যক্ষ্মা নিরাময়ে ঔষধের কোনো বিকল্প নেই || There is no alternative to medicine in the treatment of tuberculosis || Dr. Abida Sultana
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহযোগিতায় এসব
ঔষধ এখন বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। সব ঔষধই এখন পৃথিবীর
বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের হাতের নাগালে।
যক্ষ্মার সর্বাধুনিক ঔষধ আবিষ্কারের ফলে যক্ষ্মার চিকিৎসার মেয়াদ ১২-২৪ মাসের
স্থলে বর্তমানে ৬ থেকে ৮ মাসে নেমে এসেছে। এই চিকিৎসা ব্যবস্থা নাম শর্ট কোর্স
কেমোথেরাপি বা স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ওষুধ
সক্রিয় ও সুপ্ত দুই ধরনের যক্ষ্মা জীবণুর উপরেই সমান ভাবে কাজ করে। এর ফলে
যক্ষ্মার চিকিৎসা সংক্রান্ত পূর্বের প্রচলিত সমস্ত ধ্যান ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে
গেছে। এখন যক্ষ্মা হলে রক্ষা আছে।
ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি
যক্ষ্মা হলে ভালো ভালো পুষ্টিকর খাবারে প্রয়োজন নেই, জরুরি অবস্থা যেমন অনবরত রক্তক্ষরণ, প্রচন্ড
শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ছাড়া রোগীদের জন্য অফুরন্ত বিশ্রামের ও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই রোগীদের সাগরের বা পাহাড়ে চূড়ায় অবস্থিত স্বাস্থ্য
নিবাসে পাঠানো। রোগীদের জন্য সাধারণ খাবারই যথেষ্ট। রোগীরর অবস্থা খুব কাহিল না হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। সাধ্যমত কাজকর্ম করতেও কোন বাধা নেই। সব থেকে বড় প্রয়োজন রোগের ঔষধ এবং চিকিৎসক ও রোগীর সহযোগিতা। এখন যক্ষ্মার চিকিৎসা মানে জীবাণু ও ঔষধের যুদ্ধ। যতদিন শরীরে যক্ষ্মা জীবণু থাকবে ততদিন ওষুধ খেতেই হবে। একারণে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার জন্য রোগের ধরন ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
যক্ষ্মা রোগীর নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ৬ থেকে ৮ মাস ঔষধ খেতে হবে।
তবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ ওষুধ খাবার পর রোগী অনেক সুস্থ বোধ করে এবং রোগের
অধিকাংশ উপসর্গ ও লোপ পায়। তখন অনেক রোগী মনে করেন আমি ভালো হয়ে গেছি। চিকিৎসকের
পরামর্শ ছাড়া তারা ঔষধ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রোগীর
এই সুস্থতা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। অচিরেই সব লক্ষণ সহ রোগটি তীব্র আকারে ফিরে
আসে। রোগীর এই ভুলের জন্যই যক্ষ্মা প্রাথমিকভাবে ওষুধগুলো তার চিকিৎসার আর কাজে
আসে না। আরো শক্তিশালী ও দামি ওষুধ দিয়ে তাদের চিকিৎসা করতে হয়। ফলে চিকিৎসার
মেয়াদ ও খরচ দুটাই বেড়ে যায়। এতে রোগী, রোগীর পরিবার
ও আশপাশের লোকজনের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ এই রোগের নিকট থেকে যারা যক্ষ্মা
আক্রান্ত হবে তাদের চিকিৎসা ও প্রাথমিক ঔষধ দিয়ে আর করা যাবে না। তাদের চিকিৎসা
করতে ও শক্তিশালী এবং ব্যয়বহুল ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
এ কারণেই যক্ষ্মা চিকিৎসা অন্যান্য রোগের চিকিৎসা চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের।
বেশিরভাগ রোগের ক্ষেত্রে উপসর্গ নিরাময় হলে আমরা তাকে রোগমুক্ত বলি কিন্তু
যক্ষ্মা রোগের বেলায় উপসর্গ না থাকলে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ওষুধ খেতে হয়।
কারণ যক্ষ্মা রোগীর শরীরে যত জীবাণু প্রবেশ করে সেগুলোকে সম্পন্ন ধ্বংস করতে ৬
থেকে.৮ মাস সময় প্রয়োজন। এ কারণেই চিকিৎসকের রোগে ধরন অনুযায়ী ৬ থেকে ৮ মাস
চিকিৎসা চালিয়ে যান।
যক্ষ্মা হলে আপনার দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা
হতেই পারে। অসুস্থ হলে সকলের মনের অবস্থা খারাপ হয়।
আপনার মনের অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন এ কথা নির্জলা। সত্য আপনাকে বাঁচতে হলে
ঔষধই আপনার একমাত্র সম্বল। যক্ষ্মা রোগের
চিকিৎসা মানে রোগের ধরন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ক্রমাগত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত
ঔষধ সেবন। এর কোন বিকল্প নেই। কিছুদিন খেয়ে ঔষধ বন্ধ করে দেয়া অথবা মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণ ঔষধ খাওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনার নিজের, আপনার পরিবার
ও আপনার আশেপাশের লোকজনের ভোগান্তি বৃদ্ধি করা। যক্ষ্মা হলে নিয়মিত ও সঠিকভাবে
ঔষধ না খেয়ে নিজের ও অন্যের ভোগান্তি বৃদ্ধি করার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি।
বিনামূল্যে যক্ষ্মা সর্বাধুনিক ঔষধ ও রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা এবং যক্ষ্মা
সংক্রান্ত সব আধুনিক জ্ঞান আমাদের করায়ত্ত হওয়ার পরও বাংলাদেশের প্রতি বছর এখনো
সাড়ে তিন লাখ লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৬৫ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে। এটা কি শুধু সচেতনতার অভাব? না এর সাথে অন্য কিছু জড়িত? তা খুঁজে
দেখার সময় এসেছে বলে মনে হয়।
যক্ষ্মা নিরাময়ে ঔষধের কোনো বিকল্প নেই || ডাঃ আবিদা সুলতানা
There is no alternative to medicine in the treatment of tuberculosis || Dr. Abida Sultana
আর্টিকেলটি
ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
No comments