Header Ads

গলা দিয়ে রক্ত পড়া || Bleeding from the throat || Dr. Abida Sultana

 

 

গলা দিয়ে রক্ত পড়া || ডাঃ আবিদা সুলতানা Bleeding from the throat Dr. Abida Sultana

পরিমাণে যতই কম হোক থুথু বা কফের সাথে রক্ত পড়তে দেখলে কেমন অনুভূতি হয় তা কেবল ভুক্তভোগীরা জানে। অফিস থেকে বাসায় ফিরে কেবল খেতে বসেছি এর মধ্যে হুড়মুড় করে যিনি ঘরে ঢুকে পড়লেন তিনি আমার গ্রামেরই একজন পরিচিত কৃষক।পরনে লুঙ্গি, গায়ে জামার বদলে কাদামাটি, পা একেবারেই উলঙ্গ। ঘরে ঢুকে তিনি বললেন, আমাকে বাঁচান। তার এই আচরণে কিছুই না বুঝে হতবাক হয়ে তার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আপনার? তিনি যা বললেন তার সারমর্ম হলো মাঠে জমি চাষ করার সময় কাশি দিয়ে কফ ফেলতে গিয়ে দেখেন মুখ ভর্তি রক্ত। রক্ত দেখেই লাঙ্গল, জোয়াল, গরু মাঠে ফেলে জীবনের টানে এক কাপড়ে ছুটে এসেছেন আমার কাছে। সাথে একটি পয়সাও নেই। বাসে, লঞ্চে কাউকে একটা পয়সা দেননি। শুধু আসার সময় বাড়িতে খবর দিয়ে এসেছেন, তার গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে, তিনি আর বাঁচবেন না। তাই শেষ পরামর্শের জন্য রওনা হয়েছেন ঢাকায় আমার বাসায়। এই হলো গলা দিয়ে রক্ত পড়া একজন রোগীর বাস্তব আচরণ।

থুতু অথবা কাশির সাথে রক্ত পড়াকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় হেমোপটিসিস (Haemoptysis) গ্রিক হাইমা (Haima) শব্দের অর্থ রক্ত বা ব্লাড এবং পটেসিস (ptysis) শব্দের অর্থ থুথু বা স্পিটিং। এই দুটো মিলে হয়েছে হেমোপটিসিস। বাংলা ভাষায় গলা দিয়ে রক্ত পড়া। কোনো কোনো এলাকায় ব্যাপারে এখনো কিছু কিছু কুসংস্কার দেখা যায়। এখানকার লোকজনের ধারণা ভূতে ধরার কারণেই গলা দিয়ে রক্ত পড়ে। আবার কোনো কোনো এলাকায় গলা দিয়ে রক্ত পড়াকে লাল কাশি বলে। এখানকার লোকের ধারণা এই কাশি আপনা আপনি সেরে যায় এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে প্রকৃত কারণ না জানা পর্যন্ত গলা দিয়ে রক্ত পড়ায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

কারণ গলা দিয়ে রক্ত পড়ার এক তৃতীয়াংশেরই কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কথা ঠিক গলা দিয়ে রক্ত পড়া অনেক সময় অনেক কঠিন কঠিন অসুখের ইঙ্গিত বহন করে। শ্বাসতন্ত্র ছাড়াও খাদ্যনালী, মুখগহ্বর,নাক দাঁতের মাড়ি ইত্যাদি স্থান থেকে রক্ত ক্ষরণ হয়ে থুথু বা কফের সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং রোগীর রক্ত পড়ার ইতিহাস নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে।

এটা প্রকৃত হেমোপটিসিস কি না বলে রাখা দরকার, কেবলমাত্র শ্বাসতন্ত্রের রক্তক্ষরণকে প্রকৃত হেমোপটিসিস বলা হয়। এই রক্ত যুক্ত কাশি যক্ষ্মা ধমনী জনিত অনেক কঠিন কঠিন অসুখের ইঙ্গিত বহন করে। যেমনঃ

শ্বাসনালিজনিত অসুখঃ শ্বাসনলির ক্যান্সার, এডিনোমা, ব্রঙ্কিএকটেটিস, শ্বাসতন্ত্রে ফরেন বডি প্রবেশের, শ্বাসনালির তীব্র ক্রনিক প্রদাহ, বড় শ্বাসনালি (ট্রেকিয়া)এর প্রদাহ। কফের সাথে বার বার রক্ত দেখা গেলে শ্বাসনালির ক্যান্সার বলে সন্দেহ করা যায়।

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি


ফুসফুসজনিত অসুখঃ যক্ষ্মা, পচনশীল নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ফোঁড়া,পরজীবী জীবাণুঘটিত অসুখ যেমন হাইডাটিড ডিডিজ এবং ফ্লুক্স, সিসটিক ফাইব্রোসিস, এসপারজিলোমা, হিমোসাইডেরোসিস (অজ্ঞাত কারণে লৌহ কণিকা জমা হওয়া)।যক্ষ্মার প্রাথমিক স্তরে রক্ত মিশ্রিত কফ বের হতে পারে এবং তা আপনা আপনি আবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে চিকিৎসা না করালে রোগ যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফুসফুসে গর্তের সৃষ্টি হয় এবং গর্তের (ক্যাভিটি) ভিতরের শিরা উপশিরাগুলো উন্মুক্ত হওয়ার কারণে কখনো কখনো গলা দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়তে থাকে।এটা অনেক সময় মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। এখানে বলা দরকার যে, ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত শতকরা ৪০ ভাগের রোগীর গলা দিয়ে কোনো না কোনো সময় রক্ত পড়ে।

হৃদযন্ত্রজনিত অসুখঃ হৃদযন্ত্রের বাম দিকে কোঠরী অকার্যকর হওয়া। হৃদযন্ত্রের বাল্ব সংকোচনমাইট্রেলস্টেনোসিস এওটিক এনোরিজম।

ফুসফুসের শিরাজনিত অসুখঃ  লিউকোমিয়া (ব্লাড ক্যান্সার) হিমোফাইলিয়া (রক্ত জমাট না বাধা) রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়া এবং উচ্চ রক্ত চাপ। এছাড়া আপার রেসপিরেটরি ট্রাক্টের ফেরিংস এবং লেরিংস দিয়েও টিউমারের কারণে রক্ত যেতে পারে।

গলা দিয়ে রক্ত পড়লে দেরি না করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ চিকিৎসা গ্রহণের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম।

 

আরো পড়ুন যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশি

 গলা দিয়ে রক্ত পড়া || ডাঃ আবিদা সুলতানা 
Bleeding from the throat Dr. Abida Sultana

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।


No comments

Powered by Blogger.