Header Ads

শ্বাসকষ্ট || Shortness of breath || Dr. Abida Sultana

 

 

শ্বাসকষ্ট || ডাঃ আবিদা সুলতানা || Shortness of breath || Dr. Abida Sultana


শুধু মানুষ নয়, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করা ছাড়া কোন জীবের পক্ষেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এমনকি বৃক্ষ, লতা, গুল্ম প্রভৃতি উদ্ভিদ শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করা ছাড়া বাঁচতে পারে না। প্রাণীকুল ফুসফুসের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করলেও উদ্ভিদ করে পাতার সাহায্যে। মানুষ সহ সব প্রাণী শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে বাতাস থেকে অক্সিজেন নেয় এবং শ্বাস ছাড়ার সময় মাধ্যমে শরীরে ভিতরে জমা হওয়া দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। অন্যদিকে উদ্ভিদরা পাতার সাহায্যে বাতাস থাকে কার্বন ডাই -অক্সাইড গ্রহণ করে এবং নির্মল অক্সিজেন পরিত্যাগ করে। জন্য বৃক্ষ প্রাণী মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে।

কেউ খেয়ালও রাখে না কখন এবং কিভাবে সে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে এবং পরিত্যাগ করছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের বিষয়টি তখনই মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয় যখন সে শ্বাস-প্রশ্বাসের গ্রহণ পরিত্যাগে বিন্দু মাত্র অসুবিধা বা অস্বস্তি বোধ করে। শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ পরিত্যাগে এই অস্বস্তি বা কষ্টের নামেই শ্বাসকষ্ট। শ্বাসকষ্ট তিন ধরনের হতে পারে। অল্প বা হালকা শ্বাসকষ্ট, তীব্র শ্বাসকষ্ট বা ক্রনিক শ্বাসকষ্ট। নানা কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে যেমন: হ্রদরোগজনিত অসুখ, ফুসফুসজনিত অসুখ, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি। এছাড়া নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ মৃত্যুর (কিটোএসিড) জমা হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এমনকি দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনাজনিত কারণ মুটিয়ে যাওয়ার ফলে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। কিছু কিছু অসুখে বিশ্রামে থাকলেও শ্বাসকষ্ট হয় আবার কোনো কোনো অসুখে শ্বাসকষ্ট হয় অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে।

হৃদরোগজনিত শ্বাসকষ্ট:- কিছু কিছু হৃদরোগ জনিত অসুখে বিশ্রামে থাকলেও তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। যেমন- হৃদরোগজনিত কারণে ফুসফুসের ভিতর পানি জমা হওয়া (একিউট পালমুনারি ইউমা) এছাড়া হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন কম হওয়ার (মায়োকার্ডিয়াল ইস্কিমিয়া) দরুন শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হৃদযন্ত্রের বাল্বের অসুখ (মিট্রাল বাল্ব ডিজিজ), হৃদযন্ত্রের মাংস পেশীর অসুখ (কার্ডিও মায়োপ্যাথি), হৃদযন্ত্রের বহির্বিভাগের আবরণের মধ্যে পানি জমা (পেরিকার্ডিয়াল ইফিউশন) হৃদযন্ত্রের আবরণ কুঁচকে গেলে (কনস্ট্রিকটিভ পেরিকার্ডাইসিস) তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ক্রনিক হার্ট ফেইলর এবং হৃদযন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন স্বল্পতার কারণে (মায়োকার্ডিয়াল ইস্কিমিয়া) শারীরিক পরিশ্রমের দীর্ঘস্থায়ী (ত্রুনিক) শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

 

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki

 

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি


ফুসফুসজনিত শ্বাসকষ্ট : ফুসফুসের কিছু কিছু অসুখে বিশ্রামে থাকলেও শ্বাসকষ্ট হয়। যেমন - জটিল তীব্র (একিউট এন্ড সিভিয়ার)  এ্যাজমা, শ্বাস-প্রশ্বাসে বাঁধা দানকারী পুরাতন অসুখের হঠাৎ বৃদ্ধি (এক্সাজারভেশন অফ সিওপিডি), ফুসফুসের প্রদাহ (নিউমোনিয়া) , ফুসফুসজনিত ধমনীরোধী রক্তপিণ্ড (পালমুনারি এম্বলিজম), শ্বাসতন্ত্রের কয়েকটি জটিল তীব্র অসুখ (একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রম), শ্বাসনালীতে বাইরে কোনো পদার্থের অনুপ্রবেশ বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে (লোবার কলাপ্স), শ্বাসনালীর উপরিভাগের ভিতরে ফুলে গেলে (লেরিঞ্জিয়াল ইডিমা) শ্বাসনালির ভিতরকার কর্ড অকার্যকর হওয়া (বাইলেটারেল কর্ড পালসি), বড় শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে গেলে (ট্রেকিয়াল অবস্ট্রাকশন), বড় শ্বাসনালী দুর্বলতা ইত্যাদির কারণে বিশ্রামের সময়ও শ্বাসকষ্ট হয়।

এছাড়া ফুসফুসে আরও কিছু কিছু অসুখ আছে যখন পরিশ্রম করলেই তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় যেমন- শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধাজনিত অসুখ (সিওপিডি) ক্রনিক এ্যাজমা (একিউট এ্যাজমা), বৃহত্তম শ্বাসনালীর ক্যান্সার (ব্রংকিয়াল কার্সিনোমা), ফুসফুসে অক্সিজেন ধারণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গব্বরের মাঝখানের জায়গা জোড়া লেগে যাওয়া (সারকয়েডসিস ফাইব্রসিং এলভিওলাইটিস), এলার্জি (এক্সট্রিনসিক এলার্জিক এলভিওলাইটিস), নিউমোকোনিওসিস, ফুসফুসে পুরানো ধমনীরোধী জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ড (ক্রনিকপালমুনারি থ্রোম্বএমবোলিজম), জীব দেহগত বর্ণহীন রস দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সারের সম্প্রসারণ (লিমফ্যাটিক কার্সিনোমেটোসিস), ফুসফুসের আবরণে অতি মাত্রায় পানি জমা (লার্জ প্লিউরাল ইফিউশন) শ্বাসনালীতে এমাইলয়েড জমা হওয়া (এমাইলয়েড অব এয়ারওয়েজ) ইত্যাদি।

এছাড়া ফুসফুসের আরও কয়টি অসুখে বিশ্রাম এবং পরিশ্রম উভয় ক্ষেত্রে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যেমন:- ব্রঙ্কিএকটেসিস সিসটিক ফাইব্রোসিস, শ্বাসনালী শ্বাসনালীর টিউমার (লেরিঞ্জিয়াল ফেরিঞ্জিয়াল টিউমার), ফুসফুসের এবং ফুসফুসের যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়া প্রদাহ (ডিফিউজ ইনফেকশন অব লাং) ইত্যাদি।

অন্যান্য কারণ : হৃদরোগ ফুসফুসজনিত রোগের  কারণ  ছাড়াও অন্যান্য কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যেমন- প্রচন্ড রক্তশূন্যতা (সিভিয়ার এনিমিয়া), নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের কারণে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ (কিটো এসিড) জমা হলে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়া দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনাজনিত মানসিক কারণে অনেক সময় তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। খাদ্য নির্যাসের হেরফের হওয়ার দারুন রক্তে ক্ষার জাতীয় পদার্থের আধিক্য (মেটাবলিক এলকালোসিস), রক্তের ল্যাকটিক অ্যাসিড ইউরিয়া বেড়ে যাওয়া, অতিমাত্রায় সেলিসাইলেট খাওয়া, ইথাইলিন গ্লাইকল বিষক্রিয়া, অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া (অবেসিটি), হঠাৎ ভয় পাওয়ার, রক্তপাত হওয়া (হেমোরেজ), মস্তিষ্কের হাইপোথেলামাসের অসুখ এবং হতাশা ইত্যাদি শ্বাসকষ্টের কারণেও হতে পারে।।

শ্বাসকষ্ট কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে হেলাফেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে যাতে শ্বাসকষ্টের আসল কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায়। দেরিতে চিকিৎসকের কাছে গেলে যে অসুখের কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তীব্র শ্বাসকষ্ট অনেক সময় রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

 


আরো পড়ুন যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশি

 

শ্বাসকষ্ট || ডাঃ আবিদা সুলতানা || Shortness of breath || Dr. Abida Sultana

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

 

No comments

Powered by Blogger.