Header Ads

আয়ু বাড়াবেন? নিয়মিত খান 'ওমেগা ৩' || Extend life? Eat Omega 3 regularly || Dr. Abida Sultana

 

আয়ু বাড়াবেন? নিয়মিত খান 'ওমেগা ৩' || ডাঃ আবিদা সুলতানা


আজকাল প্রায় শোনা যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তার কথা। কিন্তু আসলে কি এই ফ্যাটি অ্যাসিড? কেনই বা খেতে হবে ওমেগা-৩? উপকারিতা কি কি? এসবের উত্তর জানা নেই অনেকেরই।

"ওমেগা-৩" এর নাম শুনেছেন কিন্তু বিস্তারিত জানেন না এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসা শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট ও স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের অনেকেরই অবশ্য এটা জানা, 'অতি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড' মানুষের শরীরের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় উপাদান আমাদের মস্তিষ্কে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই এই ফ্যাটি অ্যাসিড।

সেল মেমব্রেন, হরমোন, সিগনালিং প্রভৃতি তৈরিতে ফ্যাটি এসিড এর গুরুত্ব অনেক। উপকারী এই ফ্যাটি অ্যাসিড দুই ভাগে ভাগ করেছেন বিজ্ঞানীরা - অতিপ্রয়োজনীয় ও স্বল্প প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড। এদের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডের অধিকাংশই মানুষের শরীরে নিজে নিজে তৈরি হতে পারে না। খাবারের থেকে গ্রহণ করতে হয় এবং এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এদিকে স্বল্প প্রয়োজনীত ফ্যাটি এসিড বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর নিজে নিজেই তৈরি করতে পারে।

 

'ওমেগা-৩' কী?

ওমেগা-৩ হলো এক ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, সম্পৃক্ত চর্বি হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তেল চর্বিসহ খাবার একটা বয়সের পর সেই কারণে খেতে মানা। কিন্তু অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেতে বাধা নেই, বরং এটি রক্তের উপকারী চর্বির পরিমাণ বাড়ায় এবং দেহের নানা উপকার করে। প্রকৃতিতে কয়েক ধরনের ওমেগা-৩ চর্বি আছে। এর মধ্যে 'আলফা লিনোলেইক অ্যাসিড' পাওয়া যায় কিছু উদ্ভিজ্জ খাবার বা তেলে। অন্যদিকে সামুদ্রিক খাবারে পাওয়া যায় এবং 'ইসকো পেন্টানোয়িক অ্যাসিড এবং 'ডেকোসা হেক্সানোয়িক অ্যাসিড'

আমাদের খাদ্যের প্রধান উপাদান তিনটি। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও চর্বি। এর মধ্যে চর্বির প্রধান কাজ হলো দেহের শক্তি জোগানো। চর্বি থেকে সমপরিমাণ কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিনের চেয়ে দ্বিগুনের ও বেশি শক্তি মেলে। শরীরের চর্বি আবার তিন ধরনের ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল আর ফসফোলিপিড। এদের মধ্যে আবার দেহে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি হয় তিনটি ফ্যাটে অ্যাসিডের সঙ্গে গ্লাইসেরল মিলে।

স্যাচুরেটেড বা সম্পৃক্ত অ্যাসিড দিয়ে তৈরি চর্বি শরীরে কোলেস্টরের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ধমনীর ভেতরের গায়ে লেগে যায়। এতে ধমনীর ক্রমশ ছোট হয়ে আসে ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। দুধ, ঘি, মাংস, চকলেট, ক্রীম, ডিম ইত্যাদি সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। এই সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কঠিন আর অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড গুলো তরল হয়।

মোনোআনস্যাচুরেটেড চর্বি পাওয়া যায় সমস্ত ধরনের বাদাম, জলপাই তেল এবং ক্যানোলা তেলে। মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের খারাপ কোলেস্ট্রল কমায়। তাই এর ব্যবহার নিঃসন্দেহে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে কোলেস্টেরল জনিত ধমনির রোগ প্রতিহত করে। পলি আনস্যাচুরেটেড চর্বি পাওয়া যায় সয়াবিন, সূর্যমুখী তেল, ভুট্টা ইত্যাদিতে।

ওমেগা-৩ এর মত ওমেগা-৬ ও অতিপ্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। খাদ্যে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাত ও রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে খাদ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ বেশি, যা কমিয়ে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। তা নাহলে ওমেগা-৩ ও ৬ এর ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়ে দেখা দেবে নানাসব মারাত্মক ধরনের অসুখ।

ক্ষতিকর চর্বি বিভিন্ন ধরনের তেল তেলকে হাইড্রোজেন যোগ করে তৈরি হয় কঠিন চর্বি, যেমন- ডালডা, মার্জারিন ইত্যাদি। আর হাইড্রোজেন যোগ করা এই পদ্ধতি ফলে তৈরি হয় ট্রান্স ফ্যাট। তেলকে যদি উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করা হয় বা বারবার তেল গরম করে ব্যবহার করা হয় তাহলেও তার মধ্যে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। ট্রান্সফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায়, ফলে কোলেস্টেরলজনিত ধমনীর রোগ যেমন- করোনারী হার্ট ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদির সম্ভাবনা বাড়ে।

 

সংগ্রহ করুন ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি  https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki     https://www.youtube.com/@dr.abidasultana

সংগ্রহ করুন ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি


ওমেগা-৩ এর কাজ:

দেহ প্রদাহ কমানো, অপ্রয়োজনীয় রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিহত করা, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ানো,প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা জড়ো হওয়া কমানো, রক্তের কোলেস্ট্রল কমানো, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড কমানো, ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহিত করা, রক্তনালির পুরু হয়ে যাওয়া, রক্তনালীর প্রসারণে সহায়তা, শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ইত্যাদি।

 

যেসব রোগে ওমেগা-৩ উপকারী:

হৃদরোগ প্রতিরোধ, হৃৎপিণ্ডকে সবল রাখার, রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং কোলেস্টেরল কমিয়ে স্টোক প্রতিরোধ।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর, রক্তচাপ কমানো, মানসিক রোগ যেমন- ডিপ্রেশন, ডিমেনসিয়া, অ্যাটেনশান , ডেফিসিট হাইপা এক্টিভিটি ডিজর্ডার, শিশুদের সুস্থ সবল ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট প্রয়োজন ওমেগা ফ্যাট-৩ অ্যাসিড। ক্যান্সার প্রতিরোধ, রিউমাটয়েড আর্থ্রোইটিস ইত্যাদি।

 

ওমেগা-৩ পাওয়া যায় কোথায়:

উদ্ভিজ্জ তেল যেমন- তিসির তেল ও ক্যানোলা অয়েল ইত্যাদি তে পাওয়া যায় ওমেগা ৩-।যা আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয় না। এদিকে সয়াবিন তেলে ওমেগা-৬ এর পরিমাণ বেশি থাকায় এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করতে হবে। সামুদ্রিক মাছের তেল ওমেগা-৩ এর উৎকৃষ্ট উৎস। এছাড়া গবেষণায় পাওয়া গেছে দেশীয় মাছের মধ্যে রুই মাছ, পাঙ্গাস, মাগুর ইত্যাদি মাছের তেলে পাওয়া যাবে ওমেগা-৩ এতে। ওমেগা ৩ ও ৬ এর ভারসাম্য বর্ণনামূলকভাবে সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান। বীজ জাতীয় খাবারের ও পাওয়া যায় ওমেগা-৩।

মাছের ডিমে ক্ষতিকর চর্বির সঙ্গে বেশ ভালো পরিমাণে থাকে ওমেগা-৩ । ১ চামচ মাছের ডিমের প্রায় ৩৪২ মিলিগ্রাম পরিমাণে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের বাদামে আছে ওমেগা ৩। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আছে ওয়ালনাট, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি বাদামে। শাকসবজি যেমন- পালংশাক, ব্রকলি, তিসির তেল, ক্যানকলা তেল, ওয়ালনাট ইত্যাদিতে যথেষ্ট পরিমাণে ওমেগা-৩ ফাটি অ্যাসিড থাকে। এ দিকে এক দিনে অতিরিক্ত ওমেগা-৩ (৩ গ্রামের অধিক) স্ট্রোকের মতো ভয়ঙ্কর রোগে ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই ওমেগা-৩ ও ৬ এর ভারসাম্য জেনে বুঝে খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

 

আরো পড়ুন   যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশি

আয়ু বাড়াবেন? নিয়মিত খান 'ওমেগা ৩' || ডাঃ আবিদা সুলতানা 
Extend life? Eat Omega 3 regularly Dr. Abida Sultana

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

No comments

Powered by Blogger.