রোগ প্রতিরোধে লেবু || Lemon to prevent disease || Dr. Abida Sultana
বাংলাদেশের টক জাতীয় ফলের মধ্যে লেবু অন্যতম জনপ্রিয় ফল। দেশে যে ধরনের লেবু পাওয়া যায় তার মধ্যে পাতিলেবু, এলাচি লেবু, কাগজিলেবু উল্লেখযোগ্য। এসব লেবুতে প্রচুর রস থাকে। লেবুর রস নানা গুণস সমৃদ্ধ। লেবুর রস একটি স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিগুণে ভরা একটি পানীয়। মানব দেহকে নানা রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা আছে লেবুর রসে। পুষ্টিবিরা বলেছেন খাবারের যদি অম্ল জাতীয় খাবার কম থাকে তাহলে দেহের ওজন বাড়ে।
লেবুর
শরবত দেহের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
সুস্থ সুন্দর দেহ গঠনে যেসব খাদ্য উপাদান প্রয়োজন তা লেবুর রসে পাওয়া যায়।
তাই প্রতিদিন খাবার টেবিলে লেবুর রাখা উচিত।
ভাত খাওয়ার সময় লেবুর রস মিশ্রিত করে খেলে খাবারে যেমন স্বাদ বারে তেমনি খাবার হজম তাড়াতাড়ি হয়।
দেহ পুষ্টি উপাদান পায়।
দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ফলে নানা রোগের কবল থেকে সবল থেকে সুস্থ থাকা যায়।
লেবুর সারা বছর বাজারে পাওয়া যায়। দামে ও সস্তা।
শুধু প্রয়োজন আমাদের সচেতনতার।
• রাসায়নিক
উপাদান : টক স্বাদের গন্ধযুক্ত ফলের রসে অ্যাসকরবিক, সাইট্রাল, বায়োফ্লাভোনয়েড, কমারি, ভিটামিন-এ, বি,
লিমোসাইট্রাল, ট্রানজেরিটিন এবং বিটা - সিটোস্টেরল, ডিলিমোনিন হেসপিরিডিন, নোবিলোটিম ও সিনেফ্রিন।
• পুষ্টি
উপাদান : পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী লেবুতে পুষ্টি উপাদান নিম্নরূপ-
- কাগজি লেবু : জলীয় অংশ ৮৪.৬ গ্রাম, প্রোটিন ২.৪ গ্রাম, চর্বি ২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম, আঁশ ৮ ১.৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট বা শ্বেতসার ১০.৯ গ্রাম, শর্করা ১০.৪ গ্রাম,ভিটামিন ৬৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ০.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম, লোহা ২.৩ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৫৯ কিলো ক্যালরি।
- এলাচি লেবু : জলীয় অংশ ৮৫ গ্রাম, প্রোটিন ২ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম, আঁশ ১.৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট শ্বেতসার ১১.১ গ্রাম, ভিটামিন সি ৪০ মিলি গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১০ মিলিগ্রাম,লোহা ২.৩ মিলি গ্রাম,খাদ্যশক্তি ৫৯ কিলো ক্যালরি।
পুষ্টিবিদদের
মতে, আমাদের হাটবাজারে যেসব লেবু পাওয়া যায় তার ওজন সাধারণত ৫০ থেকে
৬০ গ্রাম হয়।
এই ৬০ গ্রাম ওজনের একটি লেবুতে পুষ্টি উপাদান হল- ভিটামিন সি ২৮.৬ মিলিগ্রাম, সাইট্রিক এসিড ২.৫ মিলিগ্রাম,
ফোলেট ৭.৯৩ মাইক্রো
গ্রাম, প্রোটিন ০.২৩ গ্রাম,শ্বেতসার ৫.২৬ গ্রাম,
বিটা ক্যারোটিনের ১.৮৩ মাইক্রোগ্রাম,
ভিটামিন এ ১২.২০ মাইক্রোগ্রাম,
কোলিন ৩.১১ মিলিগ্রাম,
বায়োট্রিক ০.১৮ মাইক্রোগ্রাম,
লুটিন ৪.৪৯ মাইক্রোগ্রাম,ক্যালসিয়াম ৪.২৭ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম ৩.৬৬ মিলিগ্রাম,
পটাশিয়াম ৭৫.৭৪ মিলিগ্রাম,
খাদ্য শক্তি ১৫.২৫ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস ৩.৬৬ মিলিগ্রাম,
খাদ্য আঁশ ০.২৪ গ্রাম।
ঔষধি
গুনাগুন
খাদ্য
পরিপাকে লেবু খুবই কার্যকর।
হজম হওয়ার পর লেবুর রস অ্যালকালাইন রি-অ্যাকশন তৈরি করে।
পাকস্থলীর খাদ্য হজমের সাহায্য করে।
যারা গ্যাস্ট্রিক রোগে ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানিতে অর্ধেকটা লেবুর রস মিশিয়ে খান সপ্তাহখানেক।
সমস্যা কমে আসবে।লেবুতে সাইট্রিক এসিড থাকায় দেহ থেকে ক্যালসিয়াম নির্গমন কমিয়ে পাথরের প্রতিহত করে।
শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে সকাল বিকাল লেবুর রস দিয়ে শরবত তৈরি করে পান করুন।
ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং অতি দ্রুত গতিতে কোষ তৈরি অক্ষত শুকিয়ে যায়।কারো যদি কষ্ট কাঠিন্য থাকে অর্থাৎ পায়খানা শক্ত হয় বা দু একদিন পরপর হয়, তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা বা অর্ধেকটা
লেবুর রস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে চিনি বা লবণ ছাড়া পান করুন এবং রাতে ঘুমানোর আগের লেবুর রসের শরবত খেয়ে নিন।
সমস্যা কমে আসবে।
এভাবে কয়দিন খেতে হবে।
লেবুর খোসায় প্রচুর পরিমাণে বায়ো ফ্লাভোনয়েট থাকে যা দেখে ক্যান্সার কোষ তৈরি বা বিস্তারে বাধা দেয়।লেবুর রসে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং ধমনিদ স্থিতিস্থাপকতার অবস্থা দৃঢ়তা বজায় থাকে।
ফলে রক্ত সঞ্চালনে পথ সুগম্য থাকে।
হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে যায়।
লেবুর খোসায় সালভোস্টোল ৪০ কিউ এবং লিমোনিন থাকে।যা দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে। লেবুর খোসাতে তার থাকে পলিফেনাল ফ্লাভনয়েড, দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ভালো কোলেস্ট্রল তৈরি করে।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার আছে তারা নিয়মিত লবণ ছাড়া লেবুর শরবত খাবেন।
লেবুর রস শরীরে প্রবেশের পর অম্লীয় বা অ্যাসিড থেকে ক্ষারীয় হয়ে রক্তে মিশে যায়।ফলে শরীরের অম্লতা ও ক্ষারের ভারসাম্য বজায় থাকে।
এবং পিএইচ এর মাত্রা ঠিক থাকে।
লেবুর শরবত লিভার ও যকৃত বা কলিজা কে শুদ্ধ করে এবং শরীরে উৎপন্ন টক্সিক বের করে দেয় ফলে হজম শক্তি ভালো হয়।
শরীর সুস্থ সবল থাকে লেবুর পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে। লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চামড়ার বলিরেখায় এবং ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
চোখে
চারপাশে কালো দাগ দূর করে।
চামড়ার নতুন নতুন কোলাজেন কোষ তৈরি করে ফলে চামড়ার উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।
যাদের মুখে দুর্গন্ধ হয় তারা লেবুর রস দেওয়া শরবত খান এবং সম্ভব হলে খোসা চিবিয়েন খান।দুর্গন্ধ থাকবে না।
এতে দাঁতের ব্যথা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে।
দাঁতের প্লাগ জমার কারণে যে দাগ পরে তাও কমে আসবে।
মানসিক চাপ ভুগলে শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা।দেয়।
ফলে মানসিক চাপ বাড়ে।
তাই যারা মানসিক রোগে ভুগছেন তারা সকাল বিকালে লেবুর শরবত খান।
মানসিক চাপ কমবে।
যাদের
শরীরে বয়সের তুলনায় বেশি ওজন তারা লেবুর শরবত খান।
ওজন কমে আসবে।
সতর্কতা
লেবু
কেটে সরাসরি কামড়িয়ে খাবেন না।
এতে দাঁতের এনামেল এর ক্ষতি করে।
যাদের কিডনি বা গলব্লাডারেএ সমস্যা আছে তারা লেবুর খোসা খাবেন না।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আছে তারা লেবুর রসের সাথে লবণ এবং চিনি খাবেন না।
যাদের স্বাস্থ্য বেশি তারা লেবুর সাথে চিনিয়ে মিশিয়ে খাবেন না।
যদি কারো লেবুর শরবত খেলে শরীরের সমস্যা হয় বা যারা রোগী তাদের সমস্যা হলে লেবু খাবেন না চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন
ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই
আসুন সুস্থ থাকি
No comments