ দিনে তিন থেকে চারবার ঘায়ের জায়গায় লাগাতে হবে। মধু ছাড়া শুধু নারিকেলের দুধ দিয়েও ক্ষত স্থানে মালিশ করতে পারেন। ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।
● একটু তুলার সঙ্গে নারকেল তেল লাগিয়ে সেটি মুখের ঘায়ের স্থানে লাগান। নারিকেল তেলের অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান ঘা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
● কয়েকটি তুলসি পাতাসহ পানি দিনে তিন থেকে চারবার পান করলে দ্রুত মুখের ঘা প্রতিরোধ হয়। এবং মুখের ঘা হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেবে।
● দ্রুত ব্যথা এবং জ্বালা দূর করতে টি ব্যাগ খুবই কার্যকরি। একটি টি ব্যাগ ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে সেটি ঘায়ের জায়গায় লাগালে ব্যথা এবং ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।
● লবণ-পানি দিয়েও কুলকুচি করতে পারেন, এটি মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এক টুকরো লবঙ্গ মুখে দিয়ে রাখলে, লবঙ্গের রস দিয়ে ক্ষত স্থানটিতে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
●
এক টুকরা বরফ নিয়ে ঘায়ের স্থানে
রেখে অথবা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে কুলকুচি করলে ভাল ফল পেতে পারেন।
মুখের ঘা || ডাঃ আবিদা সুলতানা || Mouth sore || Dr. Abida Sultana
No comments