Header Ads

এ্যাজমা কি || What is asthma? || Dr. Abida Sultana

 

 

এ্যাজমা কি || ডাঃ আবিদা সুলতানা || What is asthma? || Dr. Abida Sultana

এ্যাজমা গ্রিক শব্দ। গ্রীক এজিন শব্দ থেকে এ্যাজমা শব্দের উৎপত্তি। গ্রীক ভাষায় এ্যাজমা শব্দের অর্থ শ্বাসকষ্ট বা হা করে শ্বাস গ্রহণ। এ্যাজমা সারা বিশ্বের অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। শিশু বৃদ্ধরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এক কথায় বলতে গেলে এ্যাজমা শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত একটি ক্রনিক ওষুধ। এ্যাজমার আক্রমণে মানুষ শুধু কষ্টই ভোগ করে না অনেককে মৃত্যুবরণ করে। সারা বিশ্বে এ্যাজমা রোগের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। ধারণা করা হয় ২০২৫ সাল নাগাদ আরো প্রায় ১০ কোটি লোক এ্যাজমায় আক্রান্ত হবে। বিশ্বের প্রতি ২৫০ টি মৃত্যুর মধ্যে একজন এ্যাজমায় মারা যায়। তবে এই মৃত্যুর ৮০ শতাংশই কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আনুমানিক ২৫০০০০ থেকে ৩৪৫০০০ মানুষ প্রতিবছর এ্যাজমায় মারা যায়।

যে কোনো জনসংখ্যা শতকরা থেকে ১০ ভাগ এ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। বাতাসে বা কর্মক্ষেত্রের প্রদাগ সৃষ্টিকারী কোন ধরনের উত্তেজক পদার্থের উপস্থিতি ছাড়া এ্যাজমার প্রকৃত কারণ খুব কমই জানা যায়। শারীরিক ব্যায়াম, তীব্র গন্ধ, ঠান্ডা, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন, ধূমপান এবং ধোঁয়া যুক্ত আবহাওয়া এ্যাজমার আক্রমণ বা এ্যাজমার ক্রনিক উপসর্গ বৃদ্ধি পায়। গভীর রাত এবং খুব ভোরে এ্যাজমার আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। কারণ প্রতিদিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই সময় শ্বাসনালী সব থেকে বেশি সংকুচিত থাকে।

এ্যাজমা সম্পর্কে বাংলাদেশের সম্প্রতি কোন সমীক্ষা হয়নি। তবে ১৯৯৯ সালে প্রথম জাতীয় জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশ এ্যাজমার রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ যা তখনকার মোট জনসংখ্যার . শতাংশ। এর মধ্যে শতকরা ভাগ এ্যাজমা রোগীর বুকে সব সময় শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়। শতকরা . ভাগ রোগী উপলব্ধি করে তারা এ্যাজমায় আক্রান্ত এবং চিকিৎসকদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে . ভাগ এ্যাজমা রোগী। দুঃখজনক হলেও সত্য ৮০% এ্যাজমা রোগী নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করে না। এ্যাজমার আর্থ সামাজিক প্রভাব মারাত্মক, বিশেষ করে এ্যাজমায় আক্রান্ত হলে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, ঘন ঘন হাসপাতালে যাতায়াত এবং হাসপাতালে ভর্তি ইত্যাদি। এতে একদিক যেমন রোগীকে পর্যাপ্ত অর্থ দন্ড দিতে হয় তেমনি অন্যদিকে তার শারীরিক কষ্ট বৃদ্ধি পায়।

 

এ্যাজমা কি?

এ্যাজমায় মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যে বর্তমান বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভুত উন্নতির পরেও এখন পর্যন্ত এ্যাজমা কোন স্বীকৃত সংজ্ঞা বা কারণ জানা যায়নি। এ্যাজমা রোগের কোনো বিশ্ব স্বীকৃত সংজ্ঞা না থাকলেও এটা বলা যায় যে, এ্যাজমা প্রধানত শ্বাসনালীর পুরাতন প্রদাহ এবং এলার্জি ঘটিত একটি অসুখ। চিকিৎসায় পরিবর্তনশীল, শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা, বুকে শোঁ শোঁ শব্দ, কাশি, বুকে চাপা ধরা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি থাকলে তাকে এ্যাজমা রোগী হিসেবে গণ্য করা হয়। বুকে হঠাৎ পানি জমা, তীব্র শ্বাসকষ্ট, সিওপিডি' তীব্র আক্রমণ, বুকে বাতাস জমা, নিউমোনিয়া, রক্তের মাধ্যমে বুদ্বুদ বা ময়লা জাতীয় কোন বস্তুর ফুসফুসের প্রবেশ, হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট, বাইরের কোনো বস্তুর ফুসফুসে প্রবেশ, ফুসফুসের কোনো অংশে কার্যকারিতা লোপ পাওয়া, বাকযন্ত্র ফুলে যাওয়া, রক্তের অম্লের পরিমাণ বৃদ্ধি (এসিডোসিস), মানসিক কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের আধিক্য, অনেকদিন ধরে হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা হ্রাস, হৃদযন্ত্রের মাংসপেশিতে রক্ত স্বল্পতা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমুনারি ডিজিজ (সিওপিডি), পুরানো এ্যাজমা, শ্বাসনালীতে ক্যান্সার, ফুসফুসের ভিতর বাতাস ধারণকারী কুঠুরি সমূহের মাঝের টিস্যু সংকুচিত হওয়া, বাইরে থেকে ফুসফুস অনুপ্রবিষ্ট এলার্জিজনিত কারণ, বাইরে থেকে ধুলিকণার মতো ছোট ছোট পদার্থের ফুসফুসে অনুপ্রবেশ, ফুসফুসে বেশি পরিমাণ পানি জমা ইত্যাদির কারণে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে।


এ্যাজমা রোগ নির্ণয়

রোগের বর্ণনা এবং লক্ষণাদি বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে সাধারণত এ্যাজমা রোগের সনাক্ত করা হয়। ফুসফুসের শক্তি পরীক্ষা এ্যাজমা রোগ নির্ণয় অন্যতম একটি উপায়। দুই ভাবে এটি করা যায়। এর মধ্যে একটি হলো ফুসফুসের ভাইটাল ক্যাপাসিটি পরীক্ষা অর্থাৎ গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণের পর রোগী কতটা শ্বাস ছাড়তে পারে তা পরীক্ষা করে দেখা। সংক্ষেপে একে পিইএফ বলে। অন্যটি হলো সেকেন্ডে ফুসফুসে ফোর্সড এক্সপিরেটরি ভলিউম অর্থাৎ গভীর ভাবে শ্বাস গ্রহণের পর রোগী হঠাৎ কতটা শ্বাস ত্যাগ করতে পারে তা পরীক্ষার করে দেখা। সংক্ষেপে একে এফইভি১ বলে। স্পাইরোমিটার এবং এফইভি১ পিক ফ্লোমিটার ব্যবহারের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। স্পাইরোমিটার পাওয়া না গেলে রোগীর অবস্থা নির্ণয়ে শুধু পিক ফ্লোমিটার ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতি এতই সহজ যে, রোগী নিজে নিজেও পিক ফ্লোমিটারের সাহায্যে নিজের অবস্থান নির্ণয় করতে পারবে। স্পাইরোমিটারের পরীক্ষায় যদি শতকরা 20 ভাগের বেশি ওঠা নামা করে তবে এ্যাজমা আছে বলে ধরে নিতে হবে। বেশি উঠানামার উপর রোগের তীব্রতা নির্ভর করে। কর্টিকোস্টায়েড নামক এক ধরনের ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে এটা নির্ণয় করা যায়। সাধারণত এ্যাজমা রোগীর ফুসফুসে স্বাভাবিক ক্রিয়া কমে যায়। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ টেস্টের মাধ্যমে শ্বাসনালীর প্রতিক্রিয়া বুঝা যায়। এ্যাজমা নির্ণয় অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে এলার্জির মান নির্ধারণ, বুকের এক্সরে এবং শ্বাসনালীতে ইস্নোফিল নামক রক্ত কণিকা উপস্থিত নির্ণয়।

 

ব্যবস্থাপনা: 

এ্যাজমা রোগ ব্যবস্থাপনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সেই সব ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীকে রোগের উপসর্গ মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যেসব ঔষধের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং যা প্রয়োজনে বাড়ানো কমানো যায়। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পর্কে রোগীকে সচেতন করতে হবে। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতির ফলে কার্যকরভাবে এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো অনেক ঔষধ আবিষ্কৃত হয়েছে।এছাড়া বর্তমানের নানা ধরনের ইনহেলার (যে ঔষধ শ্বাসনালীর সাহায্যে গ্রহণ করা হয়) আবিষ্কৃত হওয়ায় এ্যাজমা চিকিৎসা অনেকটা সহজ হয়েছে। তবে ইনহেলার সম্পর্কে জনমনে একটা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন একবার ইনহেলার নেয়া শুরু করলে এটা আর কখনো বন্ধ করা যায় না। এবং এর ফলে এ্যাজমা কখনো ভালো হয় না। এই ধারণা একেবারে সঠিক নয়। মুখ দিয়ে খেতে হয় এমন যেকোনো এ্যাজমা ঔষধের তুলনায় ইনহেলার অনেক দ্রুত কাজ করে এবং ইনহেলারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অতি নগণ্য। কোনো কোনো ইনহেলারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। এ্যাজমা চিকিৎসার অর্থ শুধু ঔষধ নির্ভরতা নয়, এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে রবি তার পরিবারের অংশগ্রহণ একান্ত জরুরি।

 

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki


ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি


এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ক্রমিক ঔষধ নির্ভর চিকিৎসা :

প্রথম ধাপ: মাঝে মাঝে এ্যাজমায় আক্রান্ত (ইন্টারমিটেন্ট এ্যাজমা) রোগীদের জন্য তেমন কোনক ওষুধ প্রয়োজন হয় না। তাদের এ্যাজমার লক্ষণ দূর করার জন্য বিটা এগেস্টিং যথেষ্ট।

দ্বিতীয় ধাপ: সব সময় দেখা দেয় এমন মৃদু ধরণের এ্যাজমা চিকিৎসায় স্বল্পমাত্রার কর্টিকোস্টারয়েড ঔষধ (যা নিশ্বাসের মাধ্যমে নিতে হয়) দেওয়া হয়। এছাড়া কখনো কখনো সোডিয়াম ক্রমগ্লাইকেট, নিডোক্রমিল লিউকোট্রিন রিসেপ্টর এন্টাগেনিস্ট দিয়েও চিকিৎসা করা হয়।

তৃতীয় ধাপ: সব সময় দেখা দেয় এমন মধ্যম আকারের এ্যাজমা চিকিৎসায় নিম্ন মাত্রার কর্টিকোস্টারয়েডের সাথে দীর্ঘ মেয়াদি বিটা এ্যাগেনিস্ট দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে কখনো কখনো নিঃশ্বাসের সাহায্যে নিতে হয় এবং নিম্ন মাত্রার আইসিএস প্লাস, থিওফাইলিম এবং জেলিউটন চিকিৎসা দেয়া হয়।

চতুর্থ ধাপমধ্যম থেকে তীব্র আকারে এ্যাজমা চিকিসায় নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নিতে হয় এমন মধ্যম ধরনের কর্ডিকোস্টারয়েডের লিউকোট্রিন রিসেপ্টর এ্যাগোনিস্ট দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর পরিবর্তে অনেক সময় মধ্যম ধরনের কর্টিকোস্টারয়েডের সাথে লিউকোট্রিন রিসেপ্টর এ্যাগোনিস্ট, থিওফাইলিন অথবা জেলিউটন দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

পঞ্চম ধাপ: সব সময় এমন তীব্র আকারের এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নেয়া হয় এমন উচ্চমাত্রার কর্টিকোস্টারয়েডের সাথে লিউকোট্রিন রিসেপ্টর এ্যাগোনিস্ট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

ষষ্ঠ ধাপ: সব সময় মনে হয় তীব্র আকারের এ্যাজমা চিকিৎসা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নিতে হয় এমন উচ্চ মাত্রার কর্টিকোস্টারয়েডের সাথে লিউকোট্রিন রিসেপ্টর এ্যাগোনিস্টলিউ এবং এর সাথে মুখ দিয়ে খাওয়ার যোগ্য কর্টিকোস্টারয়েড দেয়া হয়।

উপসংহার: এ্যাজমাএকটি ক্রনিক অসুখ। আপনা আপনি এই রোগ ভালো হয়ে যাবে এটা আশা করা যায় না। এ্যাজমায় দীর্ঘদিন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। কারণে রোগী তার পরিবার সদস্যবৃন্দ (যারা সব সময় রোগীর কাছে থাকে) এবং চিকিৎসকের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া থাকা দরকার। যেহেতু এ্যাজমা একটা ক্রনিক রোগ, এই রোগের কর্মক্ষমতা লোপ পায় এবং কখনো কখনো রোগী মৃত্যুবরণ করতে পারে। সেহেতু সঠিক সময়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা করানোই শ্রেয়। স্বীকৃতিহীন কোনো চিকিৎসা অথবা দেশীয় পদ্ধতিতে এ্যাজমা চিকিৎসা গ্রহণযোগ্য নয়। এসব পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেয়া হলে এ্যাজমা আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে এবং রোগীর কষ্ট বৃদ্ধি পায় এমনকি রোগীর কর্মক্ষমতা হারাতে পারে। কখনো কখনো রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তীব্রভাবে এ্যাজমায় আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাই উত্তম।


আরো পড়ুন যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশি

 এ্যাজমা কি || ডাঃ আবিদা সুলতানা || What is asthma? || Dr. Abida Sultana

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

No comments

Powered by Blogger.