যক্ষ্মার ঝুঁকি কাদের বেশী || Who is at higher risk of tuberculosis? || Dr. Abida Sultana
যক্ষ্মার জীবণু আবিষ্কারের পর এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, শরীরে যক্ষ্মাজীবণু প্রবেশ করা ছাড়া কারো যক্ষ্মা হতে পারে না। বংশগত কারণে
যক্ষ্মা হতে পারে এ বিশ্বাস এখন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। যক্ষ্মা বায়ুবাহিত একটি
রোগ হিসেবে যে কোনো লোকেরই যক্ষ্মা হতে পারে। এ সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।
তবে বিষয়টি নির্ভর করে প্রবেশ করা যক্ষ্মা জীবাণুর সংখ্যা এবং শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার
ঘাটতি থাকলে অল্প সংখ্যক ও কম শক্তিশালী যক্ষ্মাজীবাণু প্রবেশ করলে যক্ষ্মা হওয়ার
সম্ভাবনাও বেশি থাকে, আবার যাদের শরীরে পর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা রয়েছে তাদের শরীরে শক্তিশালী এবং অনেক যক্ষ্মাজীবাণু প্রবেশ করলেও তাদের
যক্ষ্মা হয় না। সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং শিশুদের বিসিজি টিকা দেওয়ার মাধ্যমে শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
চিকিৎসা নেয় নি এমন সংক্রামক যক্ষ্মা রোগীর সাথে যারা দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা
করে তাদের যক্ষ্মা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে একই আঙ্গিনায় বসবাস করলেও
যক্ষ্মা রোগীর সাথে যারা ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করে না অথবা কেবল মাঝে মাঝে যক্ষ্মা
রোগীর সংস্পর্শে আসে তাদের যক্ষা হওয়ার ঝুঁকি কম।একই সাথে বদ্ধ পরিবেশে গাদাগাদি
করে বসবাস, দূষিত বায়ু, অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশ ও অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করে এমন স্থানে বসবাস যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার
ঝুঁকি বৃদ্ধির সহায়ক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাদা চামড়ার লোকেদের
তুলনায় কালো চামড়ার লোকেরা যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আবার নারী পুরুষের মধ্যে
পুরুষেরাই বেশি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হওয়ার হার-বিশ্বের সকল স্থানে
এক রকম নাও হতে পারে। আমাদের দেশে নারী পুরুষের যক্ষ্মা আক্রান্তের হার ২:৫।
বয়সের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা আক্রান্তের হার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম হতে পারে। আমাদের দেশে যক্ষ্মায় সব থেকে বেশি
আক্রান্ত হয় কর্মক্ষম বয়সের মানুষেরা (১৫ - ৪৫ বছর)। বার্ধক্যে যক্ষ্মায়
আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আগে ধারণা ছিল বেশি বয়সে যক্ষ্মা কম
হয়।
দারিদ্র্যের সাথে চিরকালই যক্ষ্মার সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে অতীতের চেয়ে
বর্তমানে এই সম্পর্কে আরো গাঢ় হয়েছে। কয়েক দশক পূর্বে নিউইয়র্কে গৃহহীনদের
মধ্যে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি ছিল। জরিপে দেখা গেছে, কোপেন হেগেনে মেস বাড়িতে বসবাসকারী অবিবাহিতার মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত
হওয়ার হার বেশি ছিল। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ও সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, সেখানে অধিবাসীদের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বড়
বড় শহর এলাকায় অধিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এই অবস্থার আরো অবনতি
ঘটেছে।
পেশাগত কারণেও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস বৃদ্ধি পায়। শ্রমিক ও
গৃহকর্মীদের তুলনায় নির্বাহী ও অন্যান্য পেশাজীবীদের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার
ঝুঁকি কম। শ্রমিকদের মধ্যে আবার যারা সিলিকা ইন্ডাস্ট্রি, কয়লা খনি, পাটকল ও সুতা কলে
কাজ করে তাদের যক্ষ্মা হওয়া ঝুঁকি বেশি।
ডাঃ আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি
প্রাতিষ্ঠানিক আবাসস্থল যেমন ভবঘুরে কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম, মানসিক হাসপাতাল, জেলখানায় ইত্যাদির বাসিন্দাদের সাধারণ মানুষের তুলনায় যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি
বেশি। হাসপাতাল, নার্সিংহোম
ইত্যাদিতে কর্মরত চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগীর এ্যাটেনডেন্ট ইত্যাদি এবং মেডিকেল ল্যাবে কর্মরত টেকনিশিয়ান ও কর্মচারী
বিশেষ করে যারা স্পেসিমেন নিয়ে কাজ করে তাদের যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় যক্ষ্মা হাসপাতাল ও ক্লিনিকে
কর্মরত চিকিৎসকের চেয়ে সাধারণ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের যক্ষ্মা আক্রান্ত হওয়ার
ঝুঁকি বেশি।
সমীক্ষায় দেখা গেছে কিন্ডার গার্ডেন স্কুল বা শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা অন্য কারো যক্ষ্মা থাকলে ওইসব স্কুল বা প্রতিষ্ঠানের
শিশুরা খুব দ্রুত যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে কাশি কিন্তু কাশির ঔষধে কোন
কাজ হয় না, এমন লোকেদের পরীক্ষা বা এক্সরে করলে দেখা
যাবে তাদের অনেকেই যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন রোগের কারণেও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়া সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়। ওই সব রোগে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে এমনটি হয় বলে ধারণা করা হয়।
যেমনক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও এইচআইভি / এইডস এর সাথে
যক্ষ্মার গলায় গলায় সম্পর্ক। যক্ষ্মা জীবাণু শরীর প্রবেশ
করেছে এমন লোকেদের মধ্যে এইচআইভি জীবাণু প্রবেশ করলে তারা দ্রুত যক্ষ্মায় আক্রান্ত
হয়। বলে রাখা ভালো যে, শরীরে যক্ষ্মা জীবাণু প্রবেশ করার অর্থ
যক্ষায় আক্রান্ত হওয়া নয়। বাংলাদেশী মোট
প্রাপ্ত বয়স্ক লোকদের মধ্যে শতকরা ৫২ জনের মধ্যেই যক্ষ্মা রোগের জীবাণু প্রবেশ
করেছে। এই কারণে যখন বাংলাদেশে অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের চারদিকে যে সকল দেশ রয়েছে যেমন ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড।
সেখানে এইচআইভি / এইডস এর রোগীর সংখ্যা
তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। যদিও
বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা অনেক কম তবুও আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ
বৃদ্ধির ফলে এখানে মহামারী আকারে যক্ষ্মা ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে এখন থেকে আমাদের সচেতন হওয়া
দরকার। শরীরে এইচআইভি ভাইরাস আছে এমন লোকেদের মধ্যে
যক্ষ্মা জীবণু প্রবেশ করলে সহজেই সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হবে। এছাড়া অ্যালকোহলিক্স
এবং ড্রাগ এ্যাডিক্টস ও ধুমপায়ীদের যক্ষ্মা হওয়া ঝুঁকি
অনেক বেশি।
No comments