Header Ads

শ্বাসনালী ও ফুসফুসের টিউমার || Trachea and lung tumors || Dr. Abida Sultana

 

 

শ্বাসনালী ও ফুসফুসের টিউমার || ডাঃ আবিদা সুলতানা


বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম কারণ ফুসফুসের ক্যান্সার ক্যান্সারের প্রতি বছর ১৪ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয় এর মধ্যে ফুসফুসে ক্যান্সারে মারা যায় ১৮ শতাংশ মানুষ। ফুসফুসের ক্যান্সারে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা লক্ষ। বাকি প্রায় সাড়ে লক্ষ ৩০ হাজার মহিলা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী শতকরা ৭০ শতাংশই আক্রান্ত হওয়ার প্রথম বছরই মারা যায়। শতাংশের কম বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। ১৯৫০ সালের ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যুর হার পূর্বে তুলনায় তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের কোনো কোনক দেশে তামাক সেবন হ্রাস পাওয়ার ফলে ফুসফুসের ক্যান্সারের হার কিছুটা হ্রাস পেলে পূর্ব ইউরোপ সহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে ফুসফুসের ক্যান্সার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে কোনো কোনো স্থানে পুরুষের তুলনায় মহিলারাই ফুসফুসের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। স্তন ক্যান্সারের চেয়ে ফুসফুসের ক্যান্সারের মেয়েদের মৃত্যুর হার বেশি। ধারণা করা হয়, আগামী ১০ বছরে ফুসফুসে ক্যান্সারের মৃত্যুর হার আরও বৃদ্ধি পাবে। ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষ নারীর হার :১। উল্লেখ্য, ফুসফুসে যত টিউমার হয় তার ৯০ শতাংশের বেশি থাকে শ্বাসনালীতে এবং শ্বাসনালীতে অবস্থিত এসব টিউমারের ৯০ শতাংশ ই ক্যান্সার।


শ্বাসনালী ও ফুসফুসের টিউমার

তামাক সেবন ফুসফুসের ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সারের অন্যতম মূল কারণ। তবে তামাক সেবন ছাড়া অন্যান্য কারণে ক্যান্সার হতে পারে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য হলো বংশগত কারণ, শিল্পায়নজনিত দূষণ, জলবায়ু দূষণ, গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, খাদ্যের বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়া, পেশাগত ঝুঁকি যেমন:- সিলিকন, এজবেস্টস প্রভৃতি ধাতব শিল্পে কাজ করা ইত্যাদি। অনেক সময় অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে ক্যান্সার হতে পারে। শ্বাসনালী ফুসফুস ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন:- স্তন, কিডনি, জরায়ু, অন্ডকোষ, থাইরয়েড, যৌনাঙ্গ, পায়ুপথ, অন্ত্র, হাড়, ওভারী, যকৃত মস্তিষ্ক সহ নানা স্থানে ক্যান্সার হতে পারে।

শ্বাসনালীর ক্যান্সারে কোষভিত্তিক বিভাজন নিম্নরূপ :

. স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার - শতকরা ৩৫ ভাগ।

. এডিনোকারসিনোমা- শতকরা ৩০ ভাগ।

. ক্ষুদ্র কোষ (স্মল সেল) ক্যান্সারশতকরা ২০ ভাগ।

. বৃহৎ কোষ (লার্জ সেল) শতকরা - ১৫ ভাগ।

এদের মধ্যে ক্ষুদ্র কোষের ক্যান্সারই মারাত্মক। শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন- স্তন, কিডনি, জরায়ু, অন্ডকোষ, থাইরয়েড হাড়ের সারকোমার প্রাথমিক ক্যান্সার ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শ্বাসনালীর টিউমারের কারণে শ্বাসনালী অবরুদ্ধ হতে পারে। ফুসফুসের ক্যান্সার ফুসফুসের কেন্দ্র, আশেপাশের এলাকা অথবা ফুসফুসের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে।

ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ:

সাধারণ লক্ষণ : জ্বর, ক্ষুদা মন্দা, বমি বমি ভাব, ওজন হ্রাস, দুর্বলতা ক্লান্তিবোধ।

স্থানীয় লক্ষণ : ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ কাশি। অন্য জীবাণুর সংস্পর্শে আসলে কাশি হলুদ হয়। ধূমপায়ীরা সাধারণত যে ঢংয়ে কাশি দেয় তার চেয়েও কাশির ঢং আলাদা মনে হলে সেটাকে ফুসফুসের ক্যান্সার বলে সন্দেহ করা যায়। ধূমপায়ীদের কাশির সঙ্গে রক্তক্ষরণ হলে ফুসফুস ক্যান্সার বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বক্ষ আবরণীতে বেশি করে পানি জমে অথবা বড় আকারে টিউমারের কারনে শ্বাসকষ্ট হলেও ফুসফুসের ক্যান্সার বলে সন্দেহ করা যায়। টিউমারজনিত কারণে সংকুচিত শ্বাসনালী থেকে খসখসে আওয়াজ বের হলে ক্যান্সার বলে সন্দেহ করা যেতে পারে।

ফুসফুসের ক্যান্সার শরীরে অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়লে সে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো:- বক্ষ আবরণীতে ব্যথা, ঘাড় এবং বাহুতে ব্যথা, জন্ডিস(যকৃত আক্রান্ত হলে), হাড়ে ব্যথা (হাড় আক্রান্ত হলে), ঘাড়ের উপরিভাগে অবস্থিত নার্ভগ্রন্থি আক্রান্ত হলে চোখে সমস্যা হতে পারে। বামদিকে অবস্থিত বাকযন্ত্রের স্নায়ুতে চাপের কারণে কণ্ঠস্বর ভারী হতে পারে। বুকে অবস্থিত সুপিরিয়র ভ্যানাক্যাভা নামক শিরায় রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে শরীরের উপরিভাগ ফুলে যায়। খাদ্যনালী আক্রান্ত হওয়ার কারণে খাওয়ার সময় খাদ্যনালীতে ব্যথা অনুভূত হয়। ফুসফুসের ক্যান্সার মস্তিষ্ক কোষে ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এর প্রতিফলন ঘটতে পারে। যেমন হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া ইত্যাদি।

                          ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki  https://www.youtube.com/@dr.abidasultana

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি


ফুসফুসের ক্যান্সার শরীরে যে কোন স্থানে কেন্দ্রীভূত হলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো :

এ্যান্ড্রোক্রিন বা শরীরে রসবাহী বিভিন্ন গ্রন্থির প্রতিক্রিয়া ক্যান্সারের বিষক্রিয়ার ফলে এডিএইচ নামক হরমোন কমে যাওয়ার কারণে রক্তের সোডিয়াম কমে যায়। এসিটিএইচ নামক হরমোন নিঃসরণের ফলে কুশিং সিনড্রম বা মুখের আকার চাঁদের মতো গোল হয়ে যায়। রক্তের ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পায়। ক্যান্সারজনিত লক্ষণাদি (কারসিনয়েড সিনড্রম) দেখা দিতে পারে। এছাড়া পুরুষের স্তন বড় হয়ে যায়।

স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়াস্নায়ুঘটিত বিভিন্ন অসুখ যেমনহাত পা অবশ লাগা, আঙ্গুলের মধ্যে পীর পীর করা ইত্যাদি। মাংসপেশীর দুর্বলতা, পেশীতে ব্যথা ইত্যাদি। মস্তিষ্কের সেরিবেরাল নামক অংশের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। সর্ব শরীরের বেশি দুর্বল হয়ে পড়া। 

অন্যান্য প্রতিক্রিয়া : হাত পায়ের আঙ্গুলের মাথা ফুলে ড্রাম স্ট্রিকের মত (ঢাকের কাঠির) হতে পারে। কিডনি জড়িত হলে সমস্ত শরীর ফুলে যেতে পারে, চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। ইসনোফিল নামক রক্তের উপাদান বৃদ্ধি পেতে পারে।


চিহ্নসমূহ (সাইনস) :

প্রান্তিক চিহ্ন : রক্ত স্বল্পতা, ওজন হ্রাস, আঙ্গুলের মাথা ফুলে যাওয়া এবং গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া ছাড়াও চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুপরিয়র ভ্যানাকাভা (হার্টের উপরের দিকে অবস্থিত ভ্যানাক্যভা নামক ধমনী) বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে শরীরের উপরিভাগ থেকে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার ফলে শরীরের উপরিভাগ ফুলে যাওয়া।

ফুসফুসের চিহ্ন : টিউমারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফুসফুসে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। বক্ষ আবরণীতে পানি জমা। টিউমার পাঁজরের দিকে ছড়িয়ে পড়লে পাঁজরে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়া টিউমার ফুসফুসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে ফুসফুসে নানাবিধ পরিবর্তন ঘটতে পারে।


পরীক্ষা-নিরীক্ষা :

ফুসফুসের টিউমার সন্দেহ হলে নিম্নলিখিত পরীক্ষা সমূহ করা যেতে পারে যেমন:- বুকের এক্সরে, কমপ্লিট রক্ত পরীক্ষা (সিবিসি), বায়োপসির মাধ্যমে ফুসফুসের কোষ পরীক্ষা করে দেখা, কাশি পরীক্ষা ব্রঙ্কাসকপি করা। বক্ষ আবরণীতে পানি জমলে বুকের পানি পরীক্ষা করা। গ্ল্যান্ড স্ফীত হলে তা পরীক্ষা করে দেখা। ফুসফুসের আবরণীর বায়োপসি করা। সিটি গাইডেড বায়োপসি করা। এছাড়া লিভারের আলট্রাসনোগ্রাম, হাড়ের স্ক্যানিং, বেরিয়াম এক্স-রে করা যেতে পারে।


ফুসফুসের ক্যান্সারে চিকিৎসা :

উপসর্গের চিকিৎসাব্যথার জন্য ব্যথার ঔষধ, রক্ত কমে গেলে রক্ত দেয়া, পুষ্টি ঘাটতি হলে পূরণ করার ব্যবস্থা করা।

অন্যান্য চিকিৎসা : রেডিওথেরাপি, কোমোথেরাপি বা ওষুধ দিয়েছে চিকিৎসা, লেজার পদ্ধতিতে চিকিৎসা শৈল্য চিকিৎসা। স্কোয়ামাস কোষে কেন্দ্রিভূত ক্যান্সার শৈল চিকিৎসায় নিরাময় হতে পারে।

 


আরো পড়ুন যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশি


শ্বাসনালী ও ফুসফুসের টিউমার || ডাঃ আবিদা সুলতানা 
Trachea and lung tumors || Dr. Abida Sultana

 আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

সংগ্রহ করুন ডাঃ আবিদা সুলতানা স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি


No comments

Powered by Blogger.