Header Ads

যক্ষ্মা কি? কিভাবে যক্ষ্মায় রোগ ছড়ায়? What is tuberculosis? How does tuberculosis spread? || Dr. Abida Sultana

 

যক্ষ্মা কি? কিভাবে যক্ষ্মায় রোগ ছড়ায়? ডাঃ আবিদা সুলতানা, What is tuberculosis? How does tuberculosis spread? || Dr. Abida Sultana

যক্ষ্মা কি?

যক্ষ্মা একটি সংক্রমণ ব্যাধি। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক এক ধরনের জীবাণুর আক্রমণে যক্ষ্মা হয়। এই জীবাণু টিউবারক্যাল ব্যাসিলাই নামে পরিচিত। সাধারণত ফুসফুসে যক্ষা হলেও দাঁত, নখ চুল ছাড়া শরীরের কোন অঙ্গেই যক্ষ্মা হতে পারে।যক্ষ্মা রোগীদের শতকরা ৮৫ ভাগই ফুসফুসের যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়। বাকি শতকরা ১৫ ভাগ ফুসফুস যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়।

 

কিভাবে যক্ষ্মায় রোগ ছড়ায়?

কফে জীবাণু আছে এমন ফুসফুসের যক্ষ্মারোগীর হাঁচি, কাশি, কথা বলা হাসির সময় তার মুখ থেকে নিঃসৃত অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ যক্ষ্মা জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর কাছে থাকা লোকজন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় এই যক্ষ্মা জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে তাদের শরীর প্রবেশ করে ফলে তারা সংক্রমিত হয়। এই সংক্রমিত লোকেদের মধ্যে শতকরা ১০ থেকে ১৫ জন সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়।

 

যক্ষ্মারোগী:  

উপযুক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে যাদের শরীরে যক্ষ্মা জীবাণু আছে বলে নিশ্চিত প্রমাণিত হয় তাদেরই যক্ষ্মারোগী বলা হয়।

 

যক্ষ্মা রোগের শ্রেণীবিভাগ:  

শরীরে আক্রান্ত অঙ্গ অনুযায়ী যক্ষ্মা দুই ধরনের। পালমুনারি বা ফুসফুসের যক্ষ্মা এবং এক্সট্রা পালমুনারি বা ফুসফুসের বহির্ভূত যক্ষ্মা।

 

পালমুনারি টিবি বা ফুসফুসের যক্ষ্মার লক্ষণ:

তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, সন্ধ্যাকালীন জ্বর, ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষ্মা লক্ষণ। বলে রাখা ভালো, সব যক্ষ্মার (ফুসফুস এবং ফুসফুস বহির্ভূত) সাধারন লক্ষণ এক হলেও স্থানীয় লক্ষণ এক নয়। যেমন গ্রন্থির (গ্ল্যান্ড) যক্ষ্মায় সাধারণ লক্ষণের পাশাপাশি গ্রন্থি ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং লাল হয়ে যায়। ফুসফুস বহির্ভূত অন্যান্য যক্ষ্মার স্থানীয় লক্ষণ আলাদা হয়ে থাকে।

 

যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশী?

যক্ষ্মা জীবাণু সংক্রমণ এবং সংক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যক্ষ্মা রোগীর পরিবারের সদস্যবর্গ বা তার সংস্পর্শে আসা লোকজন, স্বল্প আয়ের বয়স্ক ব্যক্তিবর্গ, চিকিৎসক সেবা গ্রহণে অক্ষম ব্যক্তি, ইনজেকশনের মাধ্যমে অবৈধ মাদক গ্রহণকারী, জেল / নার্সিং হোম / ভবঘুরে কেন্দ্রে বসবাসকরী এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে কর্মরত বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

এছাড়া এইচআইভি সংক্রমণ ব্যক্তি, মদের নেশায় আসক্ত ব্যক্তি, অপুষ্টিতে ভুগছেন এমন ডায়াবেটিসের রোগী, ফুসফুসের অসুখে আক্রান্ত রোগী, ধুমপায়ী ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

 

কিভাবে যক্ষ্মারোগ সনাক্ত করা হয়?

কফ পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসে যক্ষ্মা সনাক্ত করা হয়। ফুসফুসের যক্ষ্মারোগী সনাক্ত করতে বুকের এক্সরেও সহায়ল ভূমিকা পালন করে। কফে যক্ষ্মাজীবাণু আছে কিনা তা পরীক্ষা করাই বর্তমানে ফুসফুসের যক্ষ্মারোগী সনাক্ত করার উত্তম পদ্ধতি। এক্সরের চেয়ে মাইক্রোসকোপের সাহায্যে কফ পরীক্ষা সহজ, উন্নত এবং স্বল্প ব্যয়ে করা যায়। এক্সরে পরীক্ষার চেয়ে কফ পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় অধিক নির্ভরযোগ্য।

 

আসুন সুস্থ থাকি https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki

যক্ষ্মার উপর এইচআইভি /এইডস এর প্রভাব:

এইচআইভি সংক্রমণ সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। শারীরিকভাবে যক্ষ্মা প্রতিরোধের ক্ষমতা সম্পন্ন যে কোন ব্যক্তির তুলনায় এইচআইভি সংক্রমণ ব্যক্তির সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি। টিবি এইচআইভি দ্বৈত মহামারীর ফলে যক্ষ্ম রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি যক্ষা নিরাময়ের হার হ্রাস পায় এবং চিকিৎসাকালীন সময়ে রোগীর মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। রোগী সনাক্তকরণ চিকিৎসা সম্পন্নের হার হ্রাস পাওয়ায় ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কারণে টিবি/এইচআইভি মহামারী ব্যবস্থাপনায় যত দ্রুত সম্ভব এইচআইভি রোগী সনাক্তকরণ, ডটস পদ্ধতি আওতায় যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান এবং এইচআইভি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এইডস রোগীদের চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরী।

 

যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা:

যক্ষ্মা জীবাণুঘটিত একটি নিরাময় যোগ্য রোগ। সঠিক ঔষধ নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সেবন করলে যক্ষ্মা ভাল হয়। যক্ষ্মার ঔষধ সাধারণত মুখ দিয়ে খাওয়ানো হয়। কখনো কখনো ঔষধের সাথে ইনজেকশন দেওয়া হয়। সব সরকারি এনজিও চিকিৎসা কেন্দ্র / ক্লিনিকে বিনামূল্যে যক্ষ্মার ঔষধ পাওয়া যায়। - মাস! যক্ষার ঔষধ খেতে হয়। ঔষধ পুরো শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঔষধ বন্ধ করা উচিত নয়। পুরো কোর্স শেষ হওয়ার পূর্বে ঔষধ বন্ধ করলে ঔষধ প্রতিরোধী (ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট) হয়ে যার ফলে ঔষধের আর জীবাণু ধ্বংস হয় না। এটা রোগীর জন্য যেমন তেমনি গোটা সম্প্রদায়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবির চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য।

 

যক্ষ্মা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ সমূহ:

যক্ষ্মা চিকিৎসায় নিম্নলিখিত ঔষধসমূহ ব্যবহার করা হয়। ওষুধগুলো খুবই কার্যকর এবং সব চিকিৎসা কেন্দ্রে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

-আইসোনিয়াজিড (আইএনএইচ)

- রিফামপিসিন (আরইপি)

- পায়রাজিনামাইড (পিজেডএ)

- ইথামবুটাল (ইএমবি)

-ইঞ্জেকশন স্ট্রেপটোমাইসিন (এসএম)

 

যক্ষ্মার ঔষধের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া:

যক্ষ্মার ঔষধ খাওয়ার পর অনেক সময় এর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে,

যেমন : জ্বর, চুলকানি, গায়ের চামড়া ছোট ছোট ফুঁসকুড়ি, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, পেটে গিরায় গিরায় ব্যথা ইত্যাদি। ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অনেক সময় ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হতে পারে। তবে অধিকাংশ যক্ষ্মারোগীর ক্ষেত্রে ধরনের কোনো ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এটা করতে পারে সুতরাং ঔষধ খাওয়ার সময় রোগীকে মনিটরিং করা উচিৎ যাতে ধরনের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় এবং দিলেও দ্রুত নিরাময়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। চিকিৎসক / স্বাস্থ্যকর্মীদের ধরনের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রোগীদের শিক্ষা দেওয়া উচিৎ।

 

যক্ষ্মা রোগীদের কিভাবে তাদের অসুখ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া যায়?

অসুখ চিকিৎসা সম্পর্কে যক্ষ্মা রোগীদের স্পষ্ট ধারণা থাকলে তারা কোনো ধরনের অবহেলা না করে সন্তোষজনক চিকিৎসা সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে যক্ষ্মা হয়েছে কথা শোনার সাথে সাথে অনেক রোগী ঘাবড়ে যায়। কারণ, যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কে অনেক অনেক অলীক ধারণা পোষণ করে। যেমন : একবার যক্ষ্মা হলে তারা আর কখনো ভালো হয় না.এই ধারণা দূর করার জন্য যক্ষ্মা সম্পর্কে রোগীদের সঠিক ধারণা রোগ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য তথ্য জানানো দরকার। যেমন: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবনে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভালো হয়। যক্ষ্মা কোন অভিশাপের ফল বা বংশগত রোগ নয়। যক্ষ্মা জীবাণুঘটিত একটি সংক্রমণ রোগ, কেবলমাত্র যক্ষ্মা জীবাণুদ্বারা আক্রান্ত হলে যক্ষ্মা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, জোরের কথা বলা বা উচ্চস্বরে হাসার সময় তার মুখ নিঃসৃত অসংখ্য জলকণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ যক্ষ্মাজীবাণু যা খালি চোখে দেখা যায় না তা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোন সুস্থ ব্যক্তি সেই বাতাস গ্রহণ করলে তার শরীরেও যক্ষ্মাজীবণু প্রবেশ করে।যক্ষ্মাজীবাণু দ্বারা সংক্রমিত ধরনের লোকেদের শতকরা ১০ থেকে ১৫ জন সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। সরকারি এনজিও / চিকিৎসাকেন্দ্রে সন্দেহভাজন রোগীদের রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং যক্ষ্মার চিকিৎসা সম্পন্ন বিনামূল্যে করা হয়।

যক্ষ্মার ঔষধের ক্ষতিকারক কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে পরবর্তী ডোজের ঔষধ বন্ধ করে দেয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের তা জানানো উচিৎ। ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ভাবে যক্ষ্মা রোগীদের সাথে কথা বলার সমত তাদের যক্ষ্মার মৌলিক তথ্য জানানো এবং রোগীদের মধ্যে যক্ষ্মার মৌলিক তথ্য সম্বলিত প্যামপ্লেট/ ব্রুসিয়ার বিতরণ যক্ষ্মা সম্পর্কে রোগীদের জ্ঞান বৃদ্ধি সহায়ক হতে পারে।

 

ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স কী?

যেসব রোগী ঔষধ প্রতিরোধী তাদের ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মারোগী বলা হয় এবং যেসব যক্ষ্মা জীবাণু একাধিক যক্ষ্মা ঔষধ বিশেষ করে আইসোনিয়াজিড রিফামপিসিন প্রতিরোধী তাকে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর)যক্ষ্মাজীবণু বলা হয়। বর্তমানে (এমডিআর) যক্ষ্মাজীবাণু যক্ষ্মা চিকিৎসার ভয়াবহ প্রতিবন্ধক।

কিভাবে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর) টিবি হয় :

অন্যান্য ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স এর মত টিবির ক্ষেত্রেও মানুষের নিম্নলিখিত ভুলের কারণে এমডিআর টিবির উৎপত্তি ঘটে।

- অপর্যাপ্ত মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ (ব্যাড রেজিমেন)

- সঠিক কম্বিনেশনের ওষুধ প্রয়োগ না করা (ব্যাড কম্বিনেশন)

- অনিয়মিত ওষুধ সেবন (ইরেগুলার ইনটেক অব ড্রাগস)

- অপর্যাপ্ত মেয়াদের চিকিৎসা (ইনএডিকুয়েট ডিউরেশন অব ট্রিটমেন্ট)

এসব কারণে রোগীদের মধ্যে রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠে।


ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি 

যক্ষ্মা কি? কিভাবে যক্ষ্মায় রোগ ছড়ায়? ডাঃ আবিদা সুলতান
What is tuberculosis? How does tuberculosis spread? || Dr. Abida Sultana 


আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

No comments

Powered by Blogger.