Header Ads

যক্ষ্মা কেন হয়, কাদের হয়? || Why is tuberculosis, who is it? || Dr. Abida Sultana

 

 

যক্ষ্মা কেন হয়, কাদের হয়? || ডাঃ আবিদা সুলতানা

বাংলাদেশের যক্ষ্মা একটি সুপরিচিত রোগ। কিন্তু সাধারণ জনগণের অধিকাংশ এমনকি শিক্ষিত বা উচ্চশিক্ষিত এবং চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত অনেকেরই যক্ষ্মা রোগের ভয়াবহতা এবং রোগের প্রকোপ সম্পর্কে কোনো সঠিক ধারণা নেই। যক্ষ্মা রোগের অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা এবং দ্বিতীয় ঘাতক ব্যাধি। এই রোগের প্রকোপ এতই বেশি যে প্রতি মিনিটে বাংলাদেশে কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও রোগে আক্রান্ত হয় এবং প্রতি ১০ মিনিটে বাংলাদেশে একজনের মৃত্যু ঘটে বিশ্বের যে ২২টি দেশে যক্ষ্মা রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নম্বরে।

আমাদের দেশে যক্ষ্মা রোগীদের অধিকাংশ কর্মক্ষম বয়সে (১৫-৪৫) যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে কর্মক্ষমতা হারায় এবং চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এদের অনেকেই মারা যায়। দেশ যেমন এদের উৎপাদনশীলতা থেকে বঞ্চিত হয় তেমনি এদের পরিবারের নেমে আসে চরম দুর্গতি। অর্থনীতিতে এর প্রভাব সুদূর প্রসারী।

১৮৮২ সালের রবার্ট ককের যক্ষ্মা জীবাণু আবিষ্কারের যুগান্তকারী ঘটনার পর শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাই নন সাধারণ মানুষের অনেকেই জানেন যে, 'টিউবারক্যাল বেসিলাই' নামক এক ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবণুর আক্রমণেই যক্ষ্মারোগ হয়। এগুলো এত ক্ষুদ্র যে একটি সূঁচের অগ্রভাগে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত জীবাণু বসবাস করতে পারে।ঔষধ আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় যক্ষ্মার সবচেয়ে কার্যকরী ঔষধ এখন আমাদের সকলের নাগালের মধ্যে থাকার পরেও বাংলাদেশের প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার লোক রোগে মৃত্যুবরণ করে। এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানীসহ আমাদের সকলের ব্যর্থতা।

যক্ষ্মা বহু ধরনের এবং শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে তবে ফুসফুসে শতকরা শতকরা ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা হয় এবং এটাই সবচেয়ে সংক্রামক। ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত যে সব রোগের হাঁচি, কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে যক্ষ্মা জীবাণু নির্গত হয় তারাই প্রতিনিয়ত যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ছড়ায়। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় এদের বলা হয় 'স্পুটাম স্মীয়ার পজিটিভ যক্ষ্মারোগী' এসব রোগী হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় তাদের ফুসফুস থেকে নির্গত দমকা বাতাসের সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা (ড্রপলেট) বেরিয়ে আসে, যার মধ্যে থাকে অসংখ্য যক্ষ্মা জীবাণু। তখন এই রোগীর সান্নিধ্যে থাকা লোকজন সরাসরি যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হয়। এই ড্রপলেটের মধ্যে যেগুলো আকারে একটু বড় সেগুলো মাটিতে পড়ে এবং শুষ্ক হওয়ার পর এর মধ্যে থাকা অসংখ্য যক্ষ্মা জীবাণু ধূলিকণায় ভর করে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর কাশি দেওয়ার পর যে থু থু এবং কফ মাটিতে ফেলে তার মধ্যে থাকে অসংখ্য যক্ষ্মা জীবাণু। এই থু থু এবং কফ শুষ্ক হওয়ার পর ওইসব জীবাণু ধূলিকণায় ভর করে বাতাসে ছড়ায়। একজন যক্ষ্মা রোগীর ফুসফুস থেকে একবারে নির্গত ড্রপলেট থুথু এবং কফের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন পর্যন্ত যক্ষ্মা জীবাণু থাকতে পারে। এভাবে প্রায় দেড় লক্ষ স্পুটাম স্মীয়ার পজেটিভ রোগী প্রতিনিয়ত আমাদের চারদিকের বাতাসে যক্ষ্মা জীবাণু ছড়িয়ে বাতাস বিষিয়ে তুলছে। আর উদ্বেগের বিষয় হলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়া এসব জীবাণু সূর্য কিরণ ছাড়া দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে।

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki  https://www.youtube.com/@dr.abidasultana

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি

এভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যক্ষ্মা সুস্থ লোকেদের দেহে প্রবেশ করে। তবে সুখের বিষয় এই যে কারো শরীরে যক্ষ্মা জীবাণু প্রবেশ করলেই তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হবেন না তা নয়। যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়া নির্ভর করে শরীরে প্রবেশ করা যক্ষ্মা জীবাণুর পরিমাণ এবং জীবাণুর শক্তি যার শরীরে যক্ষ্মা জীবাণুর প্রবেশ ঘটেছে সেই ব্যক্তির শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। প্রতিরোধ ক্ষমতা দুই ধরনের হতে পারে। জন্মগত প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতা। জন্মের পর বিসিজি টিকা এবং সুষম খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়।

যাদের শরীরে জন্মগত প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, শরীরে প্রবেশ করা যক্ষ্মা জীবাণু তাদের সহজে কাবু করতে পারে না। শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতাই সব যক্ষ্মা জীবাণু ধ্বংস করে ফেলে। তবে যাদের শরীরে জন্মগত প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম তাদের শরীরে যক্ষ্মা জীবাণু দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং তাদের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি বেশি। কোনো কোনল ক্ষেত্রে এমনও হয় যে শরীরে প্রবেশ করা যায় করা যক্ষ্মা জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতার মুখে নির্জীব হয়ে পড়ে থাকে। দীর্ঘ রোগভোগ, বার্ধক্য বা অন্য কোনো কারণে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা ঘাটতি দেখা দিলে তখন ওইসব জীবাণু বংশবিস্তার শুরু করে। এই শ্রেণীর লোকেদেরও যক্ষ্মা আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি বেশি। এছাড়া কফের যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আছে এমন রোগীর সান্নিধ্যে যারা থাকেন তারাও যক্ষ্মা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। কারণ চিকিৎসার আওতায় আনা না হলে বছরে এদের প্রত্যেকের একজন করে নতুন রোগী তৈরি করেন। আলোবাতাসহীন ঘরে যারা গাদাগাদি করে বসবাস করেন তাদের শরীরে যক্ষ্মা জীবণুর প্রবেশ ঘটলে, তাদেরও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশ প্রতিবছর মোট জনসংখ্যা .১৪ ভাগ লোক যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিরর মধ্যে রয়েছে। এই ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। এইভাবে প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ২২৫ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন।

যক্ষ্মা হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা দরকার। তবে পরিবার থেকে তাদের আলাদা রাখার প্রয়োজন নেই। কারণ ঔষধ পড়লেই যক্ষ্মা জীবাণু সংক্রমণ ক্ষমতা লোপ পায়। তাছাড়া ১৫ দিনের চিকিৎসায় অনেকের কফই যক্ষ্মা জীবণু মুক্ত হয়। কফে জীবাণু আছে এমন যক্ষা রোগীরর থু থু কফ নির্দিষ্ট পাত্রে ধারণ করে নির্দিষ্ট সময়ে পুড়িয়ে ফেলা অথবা মাটিতে পুঁতে রাখা উচিৎ যাতে যক্ষ্মা জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। শহরাঞ্চলে যাদের বাড়িতে পানি নিষ্কাশনের বেসিনের ব্যবস্থা আছে তাদের থু থু কফ বেসিনে ফেলে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ধুঁয়ে ফেলা উচিৎ। যেহেতু বেশিরভাগ যক্ষ্মা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় সেহেতু রোগী অথবা সুস্থ মানুষ সবাইকে রুমাল বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি, কাশি দেওয়া উচিৎ। রুমাল বা কাপড় না থাকলে অগত্যা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি, কাশি দেওয়া উচিৎ। যেখানে সেখানে থু থু বা কফ ফেলার অভ্যাস পরিহার করা একান্ত অপরিহার্য। রোগীর ব্যবহৃত জামাকাপড়, রুমাল, বিছানার চাদর, কাঁথা বা বালিশের কভার ইত্যাদি প্রতিদিন অন্তত আধ ঘন্টা গরম পানিতে ফুটয়ে ব্যবহার করা উচিৎ। পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করে এমন ঘরে বসবাস এবং সাধ্যমত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ। এসব নিয়মকানুন মেনে চললে নির্দ্বিধায় বলা যায় দেশের যক্ষ্মা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি ঘটবে।

 


আরো পড়ুন যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশি

যক্ষ্মা কেন হয়, কাদের হয়? || ডাঃ আবিদা সুলতানা 
Why is tuberculosis, who is it? || Dr. Abida Sultana

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

সংগ্রহ করুন ডাঃ আবিদা সুলতানা স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি

No comments

Powered by Blogger.