কেমন করে বুঝবেন আপনার যক্ষ্মা হলো কি না? || How do you know if you have tuberculosis? || Dr. Abida Sultana
কেমন করে বুঝবেন আপনার যক্ষ্মা হলো কি না?
যক্ষ্মা দুই ধরনের। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় এদের বলা হয় Pulmonary TB বা ফুসফুসের যক্ষ্মা এবং Extra-Pulmonary TB বা ফুসফুসের
বহির্ভূত যক্ষ্মা। তবে ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে
বেশি। মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৮৫ ভাগে ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগী। এই ফুসফুসের
যক্ষ্মা আবার দুই ধরনের। যথা স্পুটাম
স্মীয়ার পজেটিভ বা কফ জীবাণুযুক্ত যক্ষ্মা রোগী এবং স্পুটাম স্মীয়ার নেগেটিভ বা
কফজীবাণুমুক্ত যক্ষ্মারোগী। এই দুই গ্রুপের মধ্যে স্পুটাম স্মীয়ার পজেগিভ রোগীরাই মারাত্মক সংক্রামক।
এদের ফুসফুস থেকে নির্গত যক্ষ্মা জীবাণু বাতাসের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের
মাধ্যমে সুস্থ লোকের শরীরে প্রবেশ করে এবং নানা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার পর এদের
মধ্যে কেউ কেউ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার আওতায় আসেনি এমন একজন স্পুটাম
স্মীয়ার পজেটিভ রোগী বছরে একজন করে নতুন যক্ষ্মা রোগীর জন্ম দেয়। এভাবে সমগ্র কমিউনিটির মধ্যে যক্ষ্মা রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে জাতীয় যক্ষ্মা
নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে কফ পরীক্ষার উপর অধিক গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে কফে
জীবাণুযুক্ত যক্ষ্মা রোগীদের সহজে সনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় এনে রোগ ছড়ানোর পথ
বন্ধ করা যায়।
ফুসফুস ছাড়া শরীরের অন্য যেকোনো স্থানে যক্ষ্মা হতে পারে। শুধু চুল, হাতের নখ, এবং দাঁত ছাড়া। একে বলা হয় বা Extra-Pulmonary TB ফুসফুস বহির্ভূত যক্ষ্মা। গ্ল্যান্ড, কিডনি, অন্ত্র,হার্ট,জয়েন্ট,শিরদাঁড়া, নাক, চোখ, চামড়া এমনকি স্ত্রী- পুরুষের যৌনাঙ্গে এই
রোগ হতে পারে। তবে এই যক্ষ্মা একেবারেই কম সংক্রামক।
এ ছাড়া আরো দু ধরনের মারাত্মক যক্ষ্মা রয়েছে। এ দুটির মধ্যে ম্যানেঞ্জিয়ালটিবি ও মিলিয়ারি টিবি। সময় মত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে এ
রোগের মৃত্যু অনিবার্য। ম্যানেঞ্জিয়ার টিবিতে জ্বর হতে পারে। খাওয়ার অরুচি দেখা
দেয় ও বমি হতে পারে। মাথা ধরা, ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে, এমনকি রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবং খিঁচুনি হতে পারে। তবে বিসিজি টিকা
দেওয়ার কারণে এ ধরনের যক্ষ্মা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। মিলিয়ারি টিবিতে যক্ষ্মা রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া খুব
বেশি জ্বর, দুর্বলতা এবং ওজন হ্রাস হতে পারে।
যক্ষার লক্ষণ দুই ধরনের। যথা: স্থানীয় লক্ষণ ও সাধারণ লক্ষণ। শরীরের আক্রান্ত
স্থান ভেদে স্থানীয় লক্ষণের হের ফের হলেও সব যক্ষ্মার সাধারণ লক্ষণ অভিন্ন।
পালমুনারি টিবি বা ফুসফুসের যক্ষ্মার স্থানীয় লক্ষণঃ কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, গলা দিয়ে রক্তক্ষরণ। তবে গলা দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে যক্ষ্মা হয়েছে এমন ধারণা
ঠিক নয়। এটা নানা কারণে হতে পারে। কিন্তু কাশি এমন একটি উপসর্গ, যা ফুসফুসের যক্ষ্মায় কোনো না কোনো সময় হবে।
এক্সট্রা পালমুনারি টিবি বা ফুসফুস বহির্ভূত যক্ষ্মার স্থানীয় লক্ষণঃ শরীরে
অঙ্গ ভেদে এই লক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
গ্ল্যান্ড টিবিঃ গ্ল্যান্ড ফুলে যায়, লাল হয়ে উঠে এবং ব্যথা হয়। শরীরে বিভিন্ন গ্ল্যান্ডের মধ্যে সাধারণত ঘাড়ের
গ্ল্যান্ডগুলোতেই এই যক্ষ্মা বেশি হয়।
কিডনিঃ মাঝে মাঝে পেটের পিছনের দিকে কিডনির অবস্থানে ব্যথা হয়। প্রস্রাবের
সাথে রক্তপাত হতে পারে, তবে অনেক সময় তা খালি চোখে দেখা যায় না। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ও ঘনঘন প্রস্রাব হয়।
অন্ত্র ও খাদ্যনালীঃ ক্ষুদামন্দা, বদহজম, পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, পেটের মধ্যে
ভুট ভুট শব্দ, কখনো পাতলা পায়খানা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি। সাধারণ চিকিৎসা এগুলা উপশম হয় না।
অন্ডকোষ এবং এর আনুষাঙ্গিক অঙ্গঃ এপিডিডামিস, অন্ডকোষ ও এপিডিডামিস ফুলে যায়, ব্যথা হয়।
জয়েন্ট, হাড় ও শিরদাঁড়াঃ এগুলো ফুলে যায়, ব্যথা হয়, শিরদাঁড়া বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
মেয়েদের যৌনাঙ্গ, জরায়ু, ফেলোপিয়ান টিউব ও ওভারিঃ তলপেট ব্যথা হয়, দুই পাশে বেশি
ব্যথা হতে পারে এবং পেটে হাত দিলে অনেক সময় শক্ত কিছু অনুমিত হয়। এখানে একটি কথা
বিশেষভাবে বলা দরকার যে, যদি কোনো যুবতি মেয়ের কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ
মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তবে অনেক ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় তার জরায়ুতে যক্ষ্মা
হয়েছে। পরীক্ষার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সত্যে
পরিণত হয়। দুঃখের বিষয় এদের অনেকেই জীবনে আর কখনো মা হতে পারে না।
প্লুরাল ইফিউশন ও পেরি কার্ডিয়াল ইফিউশনঃ কখনো কখনো যক্ষ্মার কারমে ফুসফুসে অন্তঃ ও বহিরাবরণের
মধ্যে এক ধরনের তরল পদার্থ জমে এবং এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পানির মত দেখা যায়।
কখনো বা রক্ত অথবা দুধের মত দেখা যেতে পারে। একে বলা হয় প্লুরাল ইফিউশন এবং একই কারণে হৃৎপিণ্ডে ও এ ধরনের পদার্থ জমা হতে
পারে। এর নাম পেরিকার্ডিয়াল ইফিউশন। এর ফলে বুকে
ব্যথা, বুক ধরফর, শ্বাসকষ্ট, কাশি ও জ্বর হতে পারে। পানি জাতীয় পদার্থ বেশি জমা হলে শ্বাসকষ্ট এত তীব্র
হয় যে তখনই এটা বের করা না হলে মারাত্মক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
চামড়াঃ চামড়ায় যক্ষা হলে চামড়া ফুলে যায়, লাল হয়ে উঠে, ঘা হয় এবং কালো কালো দাগ পড়তে পারে। ঘা এর মাঝখানটা নিচু থাকে।
আগেই বলা হয়েছে শরীরে আক্রান্ত স্থান ভেদে যক্ষ্মা লক্ষণে তারতম্য থাকলেও সব যক্ষ্মার
সাধারণ লক্ষণ একই। যেমন - ওজন হ্রাস, ক্ষুধামন্দা, ঘুষে ঘুষে জ্বর, বিশেষ করে সন্ধ্যাকালীন সময়ে শরীর দিয়ে
দরদর করে ঘাম ঝরা, ক্লান্তি এবং ভালো না লাগা।
ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি
কোন সুস্থ লোকের শরীরে যক্ষ্মা জীবণু প্রবেশ করা তিন থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে
তার শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমনঃ খুব অল্প অল্প জ্বর, কারণ ছাড়াই চোখ দুটো একটু লাল হয়ে যাওয়া, শরীরের চাপ
কেন্দ্রে (প্রেসার পয়েন্ট) যেমনঃ কনুই, হাঁটু, কব্জি ইত্যাদি স্থানে ব্যথা যুক্ত লালচে দাগ ইত্যাদি।
এসব লক্ষণ আপনা আপনি ভাল হয়ে যেতে পারে।
পরিশেষে এটা বলা দরকার যে, কারও শরীরে যক্ষ্মার স্থানীয়ল ক্ষণ বা
সাধারণ লক্ষণ দেখা দিলে আর বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। কারণ এই অবস্থায় যে কোনো লোকের যক্ষ্মা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কেমন করে বুঝবেন আপনার যক্ষ্মা হলো কি না? || ডাঃ আবিদা সুলতানা
How do you know if you have tuberculosis? || Dr. Abida Sultana
আর্টিকেলটি
ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
আরো পড়ুন ধূমপান ছাড়ার কিছু কার্যকর খাবার
No comments