যক্ষ্মারোগীর উৎস || Source of Tuberculosis || Dr. Abida Sultana
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের ডটস পদ্ধতির চিকিৎসা শুরুর পর এ পর্যন্ত কয়েক লক্ষ
যক্ষ্মারোগী নিরাময় লাভ করলে প্রতিবছর নিবন্ধিত হচ্ছে
প্রায় দেড় লাখ নতুন যক্ষ্মারোগী। এসব যক্ষ্মারোগী আসছে কোথা থেকে? জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) এর বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা
যায় মোট নিবন্ধিত রোগীর মাত্র সাড়ে আঠারো শতাংশ নিবন্ধিত হয় আরবান এলাকায় কিন্তু চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রাপ্তির সুবিধা
বিবেচনায় আরবান এলাকায় এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি রোগী নিবন্ধিত হওয়ার কথা। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে কোয়ালিফাইড চিকিৎসকের সংখ্যা ৫০০০ (প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৫৪ জন)। এরা
বছরে প্রায় ৭০ হাজার যক্ষ্মারোগীর চিকিৎসা করেন। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য বড় শহরে কোয়ালিফাইড
চিকিৎসক এবং তাদের চিকিৎসিত যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা হিসেবের মধ্যে আনলে এই সংখ্যা আরও
বৃদ্ধি পাবে। সমীক্ষা অনুযায়ী ঢাকা শহরের নন কোয়ালিফাইড চিকিৎসকের (হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, ফার্মাসিস্ট ও
গ্রাম্য ডাক্তার) সংখ্যা প্রায় ৬০০০ (প্রতি ওয়ার্ডে ৬৪ জন)। এদের এক তৃতীয়াংশ
চিকিৎসক যক্ষ্মারোগীর চিকিৎসা করেন সে সম্পর্কে
কারো কাছে কোন সঠিক তথ্য নেই। এসব চিকিৎসকের (কোয়ালিফাইড ও নন-কোয়ালিফাইড)
চিকিৎসিত যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা একত্র করলে যে সংখ্যা
দাঁড়াবে সেটা কোনো ভাবেই সরকারি রেজিস্টারে নিবন্ধিত রোগীর চেয়ে কম নয়। সরকারি খাতে শক্তিশালী রেকর্ডিং, রিপোর্টিং ও
ফলোআপের ব্যবস্থা থাকার পরও যদি মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীর সংখ্যা ৩.৬ ভাগ (নতুন রোগীর ক্ষেত্রে) এবং ১৯ ভাগ
(পুনঃ চিকিৎসিত রোগীর ক্ষেত্রে) হয় তবে প্রাইভেট খাতে, যেখানে রেকর্ডিং, রিপোর্টিং ও ফলোআপের ব্যবস্থা নেই সেখানে
মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট রোগীর সংখ্যা যে অনেক বেশি হবে তা অনুমান করতে কষ্ট
হয় না। একই কারণে প্রাইভেট খাতে রোগীর চিকিৎসার সফলতার হার সম্পর্কে ও নিশ্চিত
করে কিছু বলা যায় না। এছাড়া প্রাইভেট খাতে প্রতিবছর যে বিপুল
সংখ্যক যক্ষ্মারোগীর শনাক্ত হয় তাদের শেষ পরিণতি কি হয় তা কেউ বলতে পারে না।
অনেক যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞদের মতে দুই মাস ওষুধ খাওয়ার পরে একটু সুস্থ বোধ করায় এসব
রোগী সিংহভাগই আর নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে ফিরে আসে না। রোগীর রেকর্ডিং এর ব্যবস্থা
না থাকায় চিকিৎসকের পক্ষে ও এদের ফলোআপ করা সম্ভব হয় না। এদের অনেকেই পুনরায়
অসুস্থ হয়ে পর্যায়ক্রমে সরকারের চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে নাম লেখায়। বাকিরা হয়তো
প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারদের দ্বারস্থ হয়। এভাবেই এরা চক্রাকারে প্রাইভেট
প্র্যাকটিশনারদের কাছ থেকে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে অথবা সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র
থেকে প্রাইভেট প্রাকটিশনারদের মাঝে ঘুরতে থাকে।
যে কারণে ১৯৯৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত কয়েক লক্ষ যক্ষ্মারোগী নিরাময় লাভ করলে ও এর
সঠিক প্রতিফলন কোথাও দেখা যাচ্ছে না। উল্টো প্রতি বছর প্রায় লাখ দেড়েক নতুন
যক্ষ্মারোগী নিবন্ধিত হচ্ছে। যে কারণে গত ১৮-২০ বছর ধরে (১৯৯৩-২০২১) হাই টিবি
বার্ডেন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ধারাবাহিকভাবে ৫ থেকে ৬ নম্বরে উঠানামা
করছে। এর কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।
ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি
এছাড়া সরকারি যক্ষ্মা হাসপাতাল থেকে যেসব রোগীকে ঔষধ সংগ্রহের জন্য তাদের
নিকটবর্তী সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে তারা সেখানে গেল কি না, গিয়ে থাকলে সেখান থেকে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করছে কি না, তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। ফলে এসব রোগীর ভাগ্যে কি ঘটছে তাও
কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। মোটকথা প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া এই চক্রের
বাইরে আসা একেবারে অসম্ভব। শহরাঞ্চলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কোয়ালিফাইড / নন কোয়ালিফাইড চিকিৎসক নির্বিশেষে সব প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারকে
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এনে জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণের
মাধ্যমে প্রাইভেট খাতে রোগীর নিবন্ধন রেকর্ডিং, রিপোর্টিং ও ফলোআপের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা না করা পর্যন্ত বর্তমান অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না। একদিকে রোগীর
চিকিৎসা হবে আর অন্যদিকে ফলোআপের অভাবে রোগীরা পুনরায় ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হয়ে
ফিরে আসবে। এটাই চলতে থাকবে।
No comments