Header Ads

বুকে ব্যথা || Chest pain || Dr. Abida Sultana

 

 

বুকে ব্যথা || ডাঃ আবিদা সুলতানা, Chest pain || Dr. Abida Sultana


বুকে ব্যথার সাথে আমরা সকলে কম বেশি পরিচিত। বুকের ব্যথা হালকা তীব্র দু ধরনের হতে পারে। বুকে ব্যথা বিশেষ করে তীব্র ব্যথার অভিজ্ঞতা যাদের নেই তাদের বুঝানো সম্ভব না যে, ব্যথা কত তীব্র মারাত্মক হতে পারে। তীব্র বুকে ব্যথার কারণে অনেক সময় মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে।আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের ধারণা, বুকে ব্যথা মানে হৃদরোগের লক্ষণ কিন্তু ধারণা সঠিক নয়। হৃদরোগ ছাড়া অনেক ধরনের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, ফুসফুসের অসুখ, মাংস হাড়জনিত অসুখ এমনকি পাকস্থলী অন্ত্রের বিভিন্ন অসুখের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।

পাঁজর (চেস্ট ওয়াল), ফুসফুস বক্ষ গহ্বরের আবরণ (প্ল্যুরা), শ্বাসনালী (ট্রেকিয়া), বড় শ্বাসনালী (মেইন এয়ারওয়েজ), দুই ফুসফুসের মাঝখানের এলাকা (মেডিস্টিনাল) এমনকি পরিপাকতন্ত্রের অসুবিধার কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।

পাঁজরে ব্যথা (চেস্ট ওয়াল পেইন):  অনবরত কাশি (পারসিস কাফ), শ্বাসকষ্ট (ব্রিদলেসনেস), মাংসপেশীতে খিল ধরা (মাসল ষ্পাজম), পাঁজরের হাড়ের মাঝখানের মাংস প্রদাহ (ইন্টারকোস্টাল মায়োসাইটিস), পাঁজরের হাড়ের হারপিস জোস্টার নামক ভাইরাসের আক্রমণ (থেরাসিস হারপিস জোস্টার), ককসিকি বি ভাইরাসের সক্রমণ (ককসিকি বি ভাইরাস ইনফেকশন), পাঁজরের চাকতিজনিত কারণ (থেরাসিক ডিক্সলিশন) , স্নায়ুজনিত চাপ (নার্ভ কম্প্রেশন) কোনো কিছু অনুপ্রবেশে পাঁজরের মধ্যবর্তী স্নায়ু চাপ (ইন্টার কোষ্টাল নার্ভ কম্প্রেশন), পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ( রিব ফ্রাকচার), পাঁজরের হাড়ের প্রাথমিক বা ছড়িয়ে পড়ার টিউমারের কারণ (প্রাইমারি অব মেটাস্টেটিক টিউমার), ট্রিটজিস সিনড্রোম অথবা স্প্লীপিং রিব সিনড্রোম জনিত কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।

ফুসফুস বক্ষ গহ্বরের আবরণে ব্যথা প্ল্যুরাল পেইন: ফুসফুসের আবরণের প্রদাহ (ইনফেকটিভ প্ল্যুরিসি) বক্ষ গহ্বরে বাতাস জমা হওয়া (নিউমোথোরাক্স), শরীরের ভিতরে আপনা আপনি সৃষ্টি হওয়া অসুখ (অটো ইমিউন ডিজিজ), বক্ষ গহ্বরের আবরণ জোড়া লেগে যাওয়া (এসবেস্টাস প্ল্যুরাল ফাইব্রোসিস), মেসোথেলিয়েল সেল থেকে উৎপন্ন টিউমার (মেসোথোলিওমা) এবং শরীরে অন্য স্থান থেকে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার জাতীয় টিউমারের (মেটাস্টেটিক টিউমার) কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।

শ্বাসনালীর ব্যথা (এয়ারওয়ে পেইন): বড় শ্বাসনালীতে ব্যথা (ট্রেকিয়া), শ্বাসনালীতে উত্তেজক গ্যাস প্রবেশ করা (ইনহেলেশন অব ইরিটেন্ট গ্যাস) অথবা মধ্যবর্তী শ্বাসনালীর ক্যান্সার (সেন্ট্রাল ব্রংকিয়াল কার্সিনোমা) ইত্যাদির কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।

দুই ফুসফুসে মাঝখানে ব্যথা (মেডিসস্টিনাল পেইন): কম রক্ত সঞ্চালন জনিত হৃদরোগ (কার্ডিয়াক ইস্কিমিয়া) অথবা যন্ত্রের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হৃদযন্ত্রের পচন (ইনফার্কশন), জমাট বাঁধা রক্ত দ্বারা ফুসফুসের শিরা বন্ধ হয়ে যাওয়া (ম্যাসিভ পালমুনারি এম্বোলিজম), অন্ননালিত প্রদাহ, (ইসোফেজাইটিস), হৃদযন্ত্রের আবরণে প্রদাহ, সারকয়েড জনিত গ্ল্যান্ডের অসুখ (সারকয়েড এডিনোপ্যাথি), এক ধরনের ক্যান্সার জাতীয় অসুখে গ্ল্যান্ড বড় হওয়া (লিমফোমা), মেডিস্টাইনামের প্রদাহ (মেডিনাইটিস), এয়োটা নামক বড় শিরা ফেটে যাওয়া (এয়োটিকডিসেকশন) অথবা ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার জন্য এয়োটার দেয়াল ফুঁলে যাওয়া (এনোরিজম) এর কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।

বুক শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ, বুকের মধ্যে রয়েছে শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনে দুটি অংশ ফুসফুস হৃদয় বা হার্ট। বুকে ব্যথা সম্পর্কে মানুষ সচেতন হলেও আমাদের দেশের সাধারণ ধারণা হলো বুকে ব্যথা মানেই হৃদরোগের লক্ষণ। কারণে বুকে ব্যথা হলে কেউ অবহেলা না করে চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হয়। তবে প্রচলিত এই ধারণা সঠিক নয়।

শুধু হৃদরোগ নয় ফুসফুস এমনকি অন্ত্রজনিত কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে। ব্যথার অবস্থান (লোকেশন), বিস্তৃতি (রেডিয়েশন), চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য (ক্যারেক্টার) , ব্যথার শেষ অবস্থান (প্রিসিপিটেশন), উপশমকারী উপাদান (রিভিলিং ফ্যাক্টর) এবং সহযোগী উপাদান (এসোসিয়েটেড ফ্যাক্টর) ইত্যাদি পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে কম রক্ত সঞ্চালনকারী হৃদরোগ (স্কিমিক কার্ডিয়াক চেস্ট পেইন) জনিত ব্যথা ফুসফুস জনিত ব্যথা চিহ্নিত করা যায়। বুকে ব্যথা দেখা দেওয়ার পর প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ যাতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারে সেজন্য এই পার্থক্যসমূহ সকলের জানা দরকার। 

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি https://www.rokomari.com/book/280680/asun-sustho-thaki

ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি


নিম্নে এগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

ব্যাথার অবস্থান: হৃদরোগের ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে হয় এবং সেখান থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে অন্য দিকে ফুসফুস জনিত ব্যথা বুকের বা পাশে যে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে হয়।

ব্যথার বিস্তৃতি: হৃদরোগ জনিত ব্যথা চোয়াল, ঘাড়, কাঁধ, বাহু এবং কখনো কখনো পিঠেও ব্যথা বিস্তৃতি লাভ করে। কিন্তু ফুসফুস জনিত ব্যথা সব স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বিস্তৃতি লাভ করতে পারে না অথবা মোটেই বিস্তৃতি লাভ করে না।

ব্যথার চরিত্র অথবা বৈশিষ্ট্য: হৃদরোগ জনিত ব্যথা আটসাট (টাইট) সংকোচনশীল (স্কুইজিং) অথবা শ্বাসরোধক (চোকিং) অন্যদিকে ফুসফুস জনিত ব্যথা তীব্র ছুরি ঢোকানোর মতো অথবা চেপে ধরার মতো।

ব্যথার শেষ অবস্থান: হৃদরোগের ব্যথা পরিশ্রম মানসিক চাঞ্চল্যে দ্রুত পরিবর্তন হয়। ফুসফুসের ব্যথা স্বতঃস্ফূর্ত। নড়াচড়ায় ব্যথার কোনো পরিবর্তন ঘটে না তবে শারীরিক সাথে অবস্থানের পরিবর্তন ঘটলে শ্বাসপ্রশ্বাস নিলে অথবা ব্যথার স্থানে চাপ দিলে ব্যথা বাড়ে।

ব্যথার উপশমকারী উপাদান: বিশ্রাম এবং নাইট্রেট নামক ঔষধে হৃদরোগজনিত ব্যথা দূরত্ব উপশম হয়। কিন্তু হৃদরোগ ছাড়া অন্যান্য ব্যথা বিশ্রামে তেমন কোন পরিবর্তন হয় না এবং নাইট্রেট নিলে খুব ধীরে ধীরে ব্যথার খুব অল্প উপশম হয় বা মোটেই কোনো উপশম হয় না।

ব্যথার সহযোগী উপাদানহৃদরোগের ব্যথায় প্রধানত শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু হৃদরোগ ছাড়া অন্য ব্যথা প্রধানত ফুসফুস, খাদ্যনালী, অঙ্গ প্রতঙ্গের পরিচালনা এবং মানসিকতার সাথে সম্পৃক্ত।

বুকে ব্যাথা হলে পরামর্শের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত কিন্তু তীব্র বুকে ব্যথা হলে রোগীকে একই অবস্থানে বিশ্রামের রেখে সব ধরনের সুবিধাযুক্ত এ্যাম্বুলেন্স ডেকে এমন হাসপাতালে পাঠানো উচিত, যেখানে হৃদরোগ ফুসফুসজনিত রোগের ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। এ। নিয়ে সময় ক্ষেপণ এবং হেলাফেলা করলে রোগের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

 

আরো পড়ুন যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশি

বুকে ব্যথা || ডাঃ আবিদা সুলতানা
Chest pain || Dr. Abida Sultana

 আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।


 

No comments

Powered by Blogger.