ডেঙ্গু || Dengue || Dr. Abida Sultana
ডেঙ্গু কি
ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে ডেঙ্গু রোগ হয়। এটি একটি মশাবাহিত রোগ। এই ভাইরাসের ৪ ধরনের সোরোটাইপ রয়েছে। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়।
কারণ :
এটি একটি এডিস মশা (Aedes Aegypti) বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ। এই মশা জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং অন্যান্য ভাইরাসও ছড়ায়। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়।
কোন ব্যক্তি যে ভাইরাস দ্বারা প্রথমে আক্রান্ত হয়, সেই ভাইরাসের বিরূদ্ধে তার দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরী হয়। এজন্য কোন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় চার বারের মতো ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। যেহেতু এ ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ আছে।যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সময়কাল :
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে।
এডিস মশা কখন বেশি কামড়ায় :
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। তবে অন্ধকারাছন্ন পরিবেশে দিনের যে কোন সময় কামড়াতে পারে।
লক্ষণ :
১.ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ—জ্বর। ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে।
২. শরীরে ব্যথা থাকতে পারে,পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা হতে পারে।
৩. মাথাব্যথা হতে পারে।
৪. চোখের পেছনে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
৫.চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে।
৬. এছাড়া রোগীর বমি বমি ভাব, অরুচি, ডায়রিয়া, দাঁতের মাড়ি বা নাক বা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হওয়া, গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া- এসবও ডেঙ্গুর লক্ষণ।
কাদের ডেঙ্গু হবার প্রবণতা বেশিঃ সাধারণত ছোট বাচ্চা, বয়স্ক ব্যক্তি বা যাদের পূর্বে থেকেই কোনো রোগ আছে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ডেঙ্গু হবার প্রবণতা একটু বেশি। তবে এ রোগ যেকোনো বয়সে,যে কারোর ই হতে পারে
প্রতিরোধ :
এ রোগের কোন টিকা নেই। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হয়।
• জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশকী ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণির খাবার পাত্র, পানির পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা, ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার, খোলা একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
• ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, এডিস মশা অভিজাত এলাকায় বড় বড় দালান কোঠায় বাস করে। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে। ময়লাযুক্ত দুর্গন্ধ ড্রেনের পানি এদের পছন্দ নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সাথে মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
• আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে সেদিকে কড়া নজর দিতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে রোগীকে কোন মশা কামড়াতে না পারে।
• এডিস মশা সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। মশক নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ব্যাট ব্যবহারের সাথে সাথে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনে দিনে ও রাতে মশারী ব্যবহার করতে হবে।
ডেঙ্গু || ডা. আবিদা সুলতানা || Dengue || Dr. Abida Sultana
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি
No comments