Header Ads

যক্ষ্মার ঔষধের এলার্জি ও টক্সিসিটিজনিত প্রতিক্রিয়া ও এর প্রতিকার || Allergic and toxic reactions to tuberculosis drugs and their remedies || Dr. Abida Sultana

 

যক্ষ্মার ঔষধের এলার্জি ও টক্সিসিটিজনিত প্রতিক্রিয়া ও এর প্রতিকার || ডাঃ আবিদা সুলতানা


যে কোন ঔষধ ব্যবহারে এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া (এলার্জিক রিএ্যাকশন) দেখা দিতে পারে। তবে ওষুধের এই প্রতিক্রিয়া কিভাবে এবং কত ঘন ঘন হবে সেটা নির্ভর করে ব্যক্তি, দেশ ব্যবহৃত ঔষধের উপর। ঔষধের এই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যায়নি, তবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আঞ্চলিক পার্থক্যের পিছনে বংশগতি নিয়ন্ত্রক উপাদান (জেনেটিক ফ্যাক্টর), খাদ্যাভ্যাস (ফুড হেবিট) পারিপার্শ্বিক অবস্থা যেমন আবাসস্থল জলবায়ু (হাউসিং এন্ড ক্লাইমেট) প্রচলিত ঔষধসহ ইত্যাদির প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অন্যান্য ঔষধের মতো যক্ষ্মার ঔষধেও অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।

যক্ষ্মার ঔষধে এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার সাধারণ বহিঃপ্রকাশ ঘটে জ্বর এবং শরীরের চামড়ার উদগত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুসকুড়ি বা চুলকানির মাধ্যমে এবং প্রায়ই এই দুটো উপসর্গ একসঙ্গে দেখা দিতে পারে। এছাড়া জন্ডিসহ বা জন্ডিস ছাড়া লিম্পনোড স্ফীত, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া (ইসপ্লিনোমেগালে) এবং যকৃত স্ফীত (হেপাটোমেগালে) হতে পারে। অদ্ভুত এসব প্রতিক্রিয়া অবহেলা করলে বা এগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মস্তিষ্ক প্রদাহ (এনসেফ্যালোপ্যাথি) এবং অস্থিমজ্জার কার্যকারিতা (বোনম্যারো ডিপ্রেশন) হ্রাস পেতে পারে। যেহেতু অনেক সময় ঔষধের বিষক্রিয়াজনিত প্রতিক্রিয়া (ড্রাগ টক্সিসিটি) এবং অত্যাধিক সংবেদনশীলতার (হাইপারসেনসিটিভিটি) এর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে, সেহেতু অনেক সময় বিশেষজ্ঞরা চামড়ার অস্বাভাবিক প্রদাহ (এক্সফোলিয়েটিভ ডারমাটাইটিস) অথবা স্টিভেন্ট জনসন্স সিনড্রোমকে ঔষধের অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া বলে ধরে নেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঔষধের অত্যাধিক সংবেদনশীলতা (হাইপার সেনসিটিভিটি) চিকিৎসার প্রথম মাসেই দেখা দেয়। কিন্তু অন্যান্য প্রতিক্রিয়া বিশেষ করে চামড়ার উদগত ফুসকুড়ি চিকিৎসা শুরুর কয়েক মাস পরেও দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা চলাকালে যদি চার সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে জ্বর দেখা দেয় অথবা হঠাৎ জ্বর বৃদ্ধি পায় তবে এটাকে ঔষধের এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া বলেই ধরে নেওয়া উচিত অবশ্য যদি জ্বরের অন্য কোনো কারণ না থাকে।

এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া বা এলার্জিক রিএ্যাকশন ব্যবহৃত ওষুধের যে কোনো একটি বা একাধিক ঔষধে হতে পারে। ব্যবহৃত ঔষধে ধরনের এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে প্রথমেই জানা দরকার কোন বিশেষ ঔষধ বা ঔষধ গুলোর কারণে ধরনের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রথমে প্রদত্ত সবগুলো ঔষধ বন্ধ রাখতে হবে যতক্ষণ জ্বর চামড়ার উদগত ফুসকুড়ি ভালো না হয়। তবে শুধুমাত্র রোগের শারীরিক লক্ষণাদি দেখে এটা বোঝা সম্ভব নয় যে বিশেষ করে কোন ঔষধের কারণে এটা হচ্ছে। কারণ, এক বা একাধিক ঔষধের কারণেও এটা হতে পারে। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রথমে সব ঔষধ বন্ধ রাখতে হবে। ঔষধ বন্ধ করা ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যে জ্বর পড়ে যাবে। তবে চামড়ার উদগত ফুসকুড়ি  সম্পূর্ণ ভালো হতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। জ্বর ফুসকুড়ি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেলে ঔষধের পরীক্ষা (ড্রাগ টেস্ট) শুরু করতে হবে। জানা মতে যে ঔষধের সবচেয়ে কম প্রতিক্রিয়া হয় সেই ওষুধটি কম মাত্রায় দিয়েই প্রথম ড্রাগ টেস্ট শুরু করে দেখতে হবে এতে কোনো প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা এবং কোন ঔষধ বা ঔষধগুলোতে রোগীর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।

কোন ঔষধে রোগীর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না এটাই প্রথমে জানার চেষ্টা করা উচিত যাতে পরবর্তীকালে বিলম্ব ছাড়াই সেগুলো প্রয়োগ করা যায়। প্রদত্ত ঔষধের মাধ্যে যে ঔষধটায় সবচেয়ে কম প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা দিয়ে ড্রাগ টেস্ট শুরু করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রিফামপিসিন, আইএনএইচ, ইথামবুটাল পায়রাজিনামাইড দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে প্রথমে আইসোনিয়াজিড দিয়ে ড্রাগ টেস্ট শুরু করতে হবে। কারণ এই ওষুধটি সবচেয়ে কম বিষক্রিয়া সম্পন্ন (লেস টক্সিক) সংবেদনশীল (লেস সেনসিটিভ) রোগীর প্রতিক্রিয়ার ধরন এর বহিঃপ্রকাশ দেখে টেস্ট ডোজের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। রোগীর প্রতিক্রিয়ার ধরন যত বেশি হবে টেস্ট ডোজের পরিমাণ হবে তত কম। রোগীর হালকা প্রতিক্রিয়া হলে প্রথমে টেস্ট রোজ হবে স্বাভাবিক মাত্রার অর্ধেক। মধ্যম ধরনের (মডারেট) প্রতিক্রিয়া হলে স্বাভাবিক মাত্রা চার ভাগের একভাগ ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। যদি খুব বেশি প্রতিক্রিয়া ( সিভিয়ার রিএ্যাকশন) হয় তবে প্রথম টেস্ট হবে স্বাভাবিক মাত্রা ১০ ভাগের ভাগ। যে ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা শুরু করা হলো, রোগী যদি সেই ঔষধে বেশি সংবেদনশীল (হাইপারসেনসিটিভ) হয় তবে রোগীর জ্বর, চুলকানি বা চর্মগোত্রের ফুসকুড়ি দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে বৃদ্ধি পাবে। এই টেস্ট যদি কোন প্রতিক্রিয়া না হয় তবে পরবর্তীতে টেস্ট ডোজ হবে এর চেয়ে বেশি চেয়ে বেশি। অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া (সিভিআর রিএ্যাকশন) না হলে দ্বিতীয় ডোজ হবে প্রথম ডোজের দ্বিগুণ। অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া হলে মাঝামাঝি আর একটা টেস্ট ডোজ দিয়ে দেখা যেতে পারে। এই টেস্ট ডোজ দিয়ে যদি প্রতিক্রিয়া না দেখা দেয়, তবে ওই একই ডোজ অথবা তার যে কম ডোজ দিয়ে দেখা যেতে পারে।

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki  https://www.youtube.com/@dr.abidasultana 

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি


রোগী যদি প্রদত্ত চারটি ওষুধের যেকোনো একটিতে সংবেদনশীল বা হাইপারসেনসেটিভ হয় তবে অন্য তিনটি ঔষধ যথারীতি ব্যবহার করে যে ঔষধের বেশি সংবেদনশীল সেটাকে সহ্য ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, যে ঔষধি অতি আবশ্যকীয় অন্য ঔষধ চালিয়ে গিয়ে সেই ঔষধটিকে রোগী সহ্য ক্ষমতার মধ্যে আনার চেষ্টা করতে হবে। সময় এবং বাস্তবতা নিরিখে ১২ ঘন্টা পর পর টেস্ট ডোজ দেয়া যেতে পারে।

রোগী যদি প্রদত্ত কম্বিনেশন ডোজের তিনটি তেই সংবেদনশীল হয় তবে কোনো অবস্থায় রোগী যে ঔষধিতে সমবেদনশীল নয় শুধু সেটা প্রয়োগ করা যাবে না। সাথে যেকোনো একটি রিজার্ভ ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে তা না হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যক্ষ্মাজীবাণুগুলো সেই ওষুধেও রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, রোগীর ভিতরকার যক্ষ্মা জীবাণু যদি ইথামবুটাল, পায়রাজিনামাইড, রিফামপিসিনে সংবেদনশীল হয়, তবে রোগীকে অসংবেদনশীল করতে শুধুমাত্র আইএনএইচ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, তাহলে জীবাণুর অতিসত্তরই আইএনএইচ রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাবে। তবে চিকিৎসায় যাতে ছেদ না পড়ে সেজন্য রোগীকে দ্রুত অসংবেদনশীল করতে স্টেরয়েড কাভার দিয়ে সম্পূর্ণ ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর ব্যবহার যত তাড়াতাড়ি বন্ধ করা যায় ততই ভালো। সাধারণত তিন মাসের মধ্যে স্টেরয়েড ব্যবহার শেষ করাই উত্তম।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার যে, যক্ষ্মার চিকিৎসা শুধু করা হলে অবিরাম চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু ঔষধের এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া হলে সেটা রোধ করার জন্য যে কখনো কখনো ঔষধ বন্ধ রাখতে হয়, আমাদের অধিকাংশ চিকিৎসক সেটা জানলেও খুব কম চিকিৎসক ঔষধ বন্ধ রাখেন না ফলে অনেক সময় ঔষধের এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য ওষুধে এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে নিবন্ধে বর্ণিত উপায়ে চিকিৎসা নিলে এক দিকে প্রতিক্রিয়া যেমন বন্ধ করা যায় অন্যদিকে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করা যায়। চিকিৎসক যদি রোগীর এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া নির্ণয় করতে না পারে তবে রোগীকে সাথে সাথে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠানোই শ্রেয়।

যক্ষ্মার ঔষধ এলার্জি জনিত প্রতিক্রিয়া ছাড়া বিষক্রিয়া জনিত প্রতিক্রিয়া হতে পারে।এলার্জি জনিত প্রতিক্রিয়া ঔষধের পরিমাণ এর উপর নির্ভর করে না, অল্প পরিমাণ ওষুধ ব্যবহারেও এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু যক্ষ্মার ঔষধের বিষক্রিয়াজনিত প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভাবে ঔষধের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। যক্ষা চিকিৎসা ব্যবহৃত এক এক ঔষধে এক এক ধরনের বিষক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন আইএনএইচ হেপাটাইটিস হয় যার ফলে লিভার বড় হয়ে যেতে পারে এবং জন্ডিস আকারে প্রকাশ পেতে পারে। রিফামপিসিন যখন দিন বা দিন পর পর ব্যবহৃত হয় তখন এর বিষক্রিয়া দেখা যায় এবং এর ফলে যকৃতের প্রদাহ খাদ্যনালীর অসুখ দেখা দেয়। ইথামবুটালের বিষক্রিয়ায় চোখের পিছনের দিকে স্নায়ুপ্রদাহ দেখা দেয়, ফলে ধীরে ধীরে চোখ ঝাঁপসা হয়ে যায়। কালার ব্লাইন্ডনেস দেখা দেয় এবং ফিল্ড অফ ভিশন সংকুচিত হয়ে যায়। ব্যবস্থা না নিলে শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব বরণ ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

পায়রাজিনামাইড বিষক্রিয়ায় যকৃতের প্রদাহ শরীরে বিশেষ করে পায়ে ব্যথা হয়।

ইনজেকশন স্ট্রেপটোমাইসিনের বিষক্রিয়ার ফলে রোগী বধির হয়ে যেতে পারে। শরীরে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এবং মাথা ঘুরতে থাকে। উপরে উল্লেখিত ঔষধ সমূহকে যক্ষ্মার ফার্স্ট লাইন ড্রাগ বলা হয়। এছাড়াও যক্ষ্মার সেকেন্ড লাইন ড্রাগ হিসেবে আরো অনেক ওষুধ ব্যবহৃত হয়। এসব ঔষধের বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে যে কারণে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসক এসব ঔষধের প্রতিক্রিয়া নির্ণয় করতে না পারলে রোগীকে সাথে সাথে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

 

 আরো পড়ুন যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশি

 

যক্ষ্মার ঔষধের এলার্জি ও টক্সিসিটিজনিত প্রতিক্রিয়া ও এর প্রতিকার 
Allergic and toxic reactions to tuberculosis drugs and their remedies 


আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

সংগ্রহ করুন ডাঃ আবিদা সুলতানা স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি

No comments

Powered by Blogger.