ঈদের খাবার ও সচেতনতা || Eid food and awareness || Dr. Abida Sultana
দাওয়াতে গেলে পরিমিত অতিভোজন পরিহার করার চেষ্টা করবেন।
হয়তো অনেক খাবার টেবিলে সাজানো থাকবে, কিন্তু খেতে বসলেই যে সব
খেতে হবে তা না। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। ঈদুল ফিতর সমাগত। একমাস
সিয়াম সাধনার পর উদযাপিত হবে দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ সময়
আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে একটু বেশি যাওয়া হয়। যাওয়া হয় বন্ধু-বান্ধবের
বাড়িতে। জীবনে যোগ হয় আনন্দ। আর এই আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো খাবার। আর ঈদের
খাবারের সঙ্গে মূল আয়োজনে থাকে বিভিন্ন ধরনের গোশত খাওয়া, যেমন-
গরু, খাসি, মহিষ। এই সময়ে বিশেষ করে
উৎসবে, সবারই মনের প্রবল ইচ্ছা বেশি বেশি করে গোশত খাওয়া। দুই
এক দিন বেশি খেতে যদিও কোনো বাঁধা নেই তবুও খাওয়া উচিত রয়ে সয়ে । সমস্যা হলো
তাদের যাদের পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ আছে কিংবা যাদের এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ আছে। ঈদকে
উপলক্ষ করে সবার বাসায় নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়। নিজের বাসাতে
তো বটেই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের
বাসায় ঘুরে ঘুরে প্রায় সারাদিনই টুকিটাকি এটা সেটা খাওয়া হয়। আমাদের একটু নজর
দেয়া দরকার আমরা কি খাচ্ছি , কতটুকু খাচ্ছি, বিভিন্ন খাবারের প্রতিক্রিয়া কি তার ওপর।
মূল সমস্যাটা নিঃসন্দেহে খাবারের পরিমাণে। অনেকেই একসঙ্গে
প্রচুর পরিমাণে তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। ঈদে গোশতের
পরিমাণটা একটু বেশি খাওয়া হয়। অধিক পরিমাণে গোশত খাওয়ার পরে ফলে পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া
করে, ব্যথা করে, বারবার পায়খানা হয়।
পর্যাপ্ত পানি পান না করার দরুন অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। যদিও সাধারণভাবে কোন
নির্দিষ্ট খাবার খেতে মানা নেই, কিন্তু পরিমাণ বজায় রাখা
খুবই জরুরী। এক্ষেত্রে শুরু থেকে পরিকল্পনা থাকা দরকার। যেহেতু দুপুর গড়িয়ে বিকাল
হলে সবাই গোশত খাওয়ার জন্য বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাই
সকাল আর দুপুরে খাওয়াটা খুব কম রাখাই ভালো। অন্য বাসায়ও যথা সম্ভব কম খাবেন। ঈদ-পরবর্তী
দাওয়াতে তৈলাক্ত খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি
ও আমিষ জাতীয় খাবার, যেমন- মুরগি, খাসি
বা গরুর মাংস, কাবাব রেজালা ইত্যাদি খাওয়া হয়। এছাড়া আছে
চটপটি, দইবড়া কিংবা বোরহানির মত টক খাবারও। এই জাতীয় খাদ্য
সকাল এবং দুপুরে পরিহার করাই উত্তম। কারণ বিকালে প্রচুর পরিমাণে গোশত খাওয়ার
সম্ভাবনা থাকবেই।
ফলের জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে পারেন। খাওয়ার
আধা ঘন্টা পর দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নামাজ পড়তে যাবেন। অনেকে শরবত,
কোমল পানীয়, ড্রিংস এবং ফ্রুট জুস খাওয়া
পছন্দ করেন। তবে মনে রাখা উচিত এসব খাওয়া না খেয়ে সবসময় মৌসুমী ফল খাওয়া উত্তম,
তাতে মজা ও উপকার দুই-ই পাবেন। লেবুর শরবত, বাসায়
বানানো ফলের রস, ডাবের পানি, বোরহানি
ইত্যাদি খাওয়া যায়। যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোন সমস্যা নেই তারা নিজের
পছন্দমতো সবই খেতে পারেন এবং তাদের হজমের কোন সমস্যা হয় না। শুধু অতিরিক্ত না
হলেই হলো। বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাদ্য। বেশি গোশত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা
বেড়ে যায়। যাদের এনাল ফিসার ও পাইলস জাতীয় রোগ আছে তাদের বায়ু পথে জ্বালাপোড়া,
ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে
পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের
রস ইসুবগুলের ভুষি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন। পেটে গ্যাস হলে ডমপেরিডন,
অ্যান্টসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল,
প্যান্টোপ্রাজল সজাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। যাদের আইবিএস আছে তারা
দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। দাওয়াতে গেলে অতিভোজন পরিহার করার
চেষ্টা করবেন।
সংগ্রহ করুন ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি
হয়তো অনেক খাবার টেবিলে সাজানো থাকবে, কিন্তু
খেতে বসলেই যে সব খেতে হবে তা নয়। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার
অন্তত দুই ঘন্টা পর বিছানায় যাবেন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না এতে হজম রস
গুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে হজমে অসুবিধা হয়, তাই খাওয়ার
অন্তত একঘন্টা পর পানি পান করুন। খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন। পশুর চর্বি
খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। অনেক সময় দেখা
যায়, আমরা রান্না সুস্বাদু হবে এমন ভুল ধারণা পোষণ করে
মাংসে বেশ কিছু চর্বি আলাদাভাবে যোগ করে থাকি। এটা ঠিক নয়। যতটুকু সম্ভব মাংসে
চর্বি ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো। তাই এই সময়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সবাইকে যথেষ্ট
যত্নবান ও সতর্ক হতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে প্রতিকার নয়, এসব ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
আরো পড়ুন আসুনজেনে নিই কম ক্যালরির খাবারগুলো কি কি
ঈদের খাবার ও সচেতনতা || ডাঃ আবিদা সুলতানা
No comments